পদ্মার পর দৃশ্যমান হচ্ছে রূপপুর ও মেট্রোরেল
দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণের হাতছানি
Published : Saturday, 28 October, 2017 at 9:05 PM, Count : 1143

মোতাহার হোসেন : অবিশ্বাস্য ঘটনা হলেও সত্যি পদ্মা সেতুর মতো বিশ্বের বৃহত্ স্থাপনা কোনো রকম বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে। পদ্মার জাজিরা প্রান্তে দুই পিলারের ওপর স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিন জাতির সামনে তথা দেশের মানুষের সামনে দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতু। এটি সত্যিই বাংলাদেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য স্বপ্ন এবং এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে, বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন, প্রশংসিত হয়েছেন তার সরকার। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর দুই পিলারে স্প্যান স্থাপনের মধ্যদিয়ে এর দৃশ্যমান হওয়ার পর এবার দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর আরেক স্বপ্ন মেট্রোরেল এর কাজ। একই ভাবে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। আগামী মাসেই মেট্রোরেলের কাজ দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুরূপ নভেম্বরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে দৃশ্যমান হবে পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র। এসব মেগা প্রকল্প এক সময় যা ছিল দেশের মানুষের কল্পনার অতীত এখন তা বাস্তাবে রূপ পাচ্ছে। এসব স্থাপনা দেশের অর্থনীতিতে অপরিসীম অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার তথা ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এসব অবকাঠামো বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা, মর্যাদা, অবস্থানকে বিশ্বের বুকে অনেকটুকু সম্মানের আসনে, গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করবে নিঃসন্দেহে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথা দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণের হাতছানি দিচ্ছে এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। 
জুনের শেষ সপ্তাহে দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পথ ৩৮ মিনিটেই অতিক্রম করা সম্ভব হবে। দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবে মেট্রোরেল যুগে। উত্তরা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রকল্পটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০২০ সালের মধ্যেই মতিঝিল পর্যন্ত এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হবে। আর ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করবে। এ রুটে প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। রাজধানীতে পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেলের আরও চারটি রুট নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি রুট নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এর একটি গাজীপুর থেকে ঝিলমিল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৪২ কিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ে এ রুটের কাজ হবে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর এবং খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার। মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেলের আরেকটি রুট। নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাবতলী  পর্যন্ত এ রুটটি ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাটারা থেকে গাবতলী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটারের কাজ করা হবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ শুরুর মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের হাতছানিই যেন জানান দিয়েছে। একই দিন গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। তিন মিনিট পর পর ছাড়বে এ প্রকল্পের বাস। রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরও বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। 
এটি সত্যি যে, দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে রাজধানীর সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষত মেট্রোরেল বাস্তবায়িত হলে তা সাফল্যের সোনালি পালক হিসেবে বিবেচিত হবে প্রধানমন্ত্রীর সরকারের জন্য। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ যাতে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র নভেম্বরের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের রীতি অনুযায়ী এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক জগতে প্রবেশ করবে।
পারমাণবিক জগতে প্রবেশের জন্য এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দেশের প্রথম ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর পদ্মা নদীর পাশে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এই ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতাধীন বিদ্যুত্ কেন্দ্রটির সার্বিক কার্যক্রম নিজে সরাসরি তদারকি করছেন। নভেম্বরে রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্পের পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের উদ্বোধনকে ঘিরে ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রকল্প এলাকায় এখন মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের অর্থাত্ ফার্স্ব কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি কাজের উদ্বোধন করা হবে।
প্রসঙ্গত: পদ্মা নদীর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর দুই পিলারের ওপর যখন স্প্যান স্থাপন করা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিতে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। টেলিভিশনের পর্দায় পদ্মা সেতুর দুই পিলারের ওপর স্প্যান স্থাপনের খবর ও দৃশ্য দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা কেঁদে ছিলেন। তাদের এই ‘ক্রন্দন নিশ্চয়ই দু:খের বা শোকের নয়, এটি তাদের আনন্দাশ্রুর কারণ অন্যত্র। এটা অনুমান করা সহজ যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বিশ্বের তামাম শক্তিধর, সম্পদশালী রাষ্ট্রসমূহকে তাক লাগিয়েছেন, যে বাংলাদেশ পারে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো সর্ববৃহত্ স্থাপনা নির্মাণের সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ। সম্ভববত: এ কারণেই প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা আনন্দে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ছিলেন। তাদের কান্নার আরেকটি কারণ হতে পারে বিশ্বব্যাংকের অপমানের কড়া এবং সময়োচিত জাবাব দিতে পারায়। কারণ পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করে সম্ভাব্য দুর্নীতির বানোয়াট, মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালো। একই কারণে পুরো বাংলাদেশকে, সরকারকে বিশ্বরে সামনে দুর্নীতির মিথ্যা কাঠগড়ায় দাঁড় করালো। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশ্বের অনন্য একটি বৃহত্ স্থাপনার নির্মাণকাজ দ্রুতার সঙ্গে চলছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ অগ্রগতি সম্পকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৯, ৪০ ও ৪২ নম্বর পিলারের কাজও খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। শিগগিরই ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপরও স্প্যান বসানো হবে। এতে করে চারটি পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। 
এ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দেশের মানুষের ব্যাপক আগ্রহ, উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া এসব মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন, এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষা করা প্রয়োজন। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে এই মেগা উন্নয়নের সুফল যাতে দেশের মানুষ যথাযথভাবে ভোগ করতে পারে সেই দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর এ থেকে প্রাপ্ত সুফল যেন দীর্ঘ মেয়াদি, দেশ, জাতি, দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে সেই দিকটিও বিবেচনায় নেয়া দরকার। তবেই প্রধানমন্ত্রীর আনন্দাশ্রুর সার্থকতা। সার্থকতা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিদেশে দেশের ও দেশের মানুষের সম্মান,মর্যাদার আসনে নিয়ে যাওয়া, সর্বোপরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংগ্রামী কাফেলার সফলতা। পাশাপাশি আগামীতে সরকারের ধারবাহিকতা বিরাজমান রাখা। এ জন্য সচেষ্ট হতে হতে হবে প্রত্যেক দেশ প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষদের।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft