শিরোনাম: |
জঙ্গি দমনে বিদেশেও প্রশংসা পেয়েছে পুলিশ
আজ শুরু হলো পুলিশ সপ্তাহ
|
![]() পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ সত্তর হাজারের কিছু কম। ইউনিট রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিশেষায়িত ৫টি ইউনিট। এগুলো হলো- শিল্প পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, এয়ারপোর্ট আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এএপি) এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অধিনে ক্রাইন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। তবে লোকবল ও যানবাহন সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতাই পুলিশের নব্য গঠিত ইউনিটগুলো এখনো পুরোপুরি সেবামুখি হতে পারেনি বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। শিল্প পুলিশ: দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহ ভাগই আসে পোশাক শিল্পখাত থেকে। আর এই পোশাক শিল্প খাতের বেশীর ভাগ কারখানাই ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ানগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে। শিল্প অধ্যুষিত এই অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ পূর্বক সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ৩১ শে অক্টোবর শিল্প পুলিশ যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই ইউনিটের সদস্য সংখ্যা ২৯৯০ জন। একজন উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শককে (ডিআইজিকে) প্রধান করে প্রাথমিকভাবে চারটি অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিল্প পুলিশ। অঞ্চলগুলো হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ানগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম। প্রত্যেকটি অঞ্চলে একজন করে পুলিশ সুপার (এসপি) পদ মর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রধান পরিচালক করে নিয়োজিত করা হয়েছে। পুলিশের এই ইউনিটটি গোয়েন্দা বিভাগ, অপারেশন বিভাগ, তদন্ত বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ এবং লজিস্টিক বিভাগে বিভক্ত দায়িক্ত পালন করছে। পিবিআই: দিন যতো গড়াচ্ছে অপরাধের ধরণও বদলাচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মামলা বাড়লেও পুলিশ বাহিনীর সদস্য তেমনভাবে বাড়ছে না। ফলে অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার ক্লু বের করা কঠিন হয় পড়ছে অনেক সময়। এসব দিক বিবেচনা করেই ঘটনার অধিকতর অনুসন্ধাণে ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় পুলিশের নতুন ইউনিট পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুরো (পিবিআই)। এই ইউনিটে একজনকে উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) প্রধান করা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৯৭০ জন। ট্যুরিস্ট পুলিশ: একটি বেসরকারী হিসেব মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক ঘুরতে আসেন। তাদের নিরাপত্তা ও পর্যটন খাতের সুরক্ষায় ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে কাজ করছে সাত শতাধিক পুলিশ সদস্য। পুলিশের এ ইউনিট কাজ করে পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে। প্রথম অবস্থায় একজন ডিআইজি ও এডিশনাল ডিআইজি, চার এসপি, আট এডিশনাল এসপি ও ১১ সহকারী পুলিশ সুপার, ২১ ইন্সপেক্টরসহ ৬৯৯ সদস্যের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের। এয়ারপোর্ট আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এএপি): আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি বিশেষায়িত ইউনিট বিমানবন্দর সশস্ত্র পুলিশ (এএপি)। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য বিমানবন্দর এলাকার মধ্যে পুলিশের এই ইউনিটটি কাজ করে থাকে। ২০১১ সালের ১ জুন পুলিশের এই ইউনিটটির যাত্রা শুরু হয়। নারী সদস্যসহ এএপির মোট সদস্য সংখ্যা একশ। কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটি): ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধিনে যাত্রা শুরু করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট। সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাবাদে অর্থায়ন, সন্ত্রাসবাদে সহায়ক অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষই এই ইউনিটের যাত্রা। যাত্রার পরই থেকেই জঙ্গি নির্মূলে বিভিন্ন অভিযানে প্রশংসা অর্জন করতে শুরু করেছে বাহিনীটি। এ ইউনিটে উপ মহা-পরিদর্শককে (ডিআইজি) প্রধান করা হয়েছে একজনকে। এছাড়াও ছয় শতাধিক সদস্য নিয়ে কাজ করছে ইউনিটটি। পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, পুলিশের নব গঠিত ইউনিটগুলোর কারণে দ্রুততম সময়ে দেশের বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে লোকবল সংকট দূর করা গেলে এই ইউনিটগুলোর কাছ থেকে আরো বেশী সাফল্য পাওয়া যাবে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে সিটি খুব ভালো কাজ করছে। আর এ কারণেই দেশে জঙ্গিবাদ সমস্যা এখন নেই বললেই চলে। তাদের পাশাপাশি নৌ পথে নৌ-পুলিশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে শিল্প পুলিশের তত্পরতার কারণে শ্রমিক অসন্তষের সমস্যা এখন নেই বললেই চলে। বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপি সহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্থানের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত বাতিল ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্থানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙ্গালীদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌছে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাস জুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং পাকিস্থানী সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ পুলিশ নামে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইন শৃঙ্খরা রক্ষা, জনগনের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভুমিকা পালন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাডিশনাল চরিত্রে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। গত এক দশকে জঙ্গীবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। |