উত্সব হোক নিরাপদ
Published : Sunday, 18 June, 2017 at 9:07 PM, Count : 1794

খন্দকার মুনতাসীর মামুন : ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য বাস-ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে হয়েছে। আর মাত্র ক’দিন পরেই খুশির ঈদ। ঈদে প্রিয়জনের সঙ্গে সবাই তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে। আর এই আনন্দের টানেই তো ঘরে ফেরা। শেকড় আর নাড়ির টানেই ঘরমুখো মানুষ পরিবহন অফিসে টিকিটের জন্য ভিড় করে। তবে যে আনন্দে মানুষের ঘরে ফেরা, অনেক ক্ষেত্রেই তার পরিসমাপ্তি ঘটে স্বজনের কান্নায়, শোকার্ত মাতমে। প্রতি বছরই ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকে। ঈদের আনন্দ এই সময়ে বহু পরিবারে বিষাদের রূপ নেয়।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান মতে, গত বছর ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ১৬৮টি দুর্ঘটনায় ২১২ নিহত ৮৯৬ জন আহত হন। একই বছর ঈদুল আজহায় ২১০টি দুর্ঘটনায় ২৬৫ নিহত ও ১১৫৩ জন আহত হন। সর্বশেষ ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হয়েছেন এর প্রায় ৯৪ শতাংশই সড়কপথে।
অর্থাত্ ঈদের দিনগুলোতে দেশের মানুষের উত্কণ্ঠা যেন বেড়ে যায়। ঘরমুখো মানুষ যাত্রার শুরুতেই ভাবতে থাকে-নিরাপদে বাড়ি ফেরা যাবে তো? ঘরের মানুষদের প্রতীক্ষা-প্রিয় মানুষগুলো নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসছে তো? অথচ তাই কি হওয়ার কথা! মোটেও না। মানুষ সারা বছর কর্মস্থলে কাজ করবে। শুধু উত্সবের ছুটিতে খানিকটা সময় গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বস্তিতে কাটাবে- এ তো বড় কোনো চাওয়া নয়। ঈদকে ঘিরে সরকারি মহলেও তো নানারকম তত্পরতা শুরু হয়। রাস্তাঘাটের সংস্কার ঠিকমত হলো কি-না, যানবাহনগুলো ফিটফাট আছে কি-না কিংবা যানজট হচ্ছে কি-না ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়। কিন্তু এরপরও কেন এত শঙ্কা?
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনাই সোজা রাস্তায় ঘটে। চালকরা দুর্বল প্রশিক্ষণ নিয়ে রাস্তায় নামে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, নিয়ম না মানার প্রবণতার কারনে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ঈদের মওসুমে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী হয় তিনগুণ বেশি। এ সময় পরিবহনগুলোতে ব্যাপক আকারে চাপ পড়ে। আর পরিবহন মালিকরা এই সুযোগে অতিমুনাফার পথ বেছে নেয়। মিনিবাস, মাইক্রোবাসও সেসময় লং রুটে চলে। অথচ এসব যানবাহন কোনোভাবেই মহাসড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। মহাসড়কে চলাচলের জন্য যতখানি সক্ষমতা প্রয়োজন তা এসব বাসের নেই। এ কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। চালকের সংখ্যাও এ সময় কমে যায়। যেখানে একজন চালক একনাগাড়ে ৪ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে আবার ৪ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর কথা। কিন্তু চালকরা তা করতে পারছে না। তাদের ওপর ব্যাপক চাপ থাকে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যবেক্ষণে এসব দুর্ঘটনার বাকি কারণগুলোর মধ্যে উঠে এসেছে চালকের অদক্ষতা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, খেয়ালিপনা, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, ফুটপাত দখল, ওভার টেকিং, রাস্তার নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা ও না মানা, নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা ও রাস্তায় ওভারটেক করার তীব্র মানসিকতা। তাছাড়া যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা ও বাজার উচ্ছেদ না হওয়ায় যানজটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক ট্রিপ দিতে না পারায় তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে চালানো হয়। এসব কারণে প্রতি বছর ঈদযাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। দুর্ঘটনার নামে রাস্তা ঘাটে যেভাবে মানুষ পথের বলি হচ্ছে তাতে একে অনেকটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই ধরে নেয়া যায়। প্রশ্ন হলো, এই অঘটন থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথ কি খোলা নেই? দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতা স্পষ্টতই জানান দিচ্ছে, আপাতত শঙ্কামুক্ত কোনো জবাব নেই কারও কাছে।
বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ লাখ, চট্টগ্রাম থেকে ২২ লাখ, সিলেট থেকে ৬ লাখ, খুলনা থেকে ১২ লাখ, রাজশাহী থেকে ৮ লাখ, রংপুর থেকে ৪ লাখ, বরিশাল থেকে ৪ লাখ লোক দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরও প্রায় সোয়া ২ কোটি যাত্রী। এসব যাত্রী বহনে সড়কপথে মাত্র ৩৯ হাজার ৯৪৫টি বাস, ২৭ হাজার ১১৮টি মিনিবাস, ৩ লাখ ১০ হাজার ৮২১টি প্রাইভেট কার, ৩ লাখ অটোরিকশা, ৪৩ লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা, ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৫৫ হাজার মাইক্রোবাস, ২ হাজার টেক্সিক্যাব, ৭৫ হাজার হিউম্যান হলার রয়েছে। নৌ-পথে ২৫০০ ছোট-বড় লঞ্চ, ৪০ হাজার ট্রলার, ৮২ হাজার নৌকা, ২ হাজার স্পিডবোড। রেলপথে পূর্বাঞ্চলে ৪৮টি পশ্চিমাঞ্চলে ৪৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ১২ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন, ৭৩টি লোকাল ও কমিউটার ট্রেন আমাদের যাতায়াতের বহরে রয়েছে। যা স্বাভাবিক সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। যাত্রী বহনে বাড়তি যা জোগান দেয়া হয় তা হলো সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় কিছু বাস-মিনিবাস মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করা, সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে সংযুক্ত করা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপে যাত্রী বহন করা। অর্থাত্ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উল্লেখিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এবারের ঈদেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না কিম্বা বলা যায় ঝুঁকি রীতিমত থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসেবে, দেশের সড়কপথে ২৪৩টি দুর্ঘটনার স্থান বা ব্ল্যাকস্পট রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ৩৪টি। অবশিষ্ট ২০৯টি স্পটের অবস্থান বিভিন্ন রুটের মহাসড়কে। এসব স্পটে বছরে গড়ে ১১টি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ স্পটে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে গাড়ির বেপরোয়া গতি। অথচ সরকার দুর্ঘটনা কমাতে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করার প্রকল্প নিলেও এখনও অনেক সড়ক ভাঙাচোরা, সংকেতও ঠিকভাবে নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দুর্ঘটনা রোধে সড়কের ব্ল্যাক স্পট ও বিপজ্জনক বাঁকগুলিতে লাগানো হচ্ছে বিশেষ সিগন্যাল পোস্ট। যাতে থাকবে স্পিড সেনসর ও হর্ন। অথচ তাদের পাশে থেকেও এসব নিয়ে আমরা যেন অনেকটা নির্লিপ্ত হয়েই আছি। এত মৃত্যু, এত আর্তনাদের পরও রাষ্ট্রের পাষাণ হূদয় গলছে না।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা। অতঃপর কর্মস্থলে ছুটে চলা। আসা-যাওয়ার এই মাঝখানে অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যারা সড়ক দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্বজন ও পরিবার-পরিজনকে স্পর্শ করেছে গভীর বেদনা। দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী মানুষগুলো কারও সন্তান বা কারও স্বজন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবরটি তাদের স্বজনদের কাছে কতটুকু দুঃসংবাদ এমন প্রশ্নের তৃপ্তিদায়ক উত্তর কী কেউ দিতে পারবেন? যখন একজন অদক্ষ লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার গাড়ি চালায় জনগণ তার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে গাড়িতে চড়েন না, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এই কাজটি কি সরকার ঠিকভাবে পালন করছে? চালকরা কেউ নিয়ম মানেন না, মানানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগও নেই কোথাও। কয়েকটি সড়কের বাঁক সোজা করা আর কিছু সড়কের সম্প্রসারণ ছাড়া গতি নিয়ন্ত্রণ ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব রুখতে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি, এই চরম অব্যবস্থাপনার দায় সংশ্লিষ্টরা কি করে এড়িয়ে যাবেন?
আমরা মনে করি, এসব দুর্ঘটনার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে তা কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার তত্পর হলেই অন্যরা এগিয়ে আসবে। আর চালকদের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যোগ্যতার যথাযথ পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মালিক ও শ্রমিক নেতারাই বাস মালিক। তাদের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটালেও শাস্তি হয় না। মানুষের জীবনের চেয়ে তাদের কাছে মুনাফাই বড়। তাই শুধু অভিযুক্ত চালককে কারাদণ্ড দিলেই হবে না, মালিককেও জরিমানা দিতে হবে। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। সারা দেশে গাড়ির ড্রাইভারদের ব্যবহারিক, তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সড়কগুলো অপ্রশস্ত। বেশিরভাগ মহাসড়কে ডিভাইডার নেই। ঘন ঘন ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দীর্ঘমেয়াদি বৈজ্ঞানিক গবেষণা দরকার। রোড সেফটি অডিট করতে হবে।
ঈদের সময় দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে আরও যেসব পদক্ষেপ দ্রুত নেয়া দরকার তা হলো : রেশনিং পদ্ধতিতে ঈদের ছুটির ব্যবস্থা করা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের যাতায়াতের পরিবহনগুলো তাদের পরিবার-পরিজন আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করা। ক্রাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে সড়ক মহাসড়ক প্রতি ইঞ্চি অবৈধ দখল ও পার্কিং মুক্ত করা। সড়কের পাশে হাটবাজার উচ্ছেদ করা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। টোলপ্লাজাগুলোর সবকটি বুথ চালু করা। যানজটপ্রবণ এলাকায় দ্রুত গাড়ি পারকিংয়ের উদ্যোগ নেয়া। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
বাংলাদেশে বোধ করি এমন কোনো ঘর বা ফ্যামিলি পাওয়া যাবে না, যেখানে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাননি অথবা আহত হননি। আপনজন হারানোর বেদনা শুধু স্বজনরাই অনুভব করছেন বারবার। কে, কখন, কোথায়, কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবেন তা কেউ জানে না। বাস্তবিক অর্থেই এটা এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে। এর রাশ টেনে ধরতেই হবে, থামাতে হবে শবযাত্রার মিছিল। তবেই হয়তো উত্সবে নাড়ির টানে যাত্রা আর ফিরতিকালে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়বে না কেউ, বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার সময় লাশ হয়ে ফিরবে না! সড়ক দুর্ঘটনায় এই মৃত্যুর মিছিল সামাল দিতে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা জনগণ ভীষণভাবে অনুভব করছে। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসুক, প্রতিটি উত্সব হোক নিরাপদ, উত্কণ্ঠাহীন, বর্ণিল ও আনন্দময়।

লেখক: সাংবাদিক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft