চীনামাটি পাহাড়ের হাতছানি
Published : Wednesday, 18 January, 2017 at 8:54 PM, Count : 1477

নগরায়নের ব্যস্ততা ভুলে আপনি একটু সস্তিতে থাকতে চাইলে ঘরে আসুন নেত্রকোনার চীনা মাটির পাহাড় ঘেরা গ্রাম বিরিশিরি। এই গ্রামের কাছে গেলেই মনে হবে আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবুজ পাহার আর সচ্ছ পানি। একঘেয়েমি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের চেষ্টা সবসময় চলতেই থাকে। একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে ভ্রমণ। ঘুরে বেড়ানোর মতো মজার কাজ হয়তো পৃথিবীতে আর নেই। খোলামেলা যে কোনো জায়গা মানুষের মনকে অনেকটা প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
কর্মজীবনের সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সূর্যস্নানে বের হতে পারেন আপনিও। প্রিয়জনকে সঙ্গী করে অথবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন নিজ দেশেরই একটি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি বিরিশিরিতে। বিরিশিরির অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই।
বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এছাড়াও দেখার মতো জায়গা রয়েছে রানীখং গির্জা, কমলা রানী দীঘি এবং সোমেশ্বরী নদী। সেন্টমার্টিনের গভীর নীল পানি, কিংবা জাফলং এর স্বচ্ছ পানির গল্প তো অনেকই শুনেছেন বা দেখেছেন। কিন্তু সবুজ নীলের মিশেলে অদ্ভুত-রঙা হ্রদটার গল্প কি শুনেছেন? বা কখনো দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেন তবে তৈরি হয়ে যান এখনই।
বিরিশিরির পরিবেশ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা। আগেই বলেছি বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদা মাটি পানির রঙটাকে যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন; সেটা কিন্তু না। আপনাকে যেতে হবে আরেকটু দূর বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়ে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে  রয়েছে রিঙা আর ভাড়ায চালিত মোটরসাইকেল।
বিচিত্র সাংস্কৃতিক আবহাওযা, কংশ-টেপা-সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গম্ভীর গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
দূরের পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ধরূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য। বিরিশিরিতে আছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। আধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।
তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মণি সিংহের স্মৃতিভাস্কর আছে এখানে। অপেক্ষাকৃত কোলাহলমুক্ত ছোট্ট একটি বাজার। বিরিশিরিতে পা রাখতেই অন্য রকম এক অনুভূতির পরশ বুলিয়ে যায় সারা গায়। এখনে আছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। শান্ত-স্নিগ্ধ, সবুজে ঢাকা ছিমছাম পরিবেশ। পর্যটকদের চাপ বেশি থাকে না। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই পাহাড়ি-গারো, হাজং। এখানকার পাহাড়ি বা পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল এই কালচারাল একাডেমি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এটি পরিচালিত হয়। খ্যাতিমান কবি, লেখক রফিক আজাদ দীর্ঘদিন এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাহাড়িদের সাংস্কৃতিক পরিচয় পাওয়া যাবে একাডেমির জাদুঘরে। দুটি লাইব্রেরি আছে বেশ সমৃদ্ধ। পাহাড়িদের ওপর লেখা সব বইপত্র, জার্নাল এখানে রক্ষিত। যেতে যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর।
এরপর এসে পৌঁছাবেন বিজয়পুরের চীনা মাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমিসহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তৃর পাহাড়জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু কিছু জায়গায লালচে মাটি ও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাব নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল জল যেন আপনার সব অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এসব হ্রদের পানিতে চোখ পড়তেই দেখবেন আসার সব কষ্টগুলো নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে  বয়ে গেছে অপরূপ নীলের উত্স সমেশ্বরী নদী। যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কথায় অসাধারণ!
এছাড়াও দুর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।
বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। এই কমলা রারী দীঘি সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। দীঘিটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
নিরিবিলি কোলাহলবিহীন ছিমছাম শান্ত পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না। এছাড়া দু’চোখ যেদিকে যাবে দেখবেন শুধুই পাহাড়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই ভারতে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft