সৃজনশীল কাজে আগ্রহ বাড়ুক
Published : Monday, 11 December, 2017 at 10:01 PM, Count : 27952

এসএম নূরনবী সোহাগ : ‘ভাবী, ‘আমার ছেলেটার মেধা খুব ভালো। আমি চাই ওকে ডাক্তার বানাবো কিন্তু ওর বাবা ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে চায়।’ আর বলবেন না ভাবী, ‘আমার মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না। ওর কোন বন্ধু নাকি ওকে পরামর্শ  দিয়েছে জার্নালিজমে পড়তে, আমার আর ওর বাবার তো ওসব একদম পছন্দ না। আমরা চাই ও আমাদের মতোই ব্যাংকার হোক। তাই ওকে বুঝিয়ে হলেও আইবিএ’তে ভর্তি করিয়ে দেব’। বোঝেনতো আজকালের যুগ, একটা ভালো চাকরি না হলে একদম চলবে না’- এ কথোপকথন এ প্রজন্মের দুজন সচেতন মায়ের।
একটা সময় ছিল, যখন শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদা কেবল উচ্চবিত্তদের দখলে থাকতো কিন্তু ধীরে ধীরে সে সময় বদলেছে, শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে দিকে দিকে। কিন্তু শিক্ষার আলোয় আলোকিত কিছু মানুষ এখনও তাদের ধ্যান ধারণায় কিছু অযৌক্তিক বিষয় জিয়িয়ে রেখেছেন। তাদের ধারণা, বাংলাদেশে পেশা বলতে শুধু ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাই কেবল সচল এবং স্থায়ী। যার দরুণ, যে কোনো মূল্যে তাদের সন্তানদের হতে হবে হয় ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মানসিকতা কেন? এর সহজ উত্তর হতে পারে ভবিষ্যত্ নিরাপত্তা। তবে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া অন্যান্য পেশাধারী মানুষরা কি তবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে! বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সব কিছুর যেখানে এত এত প্রসার ঘটছে সেখানে আমরা কেন আমাদের চিন্তা শক্তিকে সংকুচিত করে রাখছি। প্রযুক্তির এ দারুণ বিপ্লবে আমরা যখন জেনে গেছি ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক রকম পেশা আছে আর যাতে শুধু নিশ্চিত ভবিষ্যত্ই নয় আছে জীবন বদলে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা।
যখন একজন ভিডিও মেকার ঘরে বসেই ডলার আয় করছে, যখন একজন ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিচ্ছে তার পছন্দসই কাজ। তখন আমরা কেন হতাশার গণ্ডিতে ঘুরপাক খাচ্ছি? সৃজনশীল কাজে আমাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। সৃজনশীল কাজে যাদের আগ্রহ তাদের অপার সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে ভবিষ্যত্। সৃজনশীল কাজে আছে যেমন ব্যক্তি স্বাধীনতা তেমন আছে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ। আজকে যে শিশুটির জন্ম হল, সে হয়তো জানে না আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মাথায় তার কাঁধে উঠে যাবে একটা ভারী ব্যাগ। তাকেও দৌড়াতে হবে জীবন নামক প্রতিযোগিতার ট্র্যাকে। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর আগ্রহকে বিসর্জন দিয়ে ছুটতে হবে কোচিং থেকে কোচিংয়ে- একটি গোল্ডেন এ প্লাস এর জন্য। দিন শেষে কোন কোন শিক্ষার্থী হয়তো নিজেদের আবিষ্কার করবে একটি ‘যন্ত্রমানব’ রূপে। কেন এই প্রতিযোগিতা? শুধু কি টিকে থাকতে? আমাদের যুবসমাজের ভেতর থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ইচ্চাশক্তি। দমে যাচ্ছে ভেতরে থাকা এক অদম্য শক্তি।
