‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ শেখ হাসিনা আলো দেখাবেন বিশ্বকে
Published : Saturday, 14 October, 2017 at 10:12 PM, Count : 1358

মোতাহার হোসেন : ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।’ এ মর্মবাণীকে ধারণ করে যারা অন্যের বিপদে, প্রয়োজনে, বিপর্যস্ত, বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ায় তাদের জন্ম সার্থক। এবং এটাই হওয়া উচিত মানুষের ব্রত।  এই বিবেচনায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ এর পরিণত হয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট থেকে নাফ নদীর ফাঁড়ি দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতন থেকে আত্মরক্ষায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আসতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শরণার্থী এসেছে। এর আগে বিভিন্ন  সময়ে এসেছে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা নিজ বসতবাড়ি, সহায় সম্বল হারিয়ে খালি হাতে কোনো রকম জীবন নিয়েই আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এই অসহায়, বিপর্যস্ত মানবতার পাশে উদার হস্তে দাঁড়িয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার এবং বাংলাদেশের এই মহানুভবতায় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলো পুরো বিশ্ব। এ কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার এই সাহসী এবং মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সম্মান, মর্যদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ৫টি প্রস্তবনা উত্থাপন করেন। 
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরলে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। গণসংবর্ধনায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘বিপন্ন মানবতাকে আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের দিক থেকে যুদ্ধের উসকানি ছিল। সতর্ক থেকে আমরা তা এড়িয়েছি মানুষ মানুষের জন্য, আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার আলোচনায় এসেছে। আশা করি সঙ্কটের সমাধান হবে।’ প্রসঙ্গত: প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অবস্থান কালেই বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে দুই পিলারে উপর স্প্যান স্থান করা হয়েছে। আর টিভি পর্দায় সেই খবর দেখে প্রধানমন্ত্রী তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে ‘পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো দেখে কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব আমরা দিতে পারলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে ডাক্তার বলছেন, ছয় সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলা  বিপন্ন মানবতাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব উদার বাংলাদেশকেই দেখল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ছিল আমার লক্ষ্য। সেটা আমরা পেরেছি। যারা বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও দুর্যোগের দেশ বলে জানতো তারা আজ ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের মাত্রা দেখে তাদের জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দিয়েছি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আশা করি রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের আইডি কার্ড করে দিচ্ছি। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা, স্যানিটেশন, খাদ্যের ব্যবস্থা করেছি। জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগদান ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
যতদূর জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিজীবনে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, বিনীয়, অন্যকে আপন করে নেয়া আর নিজেকে অন্যের সুখে-দুখে, বিপদে-আপদে অংশীদার করে নিতে পারেন। দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তার পরামর্শ ‘বিনয়ী হও, মানুষকে ভালোবাস।’ একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের প্রতি তার এও উপদেশ, ‘যে তোমার দরজায় হাত পেতে আছে তাকে আগে সাহায্য কর, আর যেজন আছে দূরে তার কাছে যাও।’ মূলত তিনি নিজে তার কর্মে, রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় এর প্রতিফলন ঘটান শতভাগ। আর এ কারণেই তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতে নির্যাতনের শিকার লাখো লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া এবং নির্যাতিত, বিপর্যস্ত, ভাগ্যবঞ্চিত হতভাগ্যদের ভরণপোষণ, চিকিত্সার ব্যবস্থা কারতে। জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত গণসংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 মূলত: মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর সাহসী সিদ্ধান্ত এবং এই সঙ্কটের প্রতি বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আমিও ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বর্ষীয়ান নেতা ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ হিসেবে যে অভিধায় ভূষিত করেছেন তা যথার্থ। কারণ বাংলাদেশ এমনিতেই ঘনবসতি পূর্ণ দেশ। তদুপরি নিজেদের হাজারো সমস্যার মধ্যেও বাড়তি চাপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি একদিকে মানবিক, অন্যদিকে এই মানবিক উদ্যোগ সরকারের জন্য সাহসী ও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার এই সাহসী, মানবিক, বিপন্ন এবং বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বদরবারে তিনি নিজে মর্যাদার, সম্মানের উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হলেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে, বাঙালিকেও করলেন সম উচ্চতার আসনে অধিষ্ঠিত। পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃত্বের পরিমণ্ডলে তার সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত হলো। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামী দিনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায়, দল পরিচালনায়, দেশ ও দেশের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণে অগ্রাধিকার পাবে মানবিক বিবেচনা। তবেই দেশ একটি জনকল্যাণমূলক এবং মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। 
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft