শিরোনাম: |
বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে
|
![]() বেসরকারিখাতে ঋণ বিতরণের এমন চিত্রে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, ঋণ নেয়া হয় সাধারণত বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে। বিনিয়োগ হলে অর্থনীতির জন্য সুখবর। কিন্ত বিনিয়োগ না হয়ে ঋণের অর্থ যদি পাচার হয়ে যায় তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। যা ২০১৬ সালের একই সময়ে ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের শুরুতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে (জুন, ২০১৭) ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর ডিসেম্বর, ২০১৭ পর্যন্ত এ খাতে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয় ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের এই প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলা হলেও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগই (বন্যা, হাওড় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ) মূল্যস্ফীতির মূল কারণ। এছাড়া আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত কমছে এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বাড়বে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে, বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (বিওজিসিএল) স্থাপনে বসুন্ধরা গ্রুপ ৬ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। এই ঋণ বিতরণ হলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। এই ধরনের ঋণ বিতরণের হার আরও বাড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদে শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ঋণ বিতরণ বাড়লে বিনিয়োগ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। বর্তমান সরকার যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে, বিশেষ করে অবকাঠামোর উন্নয়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা দৃশ্যমান হলে বিনিয়োগ বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। ঋণ বিতরণ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের বাইরে অন্য কোনো আশঙ্কা থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগের চেয়ে অনেক সতর্ক। তবে অনেকে ঋণ নেয় ব্যবসার জন্য। কিন্তু গ্যাস সংকট কিংবা অন্য কোনো কারণে তার ব্যবসা সফল নাও হতে পারে। তখন তারা খেলাপি হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে প্রকৃত কারণ খুঁজে ঋণদাতা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু যারা খেলাপি হওয়ার পূর্ব পরিকল্পনায় ঋণ নেয়, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ বড় মাপের খেলাপি যারা তারা মূলত ইচ্ছা করেই খেলাপি হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, অর্থ ঋণ আদালতের মত ব্যাংক খাতেও খেলাপিদের বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে আইন করা উচিত। আর এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এসব অন্যায় কমে আসবে। বেসরকারি খাতে ঋণের অর্থেনর স্থায়ী গন্তব্য খুঁজে বের করা দরকার বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর ঋণ বিতরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে। তবে দেখতে হবে, এই ঋণগুলো কোথায় ব্যবহার হচ্ছে? শুধু ব্যবসায় ব্যবহার হচ্ছে না কি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এর পেছনে যুক্তি দেখিয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণের অর্থ বিনিয়োগ হলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো। কিন্তু বিনিয়োগকে জিডিপির আনুপাতিক হারে দেখলে দেখা যায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে রয়ে গেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং পরের দুই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে ২০১৫ সালের শুরুতে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় বেসরকারি খাত আবার চাঙ্গা হতে থাকে। এ সময় ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ থাকলেও ডিসেম্বরে তা দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশে। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং মার্চে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। |