শিরোনাম: |
কী হবে রোহিঙ্গা শিশুদের
|
![]() এমনি কয়েকজন শিশুর জীবনের গল্প না বললে মনে হয় আমার লেখাটি সার্থকতা পাবে না। আসুন আমরা ওই অসহায় শিশুদের সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করি। রশিদ নামের একটি ১০ বছরের ছোট ছেলে কাঁধে একটি বোঝা নিয়ে ছোট বোন রশিদাকে নিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কারণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বাবা জাহিদ হোসেন ও মা রমিজা খাতুনকে হত্যা করেছে। তারা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে। তারা জানে না তাদের ভবিষ্যত্ কী হবে? রশিদ জানায়, পিতা ও মাতাসহ ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে তারা মংডুর শিকদারপাড়ায় থাকত। হঠাত্ সেনাবাহিনী তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। এরপর রশিদ ও রশিদাকে নিয়ে জঙ্গলে লুকায়, সেনারা চলে গেলে বাড়িতে ফিরে দেখে সেনারা তাদের পিতা-মাতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। তখন আর দেরি না করে পিতা-মাতার লাশ রেখেই পালিয়ে তিন রাত হেঁটে তারা নাফ নদী পার হয়ে সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখে বাংলাদেশে আসে। সে বলেছে, সেনারা নাকি তার অন্য ভাই-বোনকেও গুলি করে হত্যা করেছে। রাখাইনের মংডুর বার গোজিবিল গ্রামের দিলারা। বয়স এগারো এবং আজিজার বয়স ৯ বছর। তারা তাদের পিতা-মাতাকে হারিয়েছে। বড় বোন দিলারা বলে, দুপুরের খাবারের আগে তারা বাড়ির আঙ্গিনায় খেলছিল, এমন সময় সেনাবাহিনী তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। সে তার ছোট বোন আজিজা এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছোট বোন মুশতাকিমকে নিয়ে জঙ্গলে লুকায়। সেখান থেকে সে দেখতে পায়, সেনারা তার বাবাকে হত্যা করে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে এবং মা’র পেটে বড় ছুরি, সে জোরে জোরে চিত্কার করছে। তারা ভয়ে আর দেরি না করে পালালো। আর পালানোর সময় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বোনকে সেনারা গুলি করল। জানি না তার কপালে কি হয়েছে। সে কোথায় আছে তারা জানে না। এমন প্রেক্ষাপটে দিলারা ও তার বোন আজিজা অন্য প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলো অজানার আশ্রয়ের উদ্দেশে। দিলারা বলল, সে সেখানে কোনো স্কুলে পড়েনি, কারণ সেনারা সেখানকার স্কুলগুলোতে প্রায়ই হানা দিত। অপরদিকে অন্য এক পরিবারের ৯জন সদস্যের মধ্যে মাত্র দুইজন সদস্য বেঁচে আছে। তারা হলো নুর হোসেন বারো এবং তার ছোট বোন জহুরা খাতুন সাত। তারা বাস করতো উত্তর রাখাইনের রডিয়ংসং গ্রামে। সেনাবাহিনী গত ২৫ আগস্ট তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে তাদের পিতা সুলতান আহমেদ এবং মাতা হাজেরা খাতুনকে হত্যা করে। পরে গ্রামের অন্যান্যদের সহযোগিতায় নাফ নদী পাড় হয়ে বাংলাদেশে আসে। নুর বলে, সে রাখাইনে অন্য শিশুদের সঙ্গে স্কুলে পড়তো। গত দুই বছর আগে রোহিঙ্গা শিশুদের আলাদা করে অন্য স্কুলে দেয়া হলো। তিনি আরও বলেন, তাদের বাবা-মা তাদের অনেক ভালোবাসত। আজ তাদের কথা অনেক মনে পড়ে। তারা আজ আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে। কখনো আর দেখা হবে না। আর কোনো ভালোবাসা তারা পাবে না। তাছাড়া রাখাইনে বুচিয়াডং সাহেব বাজার এলাকায় আঞ্জুমান, তার ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলছিল। হঠাত্ সেনাবাহিনী এসে তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের বাবা গুরা মিয়া ও মা সামছুন্নাহারকে গুলি করে হত্যা করে। পরে সে তার বড় ভাই আনোয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশে আসে। তাছাড়া জান্নাতআরা বেগম বয়স এগারো, রাখাইন রাজ্যের কোনগিমাং গ্রামের বাসিন্দা। সে তার বাবা সৈয়দ আলমের গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়েছে। এদিকে বাবা যখন বাজারে চাল আনতে গিয়েছিল এমন সময় মিয়ানমার সেনা সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। পরে গলা কেটে মাথাটাকে আলাদা করে দেয়। পরে মা আনোয়ারা তিন বোন ও চার ভাইকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করে। মোট ৮ দিন-রাত হাঁটার