শিরোনাম: |
মুখোমুখি ইরান-সৌদি শক্তিতে কে এগিয়ে?
|
বর্তমান ডেস্ক : আরব বিশ্বের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্ব্বী সৌদি আরব ও ইরান। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে সবসময় তারা তত্পর। ইরান মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের এবং সৌদি আরব সুন্নি সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে রয়েছে। এই দুটি দেশ এ পর্যন্ত সরাসরি কোনো যুদ্ধ করেনি। তবে বিভিন্ন স্থানে ছায়া যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি লেবানন পরিস্থিতিকে ঘিরে আবার এই দুই দেশ মুখোমুখি। এখন সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। কিন্তু কার সামরিক শক্তি কতটুকু? দ্বন্দ্বের শুরু মুসলিমদের পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনা সৌদি আরবে। তাই মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবে এমনটাই মনে করে সৌদি আরব। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটি নিজেদের মতো করে এগিয়ে যেতে থাকে। আরব বিশ্বের শিয়াঅধ্যুষিত দেশগুলোয় প্রভাব বিস্তার করে তারা। যার ফলে সৌদি আরবের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এরপর নানা সময়ে মুখোমুখি হয়েছে দেশ দুটি। ছায়া যুদ্ধ ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম ক্ষমতায় থাকতে দেশটিতে সুন্নি প্রভাব ছিল বেশি। তার পতনের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে মূলত শিয়ারা। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই আরব বিশ্বে ইরানের প্রভাব বেড়ে যায়। সিরিয়া, ইয়েমেন ও সর্বশেষ লেবানন নিয়ে প্রক্সি যুদ্ধে রয়েছে সৌদি আরব-ইরান। সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন বাশার আলআসাদকে হটাতে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও ছিল সৌদির পক্ষে। কিন্তু বাশারের পক্ষ নেয় রাশিয়া। সেখানে অন্যতম সহযোগী হিসেবে হাজির হয় ইরান। সিরিয়ায় সৌদুিসমর্থিত বিদ্রোহীরা যে হেরে যাচ্ছে, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। ইয়েমেনে সৌদি আরব ইরানের ছায়া যুদ্ধ চলছে। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী হামলা চালায় শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে। ওই বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় ইরান। সৌদি আরবের অভিযোগ, ইরানের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে সৌদি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে হুতি বিদ্রোহীরা। সেই লড়াই এখনো চলছে। সর্বশেষ লেবাননে মুখোমুখি সৌদি আরব ও ইরান। লেবাননের শক্তিশালী কট্টরপন্থি সংগঠন হিজবুল্লাহ। শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী এই সংগঠন ইরানের কাছ থেকে সরাসরি সহায়তা পায়। হিজবুল্লাহ বিশ্বের সাধারণ কট্টরপন্থি সংগঠনগুলো থেকে কিছুটা আলাদা। দেশটির পার্লামেন্টে এবং মন্ত্রিসভায় এই সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধও করেছে এই সংগঠন। সম্প্রতি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সৌদি আরবে গিয়ে ‘প্রাণভয়ে’ প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রভাব ও তার জীবনাশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। তবে হিজবুল্লাহ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে সাদ হারিরির এই ঘোষণা সৌদি আরবের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেয়। পরে সৌদি থেকে ফ্রান্স হয়ে লেবাননে ফিরে গিয়ে সাদ হারিরি তার পদত্যাগের ঘোষণা স্থগিত করেন। এ বিষয়ে সবকিছু খুলে বলবেন বলে ঘোষণা দিলেও এখনো সেভাবে কিছু খোলাসা করেননি তিনি। কিন্তু সৌদিতে গিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা ইস্যুতে মুখোমুখি ইরান-সৌদি আরব। দুই দেশের নেতাদের চলমান বাগযুদ্ধে তার প্রমাণ মেলে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ বাজি আশঙ্কা করেন, সৌদি আরব ও ইরান হয়তো সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে। তিনি বলেন, দেশ দুটি সরাসরি যুদ্ধ না জড়ালেও তাদের উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। কে কার পক্ষে? সৌদি আরব ও ইরান মুখোমুখি হলে আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে কে কাকে সমর্থন দেবে? বিবিসি বলছে, সৌদি আরব বেশি দেশের সমর্থন পাবে। এই দেশগুলো হলো: মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। আর তাদের সর্বশেষ ‘মিত্র’ হিসেবে সমর্থন থাকবে ইসরাইলেরও। এ ছাড়া সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিদ্রোহী, ইয়েমেনের নির্বাসিত সরকারের সমর্থক ও লেবাননের সুন্নি ব্লকের সমর্থন পাবে সৌদি আরব। পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাবে সৌদি আরব। অন্যদিকে ইরান পক্ষে পাবে ইরাককে। আর সিরিয়ার সরকার, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের হিজবুল্লাহকে পাশে পাবে ইরান। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহর হাতে এক লাখ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সৌদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাশক্তি রাশিয়া ইরানের পক্ষে থাকবে বলে ধারণা করা হয়। |