শিরোনাম: |
নেপথ্যে খোকা-আব্বাসের প্রভাব
অসহায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব
|
![]() সূত্র মতে, ঢাকা মহানগরের দুই প্রভাবশালী সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং-কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যস্ত ছিলেন। ঢাকায় এককছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তার এই আধিপত্য ভেঙে দিয়ে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন মির্জা আব্বাস। ওই কমিটির সদস্য সচিব হন হাবিব উন নবী খান সোহেল। এতে মহানগরে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হন মির্জা আব্বাস। এনিয়ে আব্বাস ও সোহেলের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে রুপ নেয়। এ কারণে ৯৩ দিনের আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত হয় দলের হাইকমান্ডের কাছে। দলের আভ্যন্তরীণ এ সমস্যাকে চিহ্নিত করে ১৯ এপ্রিল রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদায়ী কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৭০ সদস্যের কমিটি দেয়া হয়েছে। একইভাবে এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তর শাখায় ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক কমিটির নেতাদের এক মাসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণার তিন মাস অতিবাহিত হলেও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি। কমিটি ঘোষণা এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে আগ্রহী নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এখন আর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন না। নেতাদের বাসা-বাড়ি কিংবা কার্যালয়েও যোগাযোগ রাখছেন না বলে জানান মহানগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, হাবিব উন নবি খান সোহেল একজন ক্যারিশমাটিক নেতা। তবে তা দলের যে কোনো অঙ্গ সংগঠনের জন্য প্রযোজ্য। মহানগর বিএনপির রাজনীতির কলা-কৌশল তিনি এখনও রপ্ত করতে পারেননি। যার কারণে তিনি মহানগর বিএনপিকে সমন্বিত করে এক প্লাটফর্মে আনতে পারেননি। তিনি তার আগের ঐতিহ্যের মতো করে শতশত নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করেন। যা অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের ক্ষেত্রে মানানসই। মহানগর বিএনপির অভিভাবক হিসেবে তিনি তার এলাকায় চেইন অব কমান্ড সৃষ্টি করবেন। তাকে ঘিরেই পরিচালিত হবে সব থানা-ওয়ার্ডের কার্যক্রম। কেন্দ্র থেকে তিনি তা মনিটর করবেন ও দিক নির্দেশনা দিবেন। কিন্তু তিনি তার পরিবর্তে শতশত নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করেন। ঘোষিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা পদকে অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করে নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন বলেও অভিযোগ নেতাকর্মীদের। সূত্র মতে, বিএনপির ঘোষিত বিভক্ত মহানগর কমিটিতে মির্জা আব্বাস বলয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উভয় কমিটিতে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যার কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি নবিউল্লাহ নবি কমিটি ঘোষণার পরপরই রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেয়ার ইঙ্গিত দেন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। আরও অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এসব বিক্ষুব্ধ নেতাদের সক্রিয় করে আবার রাজনৈতিক মাঠে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও অনেকটা বিফলে। যার কারণে কমিটি গঠনের মতো সাংগঠনিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জটিল হয়ে উঠছে ঢাকা মহানগর বিএনপির। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবি খান সোহেল বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার অসুস্থতার কারণে কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলেন। এখন তিনি দেশে ফিরেছেন। যার কারণে আমরা অতি দ্রুতই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবো। নেতাকর্মী বেষ্টিত চলাফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সবসময় কর্মী নিয়ে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আগেও ছিলাম আর এখন মহানগর বিএনপির কর্মীদের ভালোলাগা আর ভালোবাসা নিয়ে চলার চেষ্টা করছি। একইঅবস্থা বিরাজ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিতেও। সংগঠনের সভাপতি এমএ কাইয়ুম মামলা জটিলতায় মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান পুরো কমিটির দেখভাল করছেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগও ইতোমধ্যে উঠেছে। সূত্রমতে, বিগত দিনে বিএনপির সরকারবিরোধী দুটি আন্দোলনেই হাসান দেশের বাইরে নিরাপদে ছিলেন। এরপরও লবিং-তদবির করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেননি। উপরোন্ত রূপনগর এলাকার জনৈক আবদুল আউয়ালকে থানা বিএনপির সভাপতি করা হবে বলে আশ্বস্থ করে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে গত ১৮ জুন মিরপুর এলাকার জনৈক সিনেমা ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও আর্থিক সুবিধা নেয়া হয় আহসান উল্লাহ হাসান। আবার ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর কমিটির অধিকাংশ সদস্যই সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর কমিটিতে। এ বিষয়ে জানার জন্য আহসান উল্লাহ হাসানের মোবাইলে কল করলেও তিনি কেটে দেন। মহানগর উত্তর কমিটির একজন নেতার কাছে কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কমিটির বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ বলতে পারবেন। আমরা বলতে পারবো না। যে নেতা বিএনপির কার্যালয় মাসিক ভাড়ায় ব্যবসা করতে পারেন, সেই নেতৃত্ব বিএনপিকেও ভাড়া দিতে পারেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। |