শিরোনাম: |
শিশু অধিকার রক্ষার দায়িত্ব
|
![]() অভিভাবকদের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবেও শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিশু নিরাপত্তার যে আইন আছে প্রয়োজনবোধে তা আরও কঠোর করতে হবে। শিশু আইন যাতে সঠিক প্রয়োগ হয় তার তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে কোন শিশুই আমাদের দেশের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অভাবে বিপথগামী না হয় সে ব্যাপারে সব পেশাশ্রেণির মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা জানি, আমাদের দেশে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আইন আছে, কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার কারণে অব্যাহতভাবে শিশুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে চলেছে। হরণ করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে শিশুদের অধিকারও। বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এখনও বহু দেশে তা চালু আছে। আমাদের দেশেও শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে এখনও শিশুরা বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন যানবাহনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। অথচ শিশুদের লেখাপড়াসহ তাদের অন্নবস্ত্র ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। কেননা শিশুরা যদি পড়ালেখা, স্বাস্থ্য, চিকিত্সা, বাসস্থান ও অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চয়তা না পায় তারা কীভাবে বেড়ে উঠবে? বিভিন্ন সময় দেখা যায় শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা দূরে থাক, আমাদের এ নিষ্ঠুর সমাজে তাদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে, ছ্যাঁকা দিয়ে, এমনকি নিভৃত ঘরে বন্দি করে রেখেও তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটছে। যা শুধু আমাদের দেশই নয় পৃথিবীর আরও অনেক দেশেও এমন ঘটনার নজির মিলছে। এ যে কত বড় নিষ্ঠুর ও লজ্জাজনক, তা ভাবলে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের গা শিউরে ওঠে। এ অবস্থা থেকে শিশুদের সুরক্ষা খুবই জরুরি। শিশুর মানবাধিকার এবং অধিকার সংরক্ষণ করতে সব দেশের সরকারের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে বিবৃত হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে। এটি হলো শিশু অধিকার সনদ। এ সনদ ইতিহাসের সবচেয়ে সর্বজনীন মানবাধিকার দলিল। যে দলিলটি অনুমোদনের মাধ্যমে সরকারগুলো শিশুদের অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে নিজেদের দায়বদ্ধ করে তুলেছে। শুিশুদের মানবাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে তার বেঁচে থাকার অধিকার, পূর্ণ মাত্রায় বিকাশের অধিকার, কুপ্রভাব, নির্যাতন ও শোষণ থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার এবং পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে পুরোপুরি অংশগ্রহণের অধিকার। সনদে বর্ণিত প্রতিটি অধিকার প্রত্যেক শিশুর মানবিক মর্যাদা ও সুষম বিকাশের জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা ও আইনগত নিশ্চয়তাসহ নাগরিক ও সামাজিক সেবা প্রদানের মান নির্ধারণের মাধ্যমে এ সনদ শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। দেশের অনেক শহর ও বন্দর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে শিশুরা একা একা স্কুলে যায়। মাঠে খেলে বেড়ায়। অভিভাবক থাকেন না অনেক শিশুর সঙ্গে। ফলে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত শিশুদের অপহরণ করে বিদেশে পাচার করে দেয়। শিশুদের স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে অথবা তাদের সুবিধামত স্থান থেকে অপহরণ করে নিয়ে আটকিয়ে রেখে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টাও করে দুর্বৃত্তরা। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে শিশুদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। কখনো কখনো তা আদায় সম্ভব না হলে অপহূত শিশুর ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটানো হয়। আবার কখনো কখনো কলকারখানায় কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যায় অনেক শিশু। শুধু তাই নয়, এক শ্রেণির মানুষ নামের জানোয়ার মিথ্যা চুরির অভিযোগ দিয়ে শিশুকে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। যার জলন্ত প্রমাণ সিলেটের শিশু রাজন হত্যার ঘটনা। যাা এখনও আমাদের এ সমাজের দগদগে ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে। এমন ঘটনা শুধু একটি বা দুটি নয়। আরও অনেক ঘটছে। এসবের কোনো কোনোটি মিডিয়ার বদৌলতে বিচারের আওতায় এলেও অনেক ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। বিচারের দোরগোড়ায় যেতেও পারে না অনেক ঘটনা। নির্যাতনের ফলে অপমৃত্যুর শিকার শিশুর অভিভাবকরা অনেকে জানেনও না বিচারের জন্য কোথায় এবং কীভাবে যেতে হয়। যাই হোক, বর্বর অমানবিক শিশু নির্যাতন সভ্য সমাজে চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজকর্মী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। শিশুর অধিকার হরণ কিংবা এদের ওপর জুলুম-নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সবাইকে। শিশুর প্রতি অমানবিক ঘটনা দেখলেই তা অবিলম্বে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে খবর দিয়ে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অতীতে আমাদের দেশে শিশু নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সঠিক বিচার হলে শিশু নির্যাতনের মাত্রা কম আসবে বলে দেশের বিজ্ঞমহল মনে করেন। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকে যারা শিশু কালকে তারা হবে দেশের কর্ণদ্বার বা রাষ্ট্র পরিচালক। তাই এখন থেকে আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিক শিশুদের প্রতি হতে হবে সহনশীল ও যত্নবান এবং তাদের সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। কেননা শিশুদের আগামী দিনের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা সবারই দায়িত্ব। বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে প্রতিটি অভিভাবককে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। স্কুল চলাকালে শিশুকে কোনো কাজে পাঠানো যাবে না এবং শিশুরা সঠিক সময়ে স্কুলে যায় কি-না তা অভিভাবকদের কে খোঁজ-খবর নিতে হবে। স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে শিশুর লেখাপড়ার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের খেলাধুলা করাসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ যে শিক্ষার সঙ্গে বিনোদনের কোনো সম্পর্ক নেই সে শিক্ষা কখনো প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না। তাই লেখাপড়ার পাশপাশি শিশুদের বিনোদনের নিশ্চয়তা রাখতে হবে। লেখক: কলাম লেখক |