রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিশোধনে ‘ফিতরা’
Published : Friday, 23 June, 2017 at 9:00 PM, Count : 1349

এম. শামসুদদোহা তালুকদার : সারা রজমানে বান্দা সিয়াম পালনের পাশাপাশি অসংখ্য নেক আমল করে থাকে। তদুপরি সিয়াম পালনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পরিশুদ্ধ এবং অভাবগ্রস্তদের খাবার প্রদানের উদ্দেশে ঈদের নামাজের পূর্বে নির্ধারিত পরিমাণের যে খাদ্যসামগ্রী অথবা সমমূল্যের সাদকাহ বা দান বিতরণ করা হয় শরীয়াতের পরিভাষায় তা-ই ‘জাকাতুল ফিতর’ বা ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়ে থাকে। ফিতরা হচ্ছে রমজানের শেষ ও সম্পূরক আমল। এতে রোজাদার আরও শুদ্ধতা অর্জনের পাশাপাশি তাদের গরিব স্বজন ও অভাবগ্রস্তরা ঈদ আনন্দে সামিল হতে পারে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- ‘সিয়াম পালনকারীর অপ্রয়োজনীয় ও বেফাস কথাবার্তা থেকে তাকে পবিত্রকরণ এবং গরিব মিসকিনদের খাবার প্রদানের উদ্দেশে রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতরা প্রদান করাকে ফরজ করে দিয়েছেন। অতএব, যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে তা পরিশোধ করবে সেটা ফিতরা হিসেবে আল্লাহ্র কাছে গৃহীত হবে। আর ঈদের সালাতের পর দিলে তা হবে একটা সাধারণ দান-খয়রাত। (অর্থাত্ ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে না)। (সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)। আমাদের মাজহাবের ইমাম হযরত আবু হানীফা (রা.) এর মতে- বিশুদ্ধা হাদীসগুলোর আলোকে এক সা’আ-ই ফিতরা আদায় করতে হবে। অর্ধ সা’আ আদায় সংক্রান্ত হাদিসগুলো দুর্বল। সুতরাং এক সা’আ ই ফিতরার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ। আমাদের মাযহাব অনুযায়ী সমমূল্যের টাকা-পয়সা দিয়েও ফিতরা দেয়া জায়েজ হবে। আর ফিতরা দেয়ার উত্তম সময়ের ব্যাপারে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে- ইবনে উমার (রা.) বলেছেন- ‘নবী করীম (স.) লোকদের ঈদের সালাত আদায় করার আগেই ফিতরা দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ (মুসলিম)। এক সা’আ সমপরিমাণ হলো ২ কেজি ৪০ গ্রাম। এব্যাপারে একাধিক সহীহ্ হাদীসে এক সা’আ এর কথা বলা হয়েছে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন যে, “আমরা ফিতরা দিতাম মাথাপিছু এক সা’আ পরিমাণ যব বা এক সা’আ পরিমাণ খেজুর বা এক সা’আ পনির বা এক সা’আ কিসমিস।” (বুখারি ও মুসলিম)।  
মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের উপর ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব। ঈদের দিন যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের প্রয়োজনীয় খাবারের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ২ কেজি ৪০ গ্রাম পরিমাণ নির্দিষ্ট খাবার মজুদ থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি  ও তার পরিবারবর্গের সব সদস্যদের উপর ফিতরা প্রদান ফরজ হয়ে যাবে। হযরত ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি রমজানের সিয়ামের কারণে এক সা’আ খেজুর বা এক সা’আ যব ফিতরা হিসেবে ফরজ করে দিয়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)। প্রতি বত্সর বর্ণিত খাদ্যদ্রব্যের মূল্যে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে সে ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্য কত হতে পারে সে বিষয়ে হালনাগাদ ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এবং সে অনুযায়ী জনসাধারণ ফিতরা প্রদান করে থাকে। চলতি বছরে ফিতরার ন্যূনতম পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ১ কেজি ৬৩৬ গ্রাম আটার মূল্য ন্যূনতম হিসাবে ৫৫ টাকা। খেজুরের পরিমাণ জনপ্রতি ৩,২৭২ গ্রাম হিসেবে ৫২৪ টাকা অনুরূপভাবে কিসমিস এর মূল্য জনপ্রতি ৩,২৭২ গ্রাম হিসেবে ফিতরার জন্য ধর্তব্য ৯৮২ টাকা। যে কোন একটি পণ্যের হিসেবে ফিতরা দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, সদকায়ে ফিতর উল্লিখিত পরিমাণ অনুযায়ী সরাসরি আটা, খেজুর বা কিসমিস দ্বারা আদায় করতে চাইলে উল্লিখিত তিন থেকে যে কোনো একটি মূল্য হিসাব করে আদায় করতে হবে। ফিতরার প্রাপ্য তারাই যারা জাকাতের প্রাপ্য। নিজের এবং নাবালিকা সন্তানদের পক্ষ হতে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। স্ত্রী এবং বালেগ সন্তানদের ফিতরা নিজেরাই আদায় করবে। এক ব্যক্তির ফিতরা একজন মিসকিনকে দেয়া উত্তম। তবে একাধিক মিসকিনকে দেয়াও জায়েজ। একদল লোকের উপর যে ফিতরা ওয়াজিব তা একজন মিসকিনকে দেয়াও জায়েজ। তবে ফিতরা বা দানের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ ও গরিবের জন্য অধিক উপযোগী এমন সু-নীতি থাকা জরুরি।
ইসলামে ফিতরার মতো জনহিতকর প্রথাটা চালু হবার কারণে রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি শুদ্ধ হয়ে যায় আর এর ফলে হত-দরিদ্র মিসকিনরাও তাদের অধিকারের প্রাপ্তি লাভ করে।  ঈদের দিনে তাদের মুখে যাতে  হাসি অমলিন থাকে সে দিকটা লক্ষ্য করেই যেন নবীজি (সা.) এমন বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। রমজান শেষে  কুরআনিক প্রত্যাশা অনুযায়ী বান্দা যাতে মুত্তাকী পর্যায়ে  উপনীত হতে পারে সে লক্ষ্যে বিকল্প উপায়ও রাখা হয়েছে। সিয়ামের মাসে নানাবিধ আমল তথা ইবাদাতের কল্যাণে মানুষ দুশ্চরিত্র ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে সত্ ও চরিত্রবানে উপনীত হয়। সকল ধরনের গর্হিত কাজ পরিহার করে সামনের দিনগুলো কাটাতে পারলে পারলৌকিক জীবনে জান্নাতে বসবাসের সুযোগ তৈরি হবে আর জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ অনিবার্য হয়ে উঠবে।

লেখক: ইসলামি গবেষক।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft