শিরোনাম: |
ইছামতী নদী রক্ষায় ব্যতিক্রম উদ্যোগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো নবাবগঞ্জবাসী
|
![]() মোঃ তানভীর শেখ : ইছামতী নদী শুধু একটি নদী নয়, এটি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ এলাকার প্রাণ। আজ সেই প্রাণ অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে। ইছামতী নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন নবাবগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এলাকাবাসী। সংগঠনগুলো হচ্ছে ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটি, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম ও নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি। সংগঠন তিনটি এলাকাবাসীর যৌথ সহযোগিতায় ইছামতি নদীর ১০টি পয়েন্টে কচুরিপানা অপসারণ ও সবজি চাষ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ইছামতি নদীর খানেপুর অরামনগর পয়েন্টে কচুরিপানা অপসারণ ও সবজি চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ইছামতি নদীর বড় গোল্লা পয়েন্টের কচুরিপানা অপসারণের কাজ এবং শুরু করেছে এলাকাবাসী। এতে বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা অংশ নিচ্ছে। এ বিষয় ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপসারণ কমিটির উদ্যোক্তা মোঃ রাশিম মোল্লা দৈনিক বর্তমানকে বলেন, শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে আমাদেরকে কিছু কাজ করা উচিত। সে কারণেই মূলত আমরা এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদেরকে সংগঠিত করে ইছামতি নদীর কচুরিপানা অপারেশনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমি মনে করি যার যার এলাকার নদীর কচুরিপানার যদি অপসারণের উদ্যোগ নেয় তাহলে খুব সহজেই নদীর পরিষ্কার রাখা সম্ভব । একই সঙ্গে অপসারিত কচুরিপানার উপরে যদি সবজি চাষের কার্যক্রম করা যায় তাহলে তারাও অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন। আবার দেশের অর্থনীতি ও চাঙ্গা হবে। তিনি মৃতপ্রায় ইছামতি নদীকে বাঁচাতে সোনাবাজু-কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ ও কার্তিকপুরে নদীর মূল অংশে প্রয়োজনীয় স্লুইচগেট স্থাপনের দাবি জানান। একই সঙ্গে তাদের কার্যক্রমকে তারান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান । সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ জানায়, তারা নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াখালি বেরিবাধ থেকে বান্দুরা পর্যন্ত এবং দোহার উপজেলার কার্তিকপুর থেকে বান্দুরা পর্যন্ত ইছামতি নদীর ১০ টি পয়েন্টের কচুরিপানা অপসারণ করবে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে তুইতাল, দাউদপুর, বারুয়াখালী, শিকাড়ি পাড়া, জয় কৃষ্ণপুর কার্তিকপুর, বান্দুরা, দেওতলা গোল্লা ইত্যাদি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক বর্তমানকে বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা পুরো ইচ্ছামতি নদী পরিষ্কার করতে পারবো না,কিন্তু আমরা একটি পথ দেখিয়ে যাচ্ছি। সম্মিলিতভাবে যদি চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু অনায়াসেই কচুরিপানার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবো আমরা। আর সেজন্য নদীপাড় ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। বিত্তবানদেরকে এমন কাজ কাজ যারা করবেন তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করি। এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আবুল হোসেন খন্দকার বলেন, মা-বাবা যেমন আমাদেরকে আদর সোহাগ করে বড় করে, নদীও ঠিক তেমনি আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে বড় করে। ইছামতি নদীকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের নিজেদের আরো অনেক সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। ইছামতি নদীর উৎপত্তিস্থল কাশিয়াখালী ও কার্তিকপুর অংশে দ্রুত প্রয়োজনীয় সূর্যের স্থাপনের দাবি জানান তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে তিনটি সংগঠন কচুরিপানা অপসারণের কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা অপসারণের একটি পথ দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয় কচুরা আপনাকে কাজে লাগিয়ে সবজি চাষেরও পথ দেখিয়েছেন তারা। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত তাদের প্রতি সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দেয়া। আর এটি করা গেলে এর কার্যক্রম আরো বেগবান। এ বিষয় বারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন খান বলেন, ইছামতি নদী থেকে কচুরিপানা সমস্যা সমাধানে ব্যপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিদিন ৪ জন শ্রমিক নদীর কচুরিপানা অপসারণ করছে। পর্যায়ক্রমে নদীর ১০ পয়েন্টে কচুরিপানা অপসারণ এবং নদীর পাড়ে স্তুপকৃত কচুরিপানায় সবজি চাষের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বিষয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত দৈনিক বর্তমানকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে একটি পরিকল্পনা করতেছি ইছামতী নদী পুনরুদ্ধারের জন্য। এ বিষয় একটি প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে যদি পজেটিভ আসে তাহলে আমরা এ বিষয় প্রজেক্ট নিবো। ভবিষ্যতে যাতে পদ্মা নদীর সাথে ইছামতীর সংযোগ স্থাপন হয় এবং সারা বছর যাতে ইছামতী নদীতে পানির প্রবাহ থাকে। বর্তমানে ১০ পয়েন্টে সেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে কচুরিপানা অপসারণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয় অবগত নই তবে যদি এমন উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। |