দফতর সম্পাদক নেই ১০ বছর
বিএনপি দফতর তথ্যশূন্য
Published : Thursday, 6 April, 2017 at 10:30 PM, Count : 1791

এম. উমর ফারুক : জোড়াতালি দিয়েই চলছে বিএনপির দফতর। ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির দফতর যেন তথ্যশূন্য। ঢোলঢাক পিটিয়ে  দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল হলেরও দফতর সম্পাদক পদটি পূরণ করা হয়নি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে আছেন প্রায় ১০ বছর ধরে। আর অযোগ্য নেতাদের সহ দফতরের দায়িত্ব দেয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দফতরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। অযোগ্য সহ দফতর সম্পাদকের পাঠানো ভুলে ভরা ক্ষুদে বার্তা পেয়ে বিবৃত সিনিয়র নেতা। দলের ভবিষ্যত্ ইমেজ নিয়ে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। আর এ কারণে রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির দফতরের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চান, রিজভী যে সব বক্তৃতা-বিবৃতি দেন তা চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করে দেন কিনা। জবাবে, মির্জা ফখরুল কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন। ড. জাফরুল্লাহ ওই সময়ে রিজভী আহমেদকে উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলনের রেওয়াজ বন্ধের আহ্বান জানান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দফতর সম্পাদক বলেন, দফতরে কাজের কোনো সমন্বয় নেই। রিজভী ভাই যাকে ইচ্ছা তাকেই কাজ করতে দেন। দাফতরিক কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে বণ্টন না হওয়ায় কেউই মনোযোগী হয়ে কাজ করতে পারছে না। সূত্র মতে, দলের একটি শক্তিশলী সিন্ডিকেট দফতরকে কব্জায় রেখে     নিজেদের মতো করে পুরো পল্টন কার্যালয়ে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাই আগের মতোই অন্য পদ-পদবি থেকে দত্তক নেতা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রচেষ্টায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলের স্বতন্ত্র কোনো দফতর না থাকায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অনেক সমস্যা শুধু জিইয়ে রাখাই হচ্ছে তা নয়, একধরনের স্বৈরতান্ত্রিকভাবে দলের প্রধান কার্যালয় পরিচালিত হচ্ছে বলেও অনেকের অভিযোগ।  তারা জানান, সহ-দফতর সম্পাদক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা তাইফুল ইসলাম টিপুকে রাখা হয়েছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে পদ-বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতর অভিযোগ ও প্রমাণসহ সংবাদ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে। তিনি রিজভী আহমেদের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত হবার কারণে বিএনপির বিগত কমিটির সদস্য থেকে তিনি এ পদে চলে আসেন। তাইফুল ইসলাম টিপুর সিনিয়র হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামন মনিরকে দ্বিতীয় সহ দফতর সম্পাদক করা হয়েছে নতুন কমিটিতে। তৃতীয় সহ দফর সম্পাদক বেলাল আহমেদ এর বিরুদ্ধেও হত্যা, আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে ফেনী জেলা পৌরসভা বিএনপির জনপ্রিয় নেতা হতা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, রিজভী আহমেদ একদিকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং দলের এক ধরনের স্পোকসম্যান হিসেবে ধারাবাহিক সংবাদ সম্মেলন করেন। অন্যদিকে দফতরে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ মারা যান। কিন্তু বিএনপির এই সিনিয়র নেতার মৃত্যু সংবাদ বা দলীয় চেয়ারপারসনের শোকবার্তা প্রকাশের পরিবর্তে মহিলা দলের নতুন কমিটির খবর গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। দফতরের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে তখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিএনপির নেতারা। ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসনের পাঠানো বিবৃতিতে অন্তত ১০টি ভুল পাওয়া গেছে। ২৬ জানুয়ারি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতিতে তারেক রহমানকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন বিএনপির দফতর থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের মুঠোফোনে যে সব ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয় তাতেও থাকে ভুলের ছড়াছড়ি। দলের একজন নেতা জানান, গত ১৪ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা উপলক্ষে দলের সহ দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ নেতাদের নিকট ‘জবপঢ়বপঃবফ খরফবধত্, ইঘচ ঈযধরত্ঢ়বত্ংরড়হ উবংযহবঃত্র ইবমঁসব কযধষবফধ তরধ ডরষষ মড় ঃড় উযধশধ ঔঁফমব ঈড়ধত্ঃ ঞড়সড়ত্ত্ড় ি(১৪ গধত্) ৯অগ. চষং অঃঃবহফ ঞযবত্ব. জবমধত্ফং-ইবষধষ অযধসবফ.’ ক্ষুদে বার্তা পাঠান। আবার ৩১ মার্চ রাত ১টা ৪০ মিনিটে গণমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিবৃতি পাঠানো হয় কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই। এদিকে রুহুল কবীর রিজভীর কর্মসূচি কভার করতে যেভাবে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয় তা মির্জা ফখরুলের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে হয় না। বিএনপির মহাসচিবের প্রতিদিনের কর্মসূচির খবর হাতে গোনা কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। বিএনপি সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সময়ে দলের দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে তত্কালীন মহাসচিব অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপি থেকে বহিষ্কার করার পর নতুন করে কাউকে এই পদে নিয়ে আসা হয়নি। পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সহ দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভীকে যুগ্ম মহাসচিব পদে উন্নিত করার আগে থেকেই তিনিই দফতরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরপর একাধারে তিনি দলের মুখপাত্র এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দফতরের দায়িত্বও পালন করছেন। সূত্রটি জানায়, দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী বিগত বছরগুলোতে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য এ শাখার দায়িত্বশীলদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো বৈঠক, পরিকল্পনা কিংবা দফতর টিম নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এমনকি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও কোনো বৈঠক করেননি বিগত দিনে। আবার দাফতরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সহ দফতর সম্পাদকদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের কাজটিও করা হয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে দফতরের স্বাভাবিক রুটিন কাজ হিসেবে বিগত দিনে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র- মামলার পরিসংখ্যন, নিহত, গুম কিংবা পঙ্গুত্ব বরনকারীদের সঠিক তথ্য নেই দায়িত্বশীলদের কারো কাছে। পাশাপাশি সারাদেশে নেতাকর্মীদের নামে মামলার হিসাব নিয়েও রয়েছে জটিলতা। কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের আইনি সহযোগিতার জন্য দফতর থেকে কোন তালিকা তৈরি করে আইনজীবীদের কাছে দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে সঠিক মনিটরিং না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীরাও দল ধেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। নেতাকর্মীরা জানান, সকল কাজ ও নির্দেশনা রিজভী আহমেদ থেকে নির্দেশিত হয়ে থাকে বলে দফতরের অন্য কোনো নেতার মূলত কোনো কাজ করার সুযোগ নাই। এছাড়া, রিজভী বলয়ের বাইরে গিয়েও তাদের কিছু করার থাকে না। যার কারণে এ শাখায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। যা অদূর ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা নেতাকর্মীদের। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের দফতর শাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখান থেকেই দলের সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একটি যোগসূত্র তৈরি করা হয়।
আর এ শাখাটিকে মূলত দলের মহাসচিব এর অধিনে সুবিন্যস্ত করার নিয়ম থাকলেও বিএনপিতে এর ব্যত্যয় ঘটছে কয়েক বছর ধরে।  সূত্র জানায়, সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের যোগাযোগের সহজ উপায় হচ্ছে দফতর শাখা। কিন্তু বিগত দিনে এই শাখায় কোনো দফতর সম্পাদক না থাকায় এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এর মতো একটি বড় পদের নেতাকে দায়িত্ব দেয়ার কারণে কর্মীরাও স্বভাবজাত তটস্থ থাকেন। প্রাণ খুলে তাদের সমস্যা-সুখ-দুঃখ নিয়ে আলোচনার চিন্তাও করতে পারেন না বলে তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft