মঙ্গলবার ৬ মে ২০২৫ ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
আইএস দমনে যুদ্ধের প্রস্তুতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের
Published : Monday, 30 January, 2017 at 6:00 AM, Count : 806

বর্তমান ডেস্ক : গত ক’দিন ধরে সুর চড়িয়েছেন ধাপে ধাপে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাত দিন পূর্ণ করতে না করতেই সপ্তমে পৌঁছে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আস্তিন থেকে বের করে আনলেন চরম তাসটি। যে যুদ্ধে ট্রাম্পে প্রধান প্রতিপক্ষ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আজ একটি নয়া নির্দেশে সই করেছেন ট্রাম্প। তাতে মার্কিন সেনাকে বলা হয়েছে, কী ভাবে আইএসকে পরাস্ত করা যায়, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা নিয়ে একটি সুসংহত রণকৌশল তৈরি করতে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে সেটি জমা দিতে হবে। তাত্পর্যপূর্ণ হলো, আন্তর্জাতিক আইন মানতে গিয়ে যদি মার্কিন আইন বা রণনীতিকে কিছুটা পিছু হটতে হয়, সেই বাধা দূর করার সুপারিশও রাখা হয়েছে ওই নির্দেশে।
অর্থাত্ বার্তা পরিষ্কার ‘আজ বাদে কাল যুদ্ধ। তৈরি হও সেনা!’
আজই তার জমানায় প্রথম বার ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তাতে সন্দেহভাজন ৪১ জন আল-কায়দা জঙ্গির পাশাপাশি মহিলা ও শিশু-সহ ১৬ জন সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মারা গিয়েছেন এক মার্কিন কম্যান্ডোও। যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আল-কায়দা নয়, তার আসল নিশানা আইএস। আজকের নির্দেশে তিনি বলেছেন, আইএসকে নিয়ে আমেরিকার চিন্তাটা শুধু ইসলামি জঙ্গিবাদের জন্য নয়। তারাই সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও আগ্রাসী জঙ্গিদের মধ্যে পড়ে। যারা নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করতে চায়। যারা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালায়। এক দিকে মার্কিনদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়ায়। আবার উপদ্রব চালায় আমেরিকার ‘বন্ধুদের’ উপরেও। ট্রাম্প তাই মনে করছেন, আইএসকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়ার অর্থ বিপদ বাড়তে দেয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাফ কথা, ‘ওদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হতে পারে না।’
মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলি, স্টিফেন সটলফ, স্বেচ্ছাসেবী পিটার কাসিগ-দের মাথা কেটে খুন করেছিল আইএস। তাদের হাতে বন্দি থাকার সময়েই মৃত্যু হয় মানবাধিকার কর্মী যুবতী কায়ালা মুলারের। তা ছাড়া, ২০১৫-র ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনো কিংবা ২০১৬-র জুনে ফ্লোরিডার অর্ল্যান্ডো প্রতিটি হামলাতেই প্রমাণিত হয়েছে আইএস-যোগ। গত বৃহস্পতিবার একটি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে সেই সব হামলার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ওরা (আইএস জঙ্গিরা) হল কয়েকটা নোংরা, অসুস্থ ইঁদুর। যারা গির্জায় বা সুপার মার্কেটে বোমা ফাটিয়ে লোক মারে। ওদের সঙ্গে লড়াইটা শক্ত।’ কেন? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপমা টেনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘জার্মানি বা জাপানের সেনাবাহিনী নিজেদের পোশাক পরে লড়াই করে। আমাদের শত্রুদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। তাই লড়াইটা কঠিন। কিন্তু আমরা জিতবই।’ আইএসবিরোধী যুদ্ধের সুসংহত পরিকল্পনায় কী কী থাকতে হবে, তার একটা মোটামুটি আভাস দেয়া হয়েছে ওই নির্দেশে। যেমন বলা হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ ও সাইবার অভিযানে বিশেষ জোর দিয়ে এবং জনমত গড়ে তুলে আইএসকে একঘরে করে দিতে হবে। আইএস ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে লড়তে নতুন নতুন জোটসঙ্গী খুঁজতে হবে। চাঁদা থেকে শুরু করে চোরাই প্রত্নসামগ্রী বিক্রি, মানুষ পাচার- নানাভাবে টাকা আসে আইএসের হাতে। সেই টাকার জোগান বন্ধ করতে হবে। তবে কূটনীতিকদের একাংশের আশঙ্কা, শুধু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ট্রাম্প নিরস্ত হবেন- এমন ভাবার কারণ নেই। শুক্রবার পেন্টাগনে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের যে নির্দেশে তিনি সই করেছেন, তাতে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়ানোর কথা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব। এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, নিকটতম ‘দুই প্রতিদ্বন্দ্ব্বী’র বিরুদ্ধে অভিযান কীভাবে চালানো যায়, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেয়া হয়েছে নয়া প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিসকে। রয়েছে ‘আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জারের’ কথাও। বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, পরমাণু শক্তিধর চিন ও রাশিয়াকে বোঝাতে ওই ‘নিকটতম দুই’ লব্জটাই ব্যবহার করেন মার্কিন কর্তারা। আর ‘আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জার’? ইরান। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে, চিনা সেনার ওয়েবসাইটে এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্পের আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধটা ক্রমশ স্লোগান থেকে বাস্তব হয়ে উঠছে।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপমা টেনেছিলেন ট্রাম্প। সেনাকে তৈরি হতে বলেছেন। কিন্তু তার চোখে ‘আসল’ যুদ্ধ কোনটা? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? উত্তর নেই। আছে চর্চা, উদ্বেগ, আর অপেক্ষা।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গণমাধ্যম ভুল খবর দিচ্ছে: একটি নিরাপদ নীতি গ্রহণ করে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়া হবে বলে জানিছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলছি, এটা মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়। এমনটা বলে গণমাধ্যম মিথ্যা খবর প্রচার করছে।’ ‘এটা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে নয়, বরং সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং আমাদের দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য এটা করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মুসলিম অধ্যুষিত আরও ৪০টির বেশি দেশ রয়েছে যাদের ওপর এই আদেশের প্রভাব পড়েনি।’ ‘একস্ট্রিম ভেটিং মেজার্স’ এর কথা বলে শুক্রবার ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে মুসলিম অধ্যুষিত সাত দেশ ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের উপর ৯০ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেইসঙ্গে, আগামী চার মাস আর কোনো শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। সিরীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত।  দ্বৈত-নাগরিক এবং গ্রিনকার্ড হোল্ডাররাও (যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি) এই আদেশের আওতায় বলে জানিয়েছে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর নেতারাও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ মার্ক এয়াউত বলেন, ‘সন্ত্রাসের কোনো জাতীয়তা নেই। সন্ত্রাসের জবাব বিভেদ হতে পারে না।’ আরব লীগের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ইরান বাদে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বাকি ছয়টি দেশই আরব লীগের সদস্য।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com