দ্বন্দ্ব কোন্দলে বিপর্যস্ত মহিলা দল
৯ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটি, পদবঞ্চিত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেত্রীরা
Published : Saturday, 1 July, 2017 at 8:34 PM, Update: 01.07.2017 8:39:55 PM, Count : 2562

এম. উমর ফারুক : বিএনপির শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন মহিলা দল  আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কোন্দল এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে মহিলা দলের সর্বস্তরের নেত্রী-কর্মীদের ওপর। কেউ সভাপতির লোক, কেউ সাধারণ সম্পাদকের লোক আবার কেউ সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার লোক এ নিয়ে চলছে কাদা ছোরাছুরি। এ কারণে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে পরীক্ষিত ত্যাগী নেত্রীদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে। বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের দুর্ব্যবহার আর কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি না পেয়ে সিনিয়র নেত্রীরা মহিলা দল ছেড়ে দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মহিলা দলের একাধিক সিনিয়র নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিলা দলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কোনো চর্চা নেই। এর বিপরীতে এখন চর্চা হচ্ছে সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদকে নিয়ে। মহিলা দলের পদপ্রত্যাশী নেত্রীরা এদের দুজনের মন জোগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তাদের বিশ্বাসী হতে গিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে মহিলা দল। সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এতে বলির পাটা হচ্ছে রাজপথের পরীক্ষিত নেত্রীরা। কারণ মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে যারা বছরের পর বছর রাজপথে থেকে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন, তারা নতুন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের আস্থা অর্জন করতে পাচ্ছেন না। এদের মধ্যে অনেকেই নতুন কমিটির ১নং যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেত্রী হেলেন জেরিন খানের দিকে ভিড়তে চেষ্টা করেন। কিন্তু হেলেন জেরিন খান সভাপতির বলয়ে হওয়ায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না।
এদিকে, মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরার সুযোগ পান বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। প্রতিদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মহিলা দলের অনেক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু সুলতানা আহমেদের বলয়ের বাইরে অন্য কোনো নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাত্ পান না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর ফিরে আসতে হয় বলে তারা অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, মহিলা দলের নতুন কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণের থানাগুলোতে যাচ্ছে না নেত্রীরা। তাদের ডেকে এনে নয়াপল্টনের ভাসানী মিলনায়তনে করা হচ্ছে কর্মিসভা। এতে থানার সব নেত্রীরা উপস্থিত হতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার থানার যোগ্যনেত্রীদের বাদ দিয়েই কমিটি দেয়া হচ্ছে। নিজেদের লোক বিবেচনায় অযোগ্যদের নেতৃত্বে আনায় পঙ্গু হচ্ছে সাংগঠনিক অবস্থার।
সূত্রটি আরও জানায়, দুজনের দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহদাত্বার্ষিকীতে বিএনপির অন্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও মহিলা দল ফুল দেয়নি। পরীক্ষিত নেত্রীরা ফুল দেয়ার জন্য ১নং যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেত্রী হেলেন জেরিন খানের সহযোগিতা চাইলেও তিনি সাড়া দেননি। তিনি কোনো দ্বন্দ্বে যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কবরে এই প্রথমবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়নি মহিলা দল। এ নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহিলা দলের একাধিক সিনিয়র নেত্রী।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুমতিক্রমে মহিলা দলের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নতুন কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ নেতৃত্বাধীন নব গঠিত মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে নূরজাহান ইয়াসমিনকে, সহ-সভাপতি করা হয়েছে জেবা খানকে। ১নং যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান। মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি করা হয়েছে পেয়ারা মোস্তফাকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আমেনা বেগমকে। এছাড়া মেহেরুন নেছাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, রোকেয়া বেগম তামান্না ও রাবেয়া আলমকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি করা হয়েছে রাজিয়া আলিমকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শামসুন নাহার বেগমকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে আসমা আফরিনকে। সুরাইয়া বেগম ও রোকেয়া চৌধুরী বেবীকে করা হয়েছে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
নতুন কমিটি ঘোষণার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও শুধু নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কোন্দল থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আজও ঘোষণা হয়নি। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে তার সঠিক কোনো খবর জানেন না কেউই।
এদিকে, ৪৬তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে মহিলা দল  আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিটে বসা ও সেলফি তোলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। কর্মীদের বারবার চেয়ারে বসার নির্দেশনা দিলেও মানেনকি কেউ। বরং সেলফি তোলা ও সামনের চেয়ারে বসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে কর্মীরা অকথ্য ভাষায় শাসান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিখা বলেন, আপনার এতো সমস্যা কি! চেনেন আমি কে? বেশি বেড়ে গেছেন, পরে দেখামু।
জবাবে সুলতানা আহমেদ উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, এই তুমি কে! এখানে থাকতে হইলে সিস্টেমে থাকতে হবে। কোনো বেয়াদবি মেনে নেয়া হবে না। সব ঠিক করে ফেলব। এ সময় কিছু কর্মী সুলতানা আহমেদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন উভয়পক্ষের কর্মীরা।
এ বিষয়ে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ গতকাল দৈনিক বর্তমানকে বলেন, সভাপতির সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ৯ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তবে আমরা মহানগর জেলা কমিটিগুলো করিতেছি। ইতোমধ্যে অনেক মহানগর জেলা ও থানা কমিটি দিয়েছি। অন্যসব কমিটি নিয়ে প্রতিদিন কাজ করা হচ্ছে। জেলা কমিটি করার এক মাস আগে চিঠি দিয়ে তাদের জানানো হয়। তারপর তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করে আমরা যাই।
ঢাকা মহানগরের থানাতে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যান না এ অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ঢাকার থানাগুলোতে যেতে চাইলে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। সভা করতে চাইলে পুলিশের অনুমতি মেলে না। আর জোর করে সভা করলে নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করবে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে। এই চিন্তা করেই নয়া পল্টনের ভাসানী মিলনায়তনে আমরা কর্মিসভাগুলো করছি।
একাধিক নেত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তখন শিরিন সুলতানা ছিল তাই তার নির্দেশ মেনেছি। এখন তিনি নেই, সেজন্য কী আমরা রাজনীতি করব না। তখন শিরিন সুলতানার সঙ্গে রাজনীতি করা আমাদের কী অপরাধ? আমরা তো বিএনপি করি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন যাকে নেতৃত্ব দেবেন, আমরা তখন তাকেই নেত্রী মেনে নিয়ে রাজনীতি করব। কারও পকেটস্থ হতে চাই না।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft