শিরোনাম: |
এশিয়া অঞ্চলের নাম বদলে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনা
জাপান সফরের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের সফর শুরু
|
![]() ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্টের (টিপিপিএ) মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে এবং উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন রূপ দিয়েছেন। এবার তার প্রশাসন এই অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণ নতুন একটা নাম দিচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগর ও এশিয়া মহাদেশ নিয়ে গঠিত বিশাল এই অঞ্চলকে দশকের পর দশক ধরে ওয়াশিংটন এশিয়া-প্যাসিফিক বা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। একইসঙ্গে এই অঞ্চলে নিজেদের অনুকূল উপস্থিতি নিশ্চিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রোববার থেকে ১২ দিনের এশিয়া সফরের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, হোয়াইট হাউস ও এমনকি ট্রাম্প নিজেই এশিয়া-প্যাসিফিক শব্দগুচ্ছটি উল্লেখ না করে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ বলতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার ট্রাম্পের এশিয়া সফর নিয়ে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফিং দেয়ার সময় শব্দগুচ্ছটি বারবার উল্লেখ করেন। তিনি গর্বের সঙ্গেই বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে কমপক্ষে ৪৩ বার ফোনালাপ করেছেন। এর আগের দিন বুধবার হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে নিজের এক মন্তব্যে ট্রাম্প শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেন। সমলোচকেরা হয়তো বলতে পারেন, এটা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি থেকে নতুন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূরত্ব সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে তার প্রশাসনের আরেক প্রচেষ্টা। কেননা ওবামা তার শাসনামলের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতির মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল এশিয়ার দিকে মনোনিবেশ করা। যেমন- ২০১১ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় ওবামা বলেছিলেন, একবিংশ শতাব্দীতে এসে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রই সর্বেসর্বা। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনও এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্ব্বী চীনকে একই বার্তা দিতে চায়। তবে সেটা অনেকটা হ্যাঁচকা টানের মতো। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহারের মধ্যদিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি ধারণার প্রচার-প্রচারণা চালাতে চায় যে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল চীন ও পূর্ব এশিয়ার টাইগার অর্থনীতির দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন প্রায়ই দুই সপ্তাহ আগে পাকিস্তান ও ভারত সফরের সময় এ বিষয়টির প্রতিই ইঙ্গিত করেছিলেন। সে সময় তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক বিস্তারের ব্যাপারে কথা বলেন। কেননা চীনের উত্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে উদ্বেগ, সেই একই উদ্বেগ ভারতেরও। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ গণতান্ত্রিক মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি। সেসময় তিনি তার বক্তব্যে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেন প্রায় ১৫ বার। তবে এটা একেবারে নতুন কোনো শব্দগুচ্ছ নয়। গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ এটার ব্যবহার করছেন এবং একইসঙ্গে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়ও এটা ব্যবহার হচ্ছে। এদিকে ইউএসএ নিউজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, নিজের দেশে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার এশিয়ায় নিজের দীর্ঘতম সফরে রওনা হয়েছেন। গত ২৫ বছরের মধ্যে এটাই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের দীর্ঘতম এশিয়া সফর। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ অঞ্চল সফর করেছিলেন, সেটিও ছিল ১২ দিনের। জাপান সফরের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় দীর্ঘ সফরে ট্রাম্প: জাপান সফরের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় দীর্ঘ সফর শুরু করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার সকালে ট্রাম্প ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে টোকিওর পশ্চিমে ফুসা সিটির ইয়োকোতা বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। খবর বিবিসির। সফরে ট্রাম্প জাপানের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে যাবেন। গত দুই যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই দীর্ঘতম সফর। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্পের এ সফর শুরু হলো। সফরে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটবদ্ধতা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এশিয়া সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করতে পারেন ট্রাম্প। বুধবার চীন যাবেন ট্রাম্প। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি অনেক বৈঠকে তার অংশ নেয়ার কথা আছে। শুক্রবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভিয়েতনামের ডানাংয়ে যাবেন ট্রাম্প। পরে শনিবার রাষ্ট্রীয় সফরে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে যাবেন। সেখানে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ও দেশটির অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। আগামী রোববার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট নেশন্স (আসিয়ান)-এর ৫০তম বর্ষপূতির্র আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশ নেবেন। পরদিন সোমাবার ম্যানিলায় আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হবেন। মঙ্গলবার পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। |