পর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় তারা অবস্থান করছে। এছাড়া রাশেদ নামক আরও একটি ছেলে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে। একে তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল, সে নাকি তার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, যখন সেনাবাহিনী তাদের বাবা-মাকে হত্যা করে গাড়ি দিয়ে তাদের টেনে নিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি অন্য সৈন্যরা তাদের বড় বোনকে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছিল। মনে হয় তাকেও মেরে ফেলেছে। ওই মুহূর্তে রাশেদ মাঠে খেলতে ছিল। অন্যের কাছে শুনে বাড়িতে এসে এ অবস্থা দেখে সে তার ছোট ভাই কামালকে নিয়ে ৯ দিন ৯ রাত অন্যের সঙ্গে বাংলাদেশে পৌঁছায়। পরে একটি ছোট ঘরে অন্যদের সঙ্গে রেখে খাবার সন্ধানে গেলে ফিরে এসে তার ছোট ভাইকেও পায়নি। এ রকম আরও কত শিশু অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে তার হিসাবই বা কে রাখে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন অনেক ব্যক্তির তথ্য মতে জানা গেছে যে, এসব সর্বস্বান্ত শিশুরা ভয়ে ও আতঙ্কে তাদের মানসিকভাবে খুব নাজুক অবস্থায় আছে। তাদের জন্য দীর্ঘদিনের কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর ইতোমধ্যে বয়স বিবেচনা করে এসব শিশুদের শ্রেণিভাগ করে তাদের পূর্বের ন্যায় মানসিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে রাত-দিন। উল্লেখ্য সমাজসেবা অধিদফতর এসব শিশুদের জন্য স্মাটকার্ড বরাদ্দ করেছে এবং এসব শিশুদের আলাদা করে রাখার জন্য জমি বরাদ্দের আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। যাতে এসব শিশুরা কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত হতে না পারে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুরা নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে ভুগছে। পানি, খাবার স্যালাইন ও খাবারের তীব্র সঙ্কট হচ্ছে। যদি সরকার ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিশুদের সর্বোত্তম চিকিত্সা সেবাসহ খাবার বিতরণ করে। ইতোমধ্যে সেই কাজকে সুচারুভাবে করার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং গত কয়েক দিন থেকে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যাবলি সঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে তবে সেটা তো আসল সমাধান নয়। আর একটা কথা ভাবার ব্যাপার যে, এসব এতিম এবং অসহায় শিশুরা কোথায় আশ্রয় নিবে? কীভাবে চলবে তাদের দিন? তারা কি খাবে? কোথায় ঘুমাবে? তাদের বাড়ি-ঘর সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাথার উপরে শুধু খোলা আকাশ, আর চারদিকে শুধু প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সর্বশেষ রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুরা নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে ভুগছে। পানি, খাবার স্যালাইন ও খাবারের তীব্র সঙ্কট হচ্ছে। যদি সরকার ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিশুদের সর্বোত্তম চিকিত্সাসেবাসহ খাবার বিতরণ করা। ইতোমধ্যে সেই কাজকে সূচারুভাবে করার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং গত কয়েক দিন থেকে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যাবলি সঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে তবে সেটা তো আসল সমাধান নয়। আর একটা কথা ভাবার ব্যাপার যে, এসব এতিম এবং অসহায় শিশুরা কোথায় আশ্রয় নিবে? কীভাবে চলবে তাদের দিন? তারা কী খাবে? কোথায় ঘুমাবে? তাদের বাড়ি-ঘর সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাথার উপরে শুধু খোলা আকাশ, আর চারদিকে শুধু প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রোহিঙ্গা শিশু নয়, রোহিঙ্গাদের সব সমস্যা সমাধানে এবং তাদের দেশে অতি সত্ত্বর ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ৫ দফা দাবি প্রস্তাব পেশ করেছেন জাতিসংঘের সাধারণ সভায়, আন্তর্জাতিক মহলের অবগতির জন্য। এখন দেখার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আন্তর্জাতিক মহল কতটুকু এগিয়ে আসে। - লেখক ও কলামিস্ট |