শিরোনাম: |
রেকর্ড করেছে চা শিল্প
উত্পাদন কোটি কেজি হওয়ার সম্ভাবনা
|
বর্তমান প্রতিবেদক : চলতি বছর বৃহত্তর চট্টগ্রামে চা উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এবার এই অঞ্চলের ২২টি চা বাগানে চা উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৪ লাখ কেজি। ইতোমধ্যে ৮৫ লাখ কেজি চা উত্পাদন হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফটিকছড়ির ১৭টি চা বাগান। ফটিকছড়ির বাগানগুলোতে উত্পাদন হয়েছে ৮০ লাখ কেজি চা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর শেষে এটি এক কোটি কেজি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে এই উত্পাদন রেকর্ড করেছে। চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্রে সর্বোচ্চ দরপ্রাপ্ত চা বাগান ও সারাদেশে এক মিলিয়ন কেজির বেশি চা উত্পাদনকারী বাগানের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফটিকছড়ির চা বাগান। তাই উত্ফুল্ল ফটিকছড়ির চা বাগান মালিক ও ব্যবস্থাপকগণ। তারা বলেন, চা বাগানগুলোর উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে দরকার গ্যাস সংযোগ, সড়ক উন্নয়ন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। চট্টগ্রাম চা সংসদ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে চলতি বছর চা উত্পাদন বেড়েছে। সাধারণত বছরের শেষ সময় বাগানে ভালো মানের চা উত্পাদন হ্রাস পায়। তবে এবার উত্পাদন ভালো হওয়ায় পূর্বের চেয়ে বেশি চা সরবরাহ করছে ফটিকছড়ির চা বাগানগুলো। চা বাগানগুলো হচ্ছে ব্র্যাকের মালিকানাধীন কর্ণফুলী চা বাগান ও কৈয়াছড়া চা বাগান, পেড্রোলা গ্রুপের রামগড় চা বাগান ও হালদা ভ্যালি চা বাগান, টি কে গ্রুপের রাঙ্গাপানি চা বাগান, বারমাসিয়া চা বাগান ও এলাহী নূর চা বাগান, ইস্পাহানী গ্রুপের মালিকানা নেপচুন চা বাগান, একে খান গ্রুপের আধার মানিক চা বাগান, মোস্তফা গ্রুপের উদালিয়া চা বাগান। এককভাবে পরিচালিত হচ্ছে আছিয়া চা বাগান, পঞ্চবটি চা বাগান, নিউ দাঁতমারা চা বাগান, দাঁতমারা চা বাগান, নাছেহা চা বাগান, মা-জান চা বাগান ও মোহাম্মদ নগর চা বাগান। চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ দরপ্রাপ্ত চা বাগানের মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়ির ব্র্যাক-কৈয়াছড়া চা বাগান। তাদের উত্পাদিত চা ২৪৯ টাকা ৭ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এই তালিকায় কর্ণফুলী, নেপচুন, রামগড়, রাঙ্গাপানি, হালদা ভ্যালি, আছিয়া, পঞ্চবটি, মা-জান, উদালিয়াসহ ফটিকছড়ির ১০টি চা বাগান রয়েছে। এক মিলিয়ন কেজির বেশি চা উত্পাদনকারী বাগানের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্র্যাক-কর্ণফুলী চা বাগান। ফটিকছড়ি উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে চা চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি চা বাগান এ বছরে এক কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২০৬ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর দিয়েছে। বাকি ৫টি চা বাগান জমির মামলার কারণে ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ টাকা ৪০ পয়সা বকেয়া রেখেছে। এগুলো হলো দাঁতমারা চা বাগান, মা-জান চা বাগান, আছিয়া চা বাগান, নেপচুর চা বাগান ও মোহাম্মদ নগর চা বাগান। রাঙ্গাপানি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শফিউল আলম মিলন বলেন, ‘২০১৫ সালে উত্পাদন ছিল তিন লাখ ৩৪ হাজার ১৯০ কেজি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা চার লাখ ৫২ হাজার ১৩৭ কেজি চা উত্পাদন করেছি। বছর শেষে পাঁচ লাখ কেজি অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। নেপচুন চা বাগানের ব্যবস্থাপক কাজী এরফান উল্লাহ জানান, ‘২০১৫ সালে বাগানটির উত্পাদন ছিল সাত লাখ ৯৬ হাজার কেজি। চলতি বছরে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্পাদন হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি। এ বছর আমরা প্রায় তিন হাজার একর জমিতে প্রায় ১১ লাখ কেজির চা উত্পাদন করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিজস্ব সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা বছর একই রকম উত্পাদন করার চেষ্টা করছি। এ জন্য সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার। হালদা ভ্যালি চা বাগানের ব্যাপস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০১৫ সালে এই বাগানে মোট উত্পাদন ছিল ছয় লাখ ২০ হাজার কেজি। চলতি বছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৫৫ হাজার কেজি চা উত্পাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় তা ৩৫ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, চা বাগানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চা শ্রমিকের জীবনের মানোন্নয়নে সরকারের সহায়তা পেলে দেশের চাহিদার ৪০-৫০% চা ফটিকছড়ি থেকে যোগান দিতে পারব। ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালে এই বাগানের উত্পাদন ছিল ১৬ লাখ ৬২ হাজার ২শ কেজি। চলতি বছরে এটি গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার কেজি। এ বছর আমরা ২৬শ একর জমিতে প্রায় ১৮ লাখ কেজি চা উত্পাদন করব। তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চট্টগ্রাম চা সংসদের সাবেক সভাপতি ও পঞ্চবটি চা বাগানের মালিক মো. নাসির উদ্দিন বাহাদুর বলেন, এ বছর শুরু থেকে আবহাওয়া চা উত্পাদনের জন্য উপযোগী। চট্টগ্রামের বাগানগুলোতে উচ্চ ফলনশীল বিটি-২ জাতের চারা থেকে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০-৩০ শতাংশ চা বেশি উত্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুত্চালিত মেশিনের তুলনায় গ্যাসের মেশিনের খরচ অনেক কম। সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড থেকে ফটিকছড়ির চা বাগানগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবি অনেক পুরনো। তিনি জানান, ফটিকছড়ির একটি বাগান গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে এখানকার সব বাগানে গ্যাস সংযোগ দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। চট্টগ্রাম চা সংসদের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্টু বলেন, চা উত্পাদনে এবার আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারব। |