শনিবার ১০ মে ২০২৫ ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
নিখোঁজ তালিকার ৪০ জন জঙ্গি দলে: আইজিপি
Published : Thursday, 17 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 710

বর্তমান প্রতিবেদকঃ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৪০ জন জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। বুধবার পুলিশ সদর দফতরে  দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এ সময় তিনি সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানান। শহীদুল হক বলেন, তামিম ও তার সহযোগীরা নিহত হওয়ায় দেশ বড় ধরনের জঙ্গি হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে।

তবে নিখোঁজ তালিকার মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। নিখোঁজদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে তা কীভাবে বুঝলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অনেক পরিবার আমাদের জানিয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তি ফোনে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়ার বিষয় জানিয়েছে। এরপর তারা সশরীরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও বিভিন্ন সময় ফোন দিয়ে তাদের জানিয়েছে, তারা ভালো আছে। শহীদুল হক বলেন, আমরা নিখোঁজদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

তবে নিখোঁজদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ফিরে এসেছে। নিরাপত্তার কারণে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং তাদের সংশোধন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা কোনো হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, শুধু জঙ্গিদের সমর্থক ছিল। এছাড়া যারা বিভিন্ন হামলার ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান: নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় হামলার বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে দিনের আলোতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

অভিযানের আগে আড়াইঘণ্টা বাড়িটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়। অভিযান শেষে সেখান থেকে অস্ত্রসহ লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
নিহত জঙ্গিরা হলো তামিম আহমেদ চৌধুরী। সে সিলেটে বিয়ানিবাজারের স্বাধীমাপুর গ্রামের শফিক আহমেদ চৌধুরীর ছেলে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে শফিক আহমেদ সপরিবারে কানাডায় চলে যান। সেখানেই তামিম চৌধুরীর জন্ম হয়।

২০১৩ সালে ৫ অক্টোবর তামিম বাংলাদেশে আসে। সে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি এলাকাসহ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুরে জঙ্গি হামলার তত্ত্বাবধানে ছিল। এমনকি এসব হামলার অস্ত্র ও অর্থ জোগান দিয়েছে তামিম। নিহত অন্য জঙ্গির নাম কাজী ফজলে রাব্বী। সে যশোরের কিসমত নোয়াপাড়া গ্রামের কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে। সে যশোর এমএম কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করত। চলতি বছরের শুরুতে সে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয়।

গত ৭ এপ্রিল পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় তার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ অভিযানে নিহত আরেক জঙ্গির নাম তওসিফ হোসেন। সে রাজশাহীর গোয়ালিয়া থানাধীন রামচন্দ্রপুরের ডা. আজমল হোসেনের ছেলে। তারা সপরিবারে ধানমন্ডিতে থাকত। সে ২০১১ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সে নিখোঁজ হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় তার নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করে পরিবার।

তামিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড মারজান: শহিদুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত তামিম আহমেদ চৌধুরীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে কাজ করছে নুরুল ইসলাম মারজান। সে এক সময় শিবিরের নেতা ছিল। বর্তমানে সে পলাতক আছে। তাকে ধরার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

খালেদার বক্তব্য দায়িত্বহীন: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানকে সাজানো বলে উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বিএনপি নেত্রী যদি এ ধরনের কথা বলে থাকেন, তবে সেটা খুবই দুঃখজনক। কারণ দিনের আলোতেই অভিযান চালানো হয়েছে, সবাই তা দেখেছেন। পুলিশের অভিযানে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার নিজস্ব লোকজন আছে। তাদের দিয়েও তদন্ত করে দেখতে পারেন, ঘটনা সাজানো কি-না। এটা কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্য হতে পারে না।

আমি দুঃখিত ও লজ্জিত : ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলার বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, আমি লজ্জিত এবং দুঃখিত। কারণ আমাদের তত্কালীন কয়েকজন পুলিশ অফিসার ২১ আগস্টের মতো ঘটনায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জজ মিয়া নাটক তৈরি করেছিলেন। তবে ২০০৭ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোনো পুলিশ অফিসার এ রকম কোনো ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেনি।

জঙ্গিবাদের উত্থান বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তখনই জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল।
নিহত জঙ্গি তামিম আহমেদ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে যে ২০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল তা অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। দণ্ড কার্যকর হওয়া তিন যুদ্ধাপরাধীর ছেলেদের তুলে নেয়ার বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে যদি থানায় জিডি করা হয় তবে আমরা অবশ্যই তাদের আইনি সহযোগিতা দেব। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com