বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ফের চাঙ্গা হচ্ছে শেয়ারবাজার
Published : Monday, 23 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 744

বর্তমান প্রতিবেদক : অর্ধযুগেরও বেশি সময় স্থবির থাকার পর ফের চাঙ্গা হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। ইতোমধ্যে এই বাজারে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে সূচক। বাড়ছে লেনদেনও। বাজারে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডিএসইসহ বিভিন্ন মহলের ইতিবাচক নানা পদক্ষেপের ফলে বাজার আস্থায় ফিরেছে।’
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে রকিবুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজার সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। একদম সঠিক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে এই বাজার।’ দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর শেয়ারবাজার ভালো হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে এই বাজার আরও ভালো থাকবে। এই বাজারে কোনো বিনিয়োগকারীর কোনো ধরনের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে যারা অল্প টাকার মালিক, তারা যেন এই বাজারে ভুল করেও না আসেন।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এই পরিচালক আরও বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ করে, কারও কাছ থেকে ধার করে, রেমিট্যান্সের টাকা বা বউয়ের গয়না বা জমি বিক্রি করে কেউ এই বাজারে বিনিয়োগ করবেন না। কারণ, এটি শতভাগ ঝুঁকির জায়গা, কান্না-কাটির  জায়গা নয়। এখানে শুধু তারাই আসবেন, যাদের উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর থেকে গত ৬ বছর অস্বস্তিতে ছিলেন বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউসের মালিক, এমনকি শেয়ারবাজারে চাকরিজীবীরাও।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সোমবার দেশের উভয় পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের ব্যাপক উত্থানে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে দুই হাজার ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এটি গত সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন ডিএসইতে দুই হাজার ১২২ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
গতকাল ডিএসইতে আগের দিনের তুলনায় ৫১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৬৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। ডিএসইতে মোট লেনদেনে অংশ নেয় ৩২৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির শেয়ার দর।
এদিকে ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৭ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে দুই হাজার ২৪ পয়েন্টে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ সিএসইতে ১১৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৬৯ পয়েন্টে। সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২৬৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১১৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির।
এ প্রসঙ্গে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বাজারের জন্য একটা ভালো খবর।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে নিয়মনীতি কঠিন হয়েছে। অনেক ত্রুটিও সংশোধন করা হয়েছে। ফলে আগের মতো হঠাত্ আর এই বাজার পড়বে না।’ তিনি মনে করেন, ‘এখনও অস্বাভাবিক পর্যায়ে যায়নি এই বাজার। তবে এই বাজারে বিনিয়োগ করতে হলে সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অতিতের অভিজ্ঞতা থেকেই বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া জরুরি।’
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দেড় মাসে বাজারে মূলধন বেড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ আগের এক বছরে বাজার মূলধন বেড়েছে মাত্র ৯ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে,  ২০১০ সালে হঠাত্ শেয়ারবাজারে ধস নামে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ১০ লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারী। শুধু তাই নয়, গত ৬ বছরের আইনকানুন, বিধিবিধানসহ নানা ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিচারে গঠন করা হয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পুনর্গঠিত হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এসব পরিবর্তনের ফলে এই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আভাস মিলছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে দেশের চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি পুঁজিবাজারে সক্রিয় হয়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যা অনুসারে ২০১০ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূলে না থাকার কারণে অনেকেই শেয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া শেয়ার বাজারে  বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।’
এদিকে রোববার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২০ সালের মধ্যে দেশে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে।  ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে। যেখান থেকে আমরা বিভিন্ন বিনিয়োগে আগ্রহ নিতে পারব।’ অর্থমন্ত্রী মনে করেন, ‘আগামী ৩ বছরের মধ্যেই পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com