রফিকুল ইসলাম
রতন : ইতিহাসের পাতায়
কালো অক্ষরে
উত্কীর্ণ বেদনাবিধুর
শোকাবহ দিন
১৪ ডিসেম্বর। এ
দিনটিতে বাঙালি
জাতি তাদের
মেধা ও
মননের শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের হারিয়েছে। আমরা
হারিয়েছি জাতির
পথপ্রদর্শক শিক্ষক,
বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক,
শিল্পী, সাহিত্যিক,
চিকিত্সক, সাংষ্কৃতিক
ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবক,
আইনজীবী ও
প্রকৌশলীসহ অসংখ্য
কৃতী সন্তানকে। সেই
স্বজন হারানো
বিয়োগ-ব্যথা
বুকে ধারণ
করে দুঃসহ
কষ্ট নিয়ে
তাদের পরবর্তী
প্রজন্ম বাংলার
লাল-সবুজের
পতাকার মাঝে
আজও তাদের
খুঁজে বেড়ান। ওইসব
ঘাতক দালালদের
বিচারের দাবিতে
এত দিন
সমগ্র জাতির
সঙ্গে তারা
সরব বা
নীরব দাবি
জানালেও বিগত
তিন দশক
তা ছিল
রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং
পাকিস্তানি ভাবধারার
বিগত দিনের
তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা
ও রাজাকার-ঘাতক-দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা সরকারগুলো
যা করেনি,
সেই দুরূহ
ও ঝুঁকিপূর্ণ
কাজটি সম্পন্ন
করে ভূয়সী
প্রশংসা কুড়িয়েছেন
জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু কন্যা
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা।
স্বাধীনতার চার
দশক পরে
হলেও শেষ
পর্যন্ত অত্যন্ত
স্বচ্ছ ও
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন
বিচারিক আদালতের
রায়ে ওইসব
স্বাধীনতাবিরোধী খুনি,
জাতির শত্রু,
পাকিস্তানের দালাল
নরপিশাচদের ফাঁসি
কার্যকর হওয়ায়
বুকের চাপা
কষ্ট কিছুটা
হলেও দূর
হয়েছে।
কলঙ্কমুক্ত জাতিকে মেধাশূন্য করার
লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী
নিধনের এই
পরিকল্পনা করে
পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে
পাকিস্তানের এ
দেশীয় দোসর
আল-বদর,
আল-শামস,
রাজাকারদের সাহায্যে
এই পরিকল্পনা
বাস্তবায়ন করে
পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস ও
বিভিন্নস্থান থেকে
শিক্ষক, সাংবাদিক,
চিকিত্সক, সংস্কৃতিকর্মীসহ
বিভিন্ন পেশার
বরেণ্য ব্যক্তিদের
অপহরণ করা
হয়।
পরে রায়েরবাজার
ও মিরপুরে
তাদের ব্রাশফায়ার
করে, বেয়নেট
দিয়ে খুঁচিয়ে,
অনেককে লাইন
ধরিয়ে গুলি
করে নির্মমভাবে
হত্যা করা
হয়।
এ দুটি
স্থান এখন
বধ্যভূমি হিসেবে
সংরক্ষিত।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ
লগ্নে ১০
থেকে ১৪
ডিসেম্বরের মধ্যে
আল-বদর
বাহিনী আরও
অনেক বুদ্ধিজীবীকে
ধরে নিয়ে
মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল
ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে
স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের
পর রায়েরবাজার
বধ্যভূমি ও
মিরপুর কবরস্থানে
নিয়ে হত্যা
করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের
মধ্যে রয়েছেন;
অধ্যাপক মুনীর
চৌধুরী, ডা.
আলীম চৌধুরী,
অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান,
ড. ফজলে
রাব্বী, অধ্যাপক
জিসি দেব,
জ্যোতির্ময় গুহ
ঠাকুরতা, অধ্যাপক
সন্তোষ ভট্টাচার্য,
মোফাজ্জল হায়দার
চৌধুরী, সাংবাদিক
সিরাজ উদ্দিন
হোসেন, শহীদুল্লাহ
কায়সার, খন্দকার
আবু তাহের,
নিজামউদ্দিন আহমেদ,
এসএ মান্নান
(লাডু ভাই),
এএনএম গোলাম
মোস্তফা, সৈয়দ
নাজমুল হক,
সেলিনা পারভিনসহ
আরও অনেকে। এছাড়া
আরও অনেক
বুদ্ধিজীবীকে তুলে
নিয়ে যায়
হানাদাররা।
যাদের অনেকের
খোঁজ আজও
জাতি পায়নি। পুরো
জাতি আজ
শ্রদ্ধাবনত চিত্তে
স্মরণ করবে
দেশের সেসব
সূর্যসন্তানকে।
যাদের আত্মত্যাগে
আমরা পেয়েছি
স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশ, স্বাধীন
মানচিত্র আর
লাল-সবুজের
পতাকা।
প্রতি বছরের
মতো এবারও
মিরপুরের শহীদ
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ,
রায়েরবাজার বধ্যভূমি