শিরোনাম: |
বাগেরহাট জেলা বিএনপি
নতুন কমিটি নিয়ে সমালোচনার ঝড়
|
![]() খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলা বিএনপি সিলভার সেলিম ও আবদুস সালামের গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এখানে তাদের পরিবারের সব সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করাসহ তাদের আজ্ঞাবহ নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আপন ভাইবোন, সহোদর ভাই, স্বামী-স্ত্রী রয়েছেন। আবার ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এমন নেতাকেও এই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়েছে। আবার আরেকজন এলাকায় আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, কোনোদিন বিএনপির সাধারণ সদস্যও ছিলো না তাকেও সহ-সভাপতি পদে পদায়ন দেয়া হয়েছে। এ রকম হ-য-ব-র-ল অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাগেরহাট জেলার ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এ ধরনের কমিটিকে অনাস্থা জানিয়ে ইতোমধ্যে জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি নতুন কমিটির সহ-সভাপতি সরদার লিয়াকত আলী ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং নতুন কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুজা উদ্দিন মোল্লা সুজন পদত্যাগ করেছেন। সুজন তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন নব গঠিত বাগেরহাট জেলা বিএনপির সবাইকে অভিনন্দন। সম্মান না দিলে ক্ষতি নাই কিন্তু অসম্মান করার এখতিয়ার কাউকে দেয়া হয়নি। আমার নাম জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দেখে আমি হতবাক। যেহেতু ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অনুমোদিত তাই কিছু বলব না। আমি সদ্য গঠিত জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ঘোষিত নতুন এই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে পরিবর্তন করা হয়নি। আগের কমিটির পাহাড়সম ব্যর্থতার পরও শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেনের সুবিধার কারণে তারা এই পদগুলো আবারও বাগিয়ে নিয়েছেন। নেতাকর্মীরা জানান, বিগত আন্দোলনে ৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু এক ধরনের লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনের মাঠ থেকে সরে পড়েন। সহ-সভাপতি এছকেন্দার হোসেন ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর তিনি বিএনপিতে কখনো ফিরেছেন বলে জানেন না নেতাকর্মীরা। সহ-সভাপতি আজিয়ার রহমান বিগত ১৫-২০ বছর ধরে রাজনীতি থেকেই নিষ্ক্রিয়। সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মাসুদ রানা এর আগে কখনো বিএনপির সাধারণ সদস্য পদেও ছিলেন না। বরং ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি লাগিয়ে পুরো জেলায় ঈদ শুভেচ্ছা জানান। নেতাকর্মীরা জানান, তার বাড়ি মোল্লারহাট এলাকায় হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ হেলাল তাকে তেমন সুযোগ না দেয়ায় এখন তিনি বিএনপিতে ভিড়েছেন। তার বিরুদ্ধে এই এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাজাহানের কাছে কমিটি ঘোষণার আগেই অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু দলের অপর এক প্রভাবশালী নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের তদবিরে তাকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে বলে কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন। জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কাজী খায়রুজ্জমান শিপনের আগের কমিটির সদস্য পদে ছিলেন। সালামের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত এই নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সহ-সভাপতি শমসের আলী মোহন ও যুগ্ম সম্পাদক শেখ শাহেদ আলী রবি আপন দুই ভাই। সাংগঠনিক সম্পাদক হাদিউজ্জামন হিরো ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক কামরুন্নাহার রুনু আপন ভাই বোন। যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জেলা সভাপতি সালামের বড় ভাই সিলভার সেলিমের আপন ভায়রা। আবার শাহাদাতের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকেও জেলা বিএনপির সদস্য করা হয়েছে। তাঁতিবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান সেন্টু ও সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান হারু আপন ভাই। সালামের শ্বশুর আবদুস সালাম বিশ্বাসকে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এবং চাচা শ্বশুর টুলু বিশ্বাসকে রাখা হয়েছে সদস্য হিসেবে। আবার সভাপতি সালামের অফিসে কাজ করতেন সিরাজুল ইসলামকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি কোনোদিন বিএনপি করেছেন বলে এলাকার নেতাকর্মীরা জানেন না। সালাম যখন এলাকায় আসেন তখন তিনিও আসেন। এরকমভাবে জীবনে বিএনপির কোনো সদস্য পদে না থাকলেও ঘোষিত কমিটিতে অনেককে পদায়ন করা হয়েছে। প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ মোস্তফা জামান লিটু এর আগে কোনো পদে না থাকলেও এবার তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। নতুন কমিটি প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির একজন সম্পাদক বলেন, নতুন কমিটিতে কোনো নতুনত্ব নাই। একই পানিকে ভিন্ন পাত্রে রেখে নতুন রং দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। এ ক্ষেত্রে জন্মলগ্ন থেকে বিএনপির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের গুরুত্বহীন করে বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতাদের কাছে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। আর আগের মতোই তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপে কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন ত্যাগী-নির্যাতিত আর মূলধারার নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, জেলায় হাতেগোনা কয়েকজন ত্যাগী, দক্ষ সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম মনজুর মোশেদ স্বপনকে সাধারণ সদস্য করা হয়েছে। ২০ বছর ধরে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান খান মতিউর রহমানকে জুনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, ত্যাগী নেতা আনোয়ার পঞ্চায়েতকে গুরুত্বহীন ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের পদ দিয়ে এক ধরনের নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তাদের মতো আরো যারা বিগত দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন, করার চেষ্টা করেছেন তাদেরই কমিটিতে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জেলা বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী নেতা সুজাউদ্দিন মোল্লা বলেন, এই কমিটি তৃণমূলে মতামতের ভিত্তিতে করা হয়নি। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি এক পক্ষের কমিটি হয়েছে। যাকে আমরা পকেট কমিটি বলি। তিনি বলেন, আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তাই এক নেতার এক পদ অবলম্বন করে আমি পদত্যাগ করলেও আমার চাওয়া ছিল- কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্ব বাছাই করা হোক। আমি ওই নির্বাচনে জেলার সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য নিজের অবস্থান প্রস্তুত করেছিলাম। আবার পকেট কমিটি হলেও আমার সাংগঠনিক অবস্থানের কারণে আমাকে জেলার সহ-সাংগঠনিক পদে অন্তর্ভুক্ত করে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। একজন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাধারণ নিয়মেই জেলার সাধারণ সম্পাদক অথবা সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়ে থাকেন। কিন্তু আমি কোনো সিন্ডিকেটে বিশ্বাসী নই বলে আমাকে এই অপমান করা হয়েছে। |