এবার প্রশ্ন করা যাক বাবা-মায়ের কাছে, আপনারা কি কখনো জানতে চেয়েছেন আপনার ছেলেটি সত্যিই ডাক্তার হতে চায় কি-না? আপনার মেয়েটি ভালো ছবি আঁকে। তাকে কখনো ভরসা দিয়ে বলেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে না চাইলে চারুকলায় পড়তে পারো। বলেননি, তাই তো! এ না বলার পেছনে বড় কারণ হতে পারে অন্ধতা; যে অন্ধত্ব ভেদ করে আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না সৃজনশীলতার মর্মতা। আমরা সবাই জীবনে সফলতা চাই। আর তাই চেষ্টা করি বড় কোনো পেশাকে পুঁজি করে সে সফলতা কে ছুঁতে। তবে আমরা সফলতা বলতে কি বুঝবো? বড় ডিগ্রি ধারণের পরে বড় কোন চাকরি? কিন্তু এ গতানুগতিক ধারা ছাড়াও মানুষ সফল হয়। আমরা কেন ভেবে নেব, কেউ সফল হতে হলে তাকে অবশ্যই বড় ডিগ্রিধারী হতে হবে! একজন চা বিক্রেতাও সফল হতে পারে, যখন গতকালের তুলনায় আজকে তার চা বিক্রি পাঁচশত টাকা বেশী হয়েছে, যখন গতকালের তুলনায় দশ মিনিট আগেই তার চা বিক্রি শেষ হয়ে গেছে, যখন গতকালের তুলনায় আজকে একজন বেশি মানুষ তার চায়ের দোকান চিনেছে। তখন তার জায়গায় আজকে তিনি সফল ব্যক্তি।
নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় ডিগ্রি নিয়েছে বলে তাকে বড় চাকরিই করতে হবে অন্য কিছু করতে পারবে না এমন মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। আমি একজন আয়মান সাদিক’কে চিনি যিনি তার কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্কুলে পড়ানো। তবে তার পড়ানোর কৌশলটা একটু ব্যতিক্রমী। তিনি অনলাইন স্কুলে পড়ান। এটিই তার সৃজনশীল চিন্তার বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘টেন মিনিট স্কুল’। তার প্রতিষ্ঠিত এই ‘টেন মিনিট স্কুল’ থেকে যদি কোন শিক্ষার্থী কোনো দিন কোনোভাবে যদি একটুও উপকৃত হয় তবে আমি মনে করি, আয়মান সাদিক তার কাজে সফল এবং সার্থক হয়েছেন। তিনি বড় কোন ডাক্তার হলে হয়তো তার অনেকগুলো ডিগ্রি উল্লেখসহ একটি ভিসিটিং কার্ড থাকতো জন কয়েকের কাছে। কিন্তু এখন তার ‘টেন মিনিট স্কুল’ নামক ভিসিটিং কার্ড আছে পুরো বাংলাদেশের কাছে। আমরাও এমন করে আমাদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাই। এমন কিছু করি যাতে নিজে উপকৃত হই, সমাজ উপকৃত হয়, দেশও উপকৃত হয়। সেটাই হবে আমাদের সফলতা। আমাদের  বর্তমান যুবসমাজের প্রধান সমস্যা আমরা অল্পতেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরি। আমাদের সামনে একটা অসামান্য ভুবন অপেক্ষা করছে, দেখতে চাচ্ছে আমরা কত দ্রুত তার কাছে পৌঁছাতে পারি আমাদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে। আমরা হাজার হাজার কাজের মধ্যে থেকে খুঁজে নিই আমার কাজকে। যে কাজ নিজেকে আত্মতৃপ্তি দিবে, আমরা সেই কাজই করবো। কোন কাজই ছোট নয় যদি তাতে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আগ্রহ থাকে। সৃজনশীল মানুষ কখনো থেমে থাকে না। আমরাই সৃষ্টি করবো আমাদের পথ। আমরাই গড়ে তুলবো আমাদের প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও নিশ্চিত ভবিষ্যত্।
লেখক : কবি ও কলাম লেখক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft