শিরোনাম: |
সম্ভাবনার মধ্যেও শঙ্কার কালো মেঘ!
|
![]() ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বহু উন্নয়ন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপসহ প্রভৃতি কর্মসূচি বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এতে সব আশাজনক সুসংবাদের মধ্যে এমনি একটি খবর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় গুরুত্বসহ প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি হচ্ছে, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে চলেছে ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশের বহু কাঙ্ক্ষিত পথে। বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা। বৈশ্বিক ক্ষুধা মুক্তির সূচকে ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সামনের সারিতে অবস্থান বাংলাদেশে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক নানা ফোরাম থেকে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রার অনেক স্বীকৃতিও মিলেছে। সর্বশেষ স্বীকৃতিটি এসেছে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) গত ১২ অক্টোবর গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০১৭ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। এতে আগের বছরের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ৮৮তম। একই তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০০তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১০৬তম স্থানে। যারা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা ছিলেন, তারা সহজেই পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্যপূর্ণ অবস্থানের একটি চিত্র মনশ্চক্ষে দেখতে পারবেন। সে সময়ের পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো তুলনাই করা যেত না। আজ সেই পাকিস্তান বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে আমাদের তুলনায় ১৮ ধাপ নিচে। একই ভাবে তারা দুর্নীতিতেও এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। পকিস্তান ইট অকার্যকর, জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আরও অনেক সূচকেই পাকিস্তান আমাদের পেছনে চলে গেছে। এটিই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে ক্ষুধামুক্তির এই সূচক নিঃসন্দেহে অগ্রগতির পথ নির্দেশ করে। জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এসব অর্জনের প্রধানতম কাণ্ডারি ও রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রিয় আপা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সত্তরের দশকে তাকালে তকালীন পূর্ব পকিস্তানের অবস্থা আর স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশ ছিল প্রকৃত অর্থেই কপর্দকহীন একটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকটা ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। বাংলাদেশ এ খন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বরং বিশ্বের বহু দেশের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। অতি নিম্ন আয়ের সেই দেশটি আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার পথও অতিনিকটে অবস্থান করেছে। দেশে এখন মাথাপিছু আয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ আরও অনেক অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তান নয় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে এসেছে। রফতানি আয় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা একসময় ছিল কল্পনারও অতীত। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। সব ক্ষেত্রেই আজ তাক লাগানো উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়েও সামাজিক, অনেক খাতে কোনো দেশ বা জাতির ক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনা ও সুযোগ সব সময় আসে না। যে কোনো মূল্যেই হোক অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে। একই সঙ্গে সরকারের ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে বলাই হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের শিকার হতে হয় প্রায়ই। এ বছরও বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে হওয়র অধ্যুষিত দেশের ৬ জেলা ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। এতক্ষণ দেশের সম্ভাবনা, সফলতা আর উন্নয়নের যে সুখবর তথ্য তুলে ধরা হলো। এখন আমার শঙ্কা আর আশঙ্করা তথ্যটি তুলে ধরা দরকার। তা হচ্ছে গত ২৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর আগে দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়াসহ সংলগ্ন এলকায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসছে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা। আর ২৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫ লাখ রোঙ্গাি শরণার্থী। আর নতুন করে গত দেড় মাসে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ৫ লাখ শরণার্থী। সব মিলিয়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংরাদেশে অবস্থান করাটা আপতত মনে হচ্ছে সাময়িক। অবশ্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতন, রাখাইন রাজ্যের বসবাসকারি নির্বিশেষ সব ধর্মের মানুষের উপর নির্যাতন, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, হত্যা, মা-বোনদের ধর্ষণসহ মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলায় প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আসে নাফ নদী ও বঙ্গপসাগর পাড়ি দিয়ে। এই বিপন্ন এবং বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের পরমম মমতায়, আদর স্নেহে গ্রহণ করলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই মানবিক উদ্যোগ দেশে, বিদেশে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। একই সঙ্গে এ জন্য তাকে মাদার অব হিউমিনিটি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে। আবার এ জন্য কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আমাদের শঙ্কাটা এ জন্যই যে, মানবিক বিপর্যয়ের শিকার এসব মানুষের অবস্থান যদি সাময়িক হয় তাহলে তা আমাদের জন্য কিছুটা কষ্টের ও এবং অর্থনীতি ও খাদ্যের ওপর চাপ ফেললেও তা কটিয়ে ওঠা যাবে। তবে আশঙ্কাটা এখানেই যে, আগের ৫ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে নতুন করে আসা ৫ লাখ যুক্ত হয়ে ১০ লাখে উন্নীত হয়েছে। এই ১০ লাখের সাথে যদি আরো শরণার্থী যুক্ত হয়, আর এসব শরণার্থীর যদি তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে বিলম্ব বা অনিশ্চিত হয় তা হলে তা আমাদের জন্য আশঙ্কার এবং অর্থনীতির জন্য, আমাদের খাদ্য, বাসস্থান, পরিবেশ, প্রতিবেশ, বিশেষ করে পর্যটন শহর কক্সবাজারের নৈঃস্বর্গিক, প্রাকৃতিক, সাগর উপকূলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাহাড়া, বন উজাড় হয়ে যায়, এখন হচ্ছেও। এই অবস্থা সাময়িকের পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী হয়, অনিশ্চিত হয় তাদের নিজ দেশে ফেরা তা হলে তা আমাদের দেশের পক্ষে, অর্থনীতির পক্ষে, সামাজিকভাবে এই বাড়তি বোঝার চাপ বহন করা অসম্ভব হবে। পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখা দরকার রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে এই তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাটা অনিশ্চিত্ হলে আন্তর্জাতিক দাতা, বিশ্ববাসী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ততদিন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আমাদের পাশে, তথা সরকারের পাশে থাকবে কিনা তাও অনিশ্চিত্। কারণ বিগত সময়ে দেখা গেছে এখানে আশ্রয় নেয়া ৫ লাখ রোহঙ্গাকে খাওয়ানো, রাখাসহ তাদের যাবতীয় কিছু দেখবাল করার ক্ষেত্রে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের পাশে ছিল না। এরকম পরিস্থিতি যদি অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ঘটে তালে এই পরিস্থিতিতে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অর্জনে ও অবস্থানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অব্যাহত ও অবস্থান অনিশ্চিত্, দীর্ঘায়িত হয় তখন বাংলাদেশের পক্ষে এই চাপ নেয়া সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে এসব শরণার্থীদের কারণে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা থেকে যায়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত রাখবেন এ প্রত্যাশা সবার। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে প্রদত্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ৫ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে তত্পরতা অব্যাহত রাখা জরুরি। সাংবাদিক, কলামিস্ট |