শিরোনাম: |
হুমকির মুখে রাবার শিল্প
|
![]() রাবার কাঁচামাল কৃষি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও শিল্প পণ্য হিসেবে দেশের বাজারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। অথচ রাবার কাঁচামাল বাজার উপযোগী করতে প্রতি কেজিতে খরচ হয় বর্তমান বিক্রি মূল্য থেকে প্রায় ৯০ টাকা বেশি। রাবার সংগ্রহের উত্কৃষ্ট সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম হওয়ার কারণে এ সময়ে দেশের বাগান মালিকরা রাবার সংগ্রহ করতে উত্সাহ হারিয়ে ফেলছেন। আমদানিকৃত রাবারের তুলনায় দেশীয় রাবারের ওপর করভার বেশি হওয়ায় অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে দেশীয় উত্পাদিত রাবার। আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন এবং দেশীয় রাবারের ওপর করভার বেশি হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিদেশি রাবার ক্রয় করছেন। সরকারের অবহেলা ও উদ্যোক্তাদের দেশীয় বাজারের প্রতি উদাসীনতায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্ল্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট সরকারি রাবার বাগান ১৮টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে ৯টি, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ জোনে ৫টি ও সিলেট জোনে ৪টি বাগান রয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন অসংখ্য রাবার বাগান রয়েছে। দেশে রাবারের চাহিদা ৩০ হাজার টন। এর মধ্যে বেশিরভাগ (১৬ থেকে ২০ হাজার টন) দেশে উত্পাদিত হচ্ছে। বর্তমান দেশে যে পরিমাণ রাবার উত্পাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করা হচ্ছে। রাবার আমদানি নামমাত্র শুল্ক হওয়ার কারণে দেশের বাজার দরের চেয়ে কম দামে ভিয়েতনাম থেকে রাবার আমদানি করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি রাবার বাগানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। জানা যায়, মুক্তবাজারের ফলে বিদেশি রাবারে বাজার সয়লাব। রাবার আমদানিতে নামমাত্র শুল্ক বসানো এবং দেশীয় রাবার বিক্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও রাবারের উত্পাদন খরচ বেশি, বিক্রির দাম কম এমন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দেশের রাবার শিল্প। এমতাবস্থায় দেশের সরকারি ১৮টি রাবার বাগান বড় অঙ্কের লোকসান দিয়ে টিকে থাকতে পারলেও ব্যক্তি বাগান মালিকরা হতাশায় নিরুপায় হয়ে বাগান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। কেউ কেউ বাগানের গাছ কেটে বিকল্প চিন্তা করছেন। ফলে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন রাবার বাগান। আর এতে লোকসানের মুখে পড়ছে দেশের অর্থনীতির চাকা। বাংলাদেশ রফতানি উন্নোয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১.২০ শতাংশ, অর্জিত হয়েছে ৭.২৬ শতাংশ। এ সময়ের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৫.১৭ শতাংশ কম। যা বিগত বছরের রফতানির তুলনায় ১৯.২৪ শতাংশ কম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাবার উন্নয়ন করপোরেশনের মহা-ব্যবস্থাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদের স্টক অনেক, রাবারও ভালো কিন্তু বিক্রি নেই। মুক্তবাজার হওয়ার ফলে বাংলাদেশে রাবারের মূল্য নিচে নেমেছে। পাশাপাশি ভ্যাট বসানোয় এর প্রভাব পড়েছে রাবার বিক্রির ওপর। বেসরকারি রাবার মালিকরা জানান, ২০১০-১২ সালে রাবারের দাম ছিল কেজি প্রতি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, ২০১৩-২০১৪ সালে দরপতনে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি রাবারের দাম ৭০ থেকে ৯০ টাকা। অথচ দেশের বাগানগুলোয় রাবার উত্পাদনের পর তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করতে খরচ হয় প্রায় ১৬০ টাকা। এতে মুনাফা তো দূরের কথা বাগান শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে এ লোকসান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাবার বাগানের গাছ কেটে ফেলা বেসরকারি মুড়ইছড়া চা বাগান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের মালিক মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার আবদুল মতলিব, আবদুল লতিফ, আবু হানিফ, বড়লেখার দক্ষিণভাগের ঈমান উদ্দিন জানান, দীর্ঘ ৫ বছর ভর্তুকি দিয়ে বাগান চালু রেখেছিলাম, মনে হয়েছিল দাম হয়তো পুনরায় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে দরপতনে আমরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। |