শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ রোধে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করুন
Published : Monday, 28 August, 2017 at 6:00 AM, Count : 889

মো. আলতাফ হোসেন : ক’দিন পরেই ঈদুুল আজহা। আর এ দিনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পশু কোরবানি। এ সময় ঢাকাসহ সারাদেশে লাখ লাখ পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি বছরই সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে ঢাকা মহানগরীসহ সর্বত্র কোরবানির পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়। কোরবানি করতে গিয়ে অতিরিক্ত আবর্জনার সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমন পশু জবাইয়ের পর রক্ত নাড়ি-ভুঁড়ি ইত্যাদি বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে সেগুলো পচে বিশ্রি রকমের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে করে জনমনে একটা অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কাক, কুকুর-বেড়াল এসব আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবেশ দূষিত করে। যার ফলে নানা রকম রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উত্সব। এ উত্সবে পশু কোরবানিকরণে পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার বিয়ষটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই দেশের কোনো নগরীর রাস্তা-ঘাট বা উম্মুক্ত খোলা স্থানে যেখানে পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে পশু জবাই থেকে  সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
মক্কাসহ আরও বেশ কিছু স্থানে কোরবানি ও পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পশু কোরবানি করা হয়। এর ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানো, রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটা, পশুর চামড়া বিনষ্ট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। তবে আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের যা করতে হবে:  পশু জবাই করার স্থানটি আগেই একটু পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে করে পশু জবাইয়ের পর রক্ত মলমূত্র পরিষ্কার করা সহজ হয়। পশু জবাইয়ের পর রক্ত কিছুতেই জমাট বাঁধতে দেয়া যাবে না। কেননা রক্ত জমাট বেঁধে গেলে সে রক্ত পরিষ্কার করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তাই পশু জবায়ের পরপরই প্রচুর পানি ঢালতে হবে এবং পানি ঢালার সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত পরিষ্কার করেই নিতে হবে।
যেসব  এলাকা পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের বাইরে অবস্থিত সেসব এলাকার যে স্থানে কোরবানি করা হয় তার কাছাকাছি স্থানে ছোট একটি গর্ত করে নিতে হবে। পশু জবায়ের পর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য ওই গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিতে হবে। যেসব এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সেসব এলাকায় পশু জবাইয়ের পর রক্তগুলোতে প্রচুর পানি ঢেলে ড্রেনের মধ্যে ফেলতে হবে এবং পশুর অন্যান্য বর্জ্যগুলো সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
যত্রতত্র খোলা জায়গায় কখনো পশুর বর্জ্য ফেলা যাবে না। যত্রতত্র পশু কোরবানি না করে পরিষ্কার স্থানে এবং যেখানে ড্রেন লাইন সংযুক্ত আছে বা কাছাকাছি আছে এমন স্থানে পশু কোরবানি করতে হবে। এতে করে পশু জবাইয়ের পর রক্ত পরিষ্কার করা সহজ হবে। সময়মতো সিটি করপোরেশনে লোকজন পশু বর্জ্য অপসারণ করতে না এলে সিটি করপোরেশন অফিসে গিয়ে বা ফোন করে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। সেই সঙ্গে আবর্জনা পরিষ্কারের যতটুকু সম্ভব সিটি করপোরেশনকে সাহায্য করতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় কসাইখানায় পশু কোরবানি করা। কিন্তু সবাইকে কসাইখানায় গিয়ে পশু কোরবানি করা সম্ভব নয়। তাই পশু জবাইয়ের সময় বিষয়গুলো নজর দিতে হবে। বিপুলসংখ্যক পশুর বর্জ্য নিষ্কাশন যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। একটু খেয়াল আর সচেতনতায় পারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
ঢাকায় কোরবানির জন্য কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ঢাকাবাসীর উচিত হবে এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা এবং প্রথমবারের মতো কার্যকর হতে যাওয়া এই ব্যবস্থাকে সফল করে তোলা। বিক্ষিপ্তভাবে পশু কোরবানি না দিয়ে সবাইকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করে পশুর বর্জ্য পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় অপসারণ করতে হবে। স্থানটি খোলামেলা ও আবাসিক এলাকা থেকে দূরে রাস্তা-সংলগ্ন হলে কাজটি সহজ হবে। সরকারের উচিত পর্যাক্রমে একটি সুস্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করে সরকারি, বেসরকারি, সামরিক, আধাসামরিক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সব প্রতিষ্ঠানে সুইপার পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বর্জ্য অপসারণ, নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি আমাদের অপসারিত বর্জ্যকে কল্যাণমুখী কাজে লাগানো উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে।
সাধারণত বসতবাড়ি থেকে কোরবানির জায়গাটা দূরে হলে ভালো হয়। আর কোরবানির পশুর  যাবতীয় বর্জ্য গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেললে তা আর পরিবেশ দূষণ করতে পারবে না। তাই কোরবানি দিতে গিয়ে পরিবেশ ও মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কোরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয় তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে তেমিন অন্য দিকে জবাই পরবর্তী উচ্ছিষ্টাংশগুলো সম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। কারণ কোরবানির পশুর রক্তে খুব উত্কৃষ্ট মানের সসেজ তৈরি করা সম্ভব, যা উন্নত অনেক দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পশুর ফেলে দেয়া নাড়ি-ভুঁড়ি থেকে মানুষের খাদ্য, পাশাপাশি উত্কৃষ্টমানের মাছের খাদ্য বা পশু খাদ্য তৈরি করা সম্ভব। একইভাবে পশুর হাড় গুঁড়া করে পশু খাদ্য বা উত্কৃষ্ট মানের সার তৈরি করা যায়। বর্জ্যকে এভাবে ব্যবস্থাপনায় আনলে নগর দূষণমুক্ত থাকবে, জনস্থাস্থ্য বিঘ্নিত হবে না। নির্ধারিত স্থানে কোরবানির ব্যবস্থা করলে চামড়া ছাড়ানোর অভিজ্ঞ লোকের সমাবেশ করাও অনেক সহজ হবে এবং সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো হলে এর মূল্য বেড়ে যাবে।
কোরবানির পশুর গোবর বা অন্যান্য উচ্ছিষ্টের একটি বড় অংশ যদি খোলা জায়গায় বা ড্রেনে ফেলা হয় তাহলে আশপাশে প্রকট দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং অনেক ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে রাস্তায় ড্রেনের ময়লা উপচে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াবে। নির্ধারিত পরিচ্ছন্ন জায়গায় কোরবানি দিলে মাংসে আবর্জনা ও জীবাণু মিশ্রণের সম্ভাবনা কম থাকে এবং মানসম্পন্ন মাংস পাওয়া যাবে। সব এলাকায় তাদের অস্থায়ী নির্ধারিত জায়গা তৈরি করতে হবে, যেন কোরবানির পশু জবাইয়ের পরে উচ্ছিষ্ট রক্ত, হাড়, চামড়া, গোবর, নাড়ি-ভুঁড়ি আলাদা আলাদাভাবে সংগ্রহ ও তা যথাযথ সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হয়।
লেখক: চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব মানিকগঞ্জ



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com