শনিবার ১০ মে ২০২৫ ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
পানি নিরাপত্তায় সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ নিন - প্রধানমন্ত্রী
Published : Monday, 28 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 687

বর্তমান প্রতিবেদক : বিশ্বজুড়ে পানি নিরাপত্তায় বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইসঙ্গে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাত দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে গঠিত পানিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান

শেখ হাসিনা বলেন, পানি নিরাপত্তাই এ পৃথিবীর মানুষের মর্যাদার্পূণ ও মঙ্গলময় জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে সে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে, আর তা এই মুহূর্ত থেকেই এ ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন এবং অপরিকল্পিত শিল্পায়নের এ সময়ে পানির কারণে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে  এবং রাষ্ট্রের ভেতরে বৈষম্য ও বিভেদ তীব্রতর হচ্ছে কাজেই পানির সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও এর সদ্ব্যবহারের ওপর সমষ্টিগতভাবে নজর দিতে হবে তাহলে পানির বৈষম্যই অবসানের পাশাপাশি সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে, কেননা বিশ্বে অনেক উত্তেজনা ও সংঘাতের মূলে রয়েছে এই পানি পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাত দফা প্রস্তাব সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রস্তাবগুলো হলো- ১. এজেন্ডা ২০৩০ এ টেকসই উন্নয়ন ও পানির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকপর্যায়ে যে কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টার আলোচনায় পানির বিষয়ও থাকতে হবে  ২. বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের সুপেয় পানি ও ন্যূনতম পয়ঃনিষ্কাশন চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কারণ পানির যে সরবরাহ রয়েছে তার পর্যাপ্ত ও নিরাপদ নয় এ ক্ষেত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ, বিশেষ করে দরিদ্র, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে ৩. যেসব দেশ জলবায়ু পারিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পানির কারণে কাজেই পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা গড়ে তোলা জরুরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন প্রক্রিয়াকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে ৪. পানি নিয়ে আজকের এই সঙ্কট এর অপ্রতুলতার জন্য নয়, সুষম বণ্টনের অভাবে তৈরি হয়েছে এর একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান হতে পারে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ৫. কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পানি জরুরি

আমাদের অবশ্যই কম পানি লাগে এমন ফসল এবং পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে ৬. যেসব উদ্যোগ একটি দেশকে পথ দেখাচ্ছে, তা অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই বিনিময় করতে হবে, যাতে পানি সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জ্ঞান, ক্ষমতা, দক্ষতা ও কৌশলের উন্নয়ন ঘটানো যায় ৭. পানি সংক্রান্ত লক্ষ্য পূরণে অর্থায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানি বিষয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হতবিল গড়ে তুলতে হবে এবং এর সুফল সবচে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মানসম্মত স্যানিটেশন, পানি ও বিশুদ্ধতার অভাবে প্রতি বছর প্রায় পৌনে সাত লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং অনেক দেশের জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে বর্তমানে বিশ্বে ২৪০ কোটি মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়েছে এবং অন্তত ৬৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের করণীয় নির্ধারণ এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত পানি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ বুদাপেস্টে তিন দিনের এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য পানিকে সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্যের মৌল ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানিবিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করায় হাঙ্গেরি সরকারকে ধন্যবাদ জানান

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দর্শন, সংস্কৃতি, জীবন ও জীবিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে পানি আর এমন এক দেশ এই পানি সম্মেলনের আয়োজন করেছে, সেই হাঙ্গেরি পানি নিরাপত্তার জন্য বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ২০১৩ সালের বুদাপেস্ট পানি সম্মেলনই পানি নিয়ে এসডিজির ধারণাগত ভিত্তি দিয়েছে

বাংলাদেশে নিরাপদ পানির জন্য এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে পূরণ এবং ৬৫ শতাংশ মানুষের জন্য উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি এবং মোট জনসংখ্যার অন্তত ৯০ শতাংশের জন্য উন্নত পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের সতর্কতা ব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সমুদ্র উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার উদ্যোগ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে

তিনি বলেন, বর্ষায় পানির আধিক্য এবং শুকনো মৌসুমে খরার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে এই সঙ্কট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে কারণ বাংলাদেশের ভূ-উপরিস্থ পানির ৯২ শতাংশের উত্পত্তিস্থল সীমান্তের বাইরে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন একটি জটিল বিষয় বাংলাদেশ গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে দুই দশক আগে ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে পানি বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাও সঠিক পথেই এগোচ্ছে



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com