শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
কানপুরে উদ্ধার অভিযান দ্বিতীয় দিনে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪২
Published : Monday, 21 November, 2016 at 6:00 AM, Count : 496

বর্তমান ডেস্ক : ভারতের কানপুরে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযান গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪২জনে দাঁড়িয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহত ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের খোঁজে রোববার রাতভর বগিগুলোর মধ্যে তল্লাশি চালান উদ্ধারকর্মীরা। অনেক বগি দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ায় এ কাজে তাদের মেটাল কাটার, টর্চ ও ক্রেনসহ নানা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

শনিবার রাত ৩টার দিকে কানপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে পুখরাইয়া এলাকায় ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেসের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেলে তালগোল পাকিয়ে যায়।

হিন্দুর খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১৪২ জনের লাশ পাওয়া গেছে, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক যাত্রী।

উত্তর প্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালক জাবেদ আহমেদ জানান, নিহতদের মধ্যে ৮০ জনকে শনাক্ত করা গেছে, যাদের মধ্যে অন্তত ১৩ জন নারী ও শিশু।

এ দুর্ঘটনা যখন ঘটে, অধিকাংশ যাত্রী তখন গভীর ঘুমে। ইঞ্জিনের পেছনে থাকা দুটি স্লিপার কোচ পরস্পরের সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কায় লোহার পিণ্ডের আকার নেয়। পরের দুটি কোট ছিটকে যায় দূরে ক্ষেতের মধ্যে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরেকটি এসি কোচ।

এনডিটিভি জানিয়েছে, ইঞ্জিনের পেছনে থাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি বগির মধ্যে একটি প্রায় চ্যাপ্টা হয়ে আরেকটির নিচে আটকে গেছে। ফলে ভেতরে ঢুকে এখনও তল্লাশি চালাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা।

ভেতরে ঢোকা সম্ভব হলে লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উত্তর প্রদেশ পুলিশের পরিচালক দলজিত্ চৌধুরী।

২৪ ঘণ্টার বেশি সময় উদ্ধারকাজ চলার পর সোমবার সকালে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় আহত যাত্রীদের নাম প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে ৫৮ জনের অবস্থা গুরুতর

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও রেল লাইনের ত্রুটির কারণে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে থাকতে পারে বলে রেল কর্মকর্তাদের ধারণা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ এ বগিগুলো আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। আর রেল কর্মকর্তারা ট্রেনটিতে ১২০০ যাত্রী থাকার কথা বললেও আরও অন্তত ৫০০ যাত্রী বিনা টিকিটে ওই ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ দুর্ঘটনায় যারা বেঁচে গেছেন, নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে বর্ণনা করেছেন তারা।

ইয়াকুব আহমেদ নামে একজন হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ঘুম ভেঙে ভয়াবহ ঝাঁকুনি টের পাই। কর্কশ শব্দ করে ট্রেন থেমে যায়। আমি মানুষের ভিড়ের নিচে চাপা পড়ে যাই- সবাই সাহায্য চেয়ে চিত্কার করছিল।

বেঁচে যাওয়া আরেক যাত্রী কৃষ্ণ কেশব বিবিসিকে বলেন, ঝাকি খেয়ে জেগে উঠি, দেখি বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। খুব ভয় পেয়েছিলাম।

ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ইতোমধ্যে বলেছেন, এ দুর্ঘটনার জন?্য যারাই দায়ী হোক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

নিহতদের পরিবার ও গুরুতর আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিবিসি লিখেছে, কানপুর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন, যে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রেন যাতায়াত করে। সোয়াশ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিস্তৃত ট্রেন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। কিন্তু যন্ত্রপাতি পুরনো হওয়ায় প্রায়ই সেখানে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে।

ভারত সরকার এ বছরের শুরুতে রেল লাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ বগি সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল। এর আগে গত বছর এ খাতের আধুনিকায়ন ও বিস্তৃতির জন্য পাঁচ বছরে ১৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com