দুর্গাসাগর দীঘি
Published : Wednesday, 1 March, 2017 at 8:47 PM, Count : 13245

বরিশাল জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিমি. দূরে মাধবপাশায় দুর্গাসাগর দীঘিটির অবস্থান। বরিশালের বাবুগঞ্জেরও সন্নিকটে। বরিশাল ভায়া বানারীপাড়া যাওয়ার পথেই নেছারাবাদ সড়কের পাশে চোখে পড়বে দীঘির মনোরম দৃশ্য। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তত্কালীন রাজা শিবনারায়ন এলাকাবাসীর পানির সঙ্কট নিরসনে মাধবপাশায় একটি বৃহত্ দীঘি খনন করেন। তার মা দুর্গাদেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গাগাসাগর। প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিবর্তে দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগর এর তিন দিকে ঘাটলা ও দীঘির ঠিক মাঝখানে ৬০ শতাংশ ভূমির ওপর টিলা। দুর্গাসাগরে দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ মাঝখানের এই দ্বীপটির সৌন্দর্য। ২৫০০ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করলে, এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। স্থানীয়ভাবে এটি মাধবপাশা দীঘি নামেও পরিচিত।
শীত ও বসন্ত ঋতুর শুকনো মৌসুমে দীঘির পাড় লোকে-লোকারণ্য হয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে দিনের পুরোটা সময়। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দীঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকেনতুন করে খুঁজে পাওয়া। চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দীঘির উত্তর পাশে আছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দীঘিটির শোভা বর্ধন করে চলেছে।
দুর্গাসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়। পাঁচ প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির কলকাকলীতে দীঘিটি শীতকালে মুখরিত থাকে। সরাইল ও বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে ঢিবিতে আশ্রয় নেয়। সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ, স্ফটিক পানিতে। কখনো বা হালকা শীতের গড়ানো দুপুরে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলে দেয় আকাশে। আড়াই শত বছর আগে খনন করা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর। দীর্ঘিটি সংস্কারসহ পাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত রেস্ট হাউস এবং পাখিদের অভয়ারণ্য নির্মাণ ও দীঘিতে যাতায়াতের জন্য বোডসহ ভাসমান ব্রিজ নির্মিত হলে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটতো এখানে। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেতো। পাশাপাশি রক্ষা করা সম্ভব হতো এই প্রাচীণ কীর্তি। অদূরেই লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিনশত বছরের পুরনো।
কিভাবে যাবেন
লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারিচালিত ল্যাগুনা করে চলে যেতে পারেন দীঘির গেট পর্যন্ত। অথবা নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে চাখার যাওয়ার বাসে উঠে পড়লেও হবে। একদম দীঘির গেটে নামিয়ে দিবে আপনাকে। সড়কপথে গেলে আপনাকে নামতে হবে গইরারপার। সেখান থেকে আপনি গাড়ি বা অটোরিকশা যোগে সরাসরি চলে যেতে পারেন দুর্গাসাগর। আকাশ পথে গেলেও আপনাকে গইরারপার নামতে হবে।
কোথায় থাকবেন
পশ্চিমপাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। চাঁদনী রাতে দীঘির পাড়ে রাত কাটাতে ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে বরিশাল ফিরে আসতে পারেন। বরিশালে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল তো রয়েছেই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft