শিরোনাম: |
যাতায়াত হোক নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায়
|
![]() এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর এ দেশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশে ৭২ হাজার ৭৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫২ হাজার ৬৮৪ জন আহত হয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রতি বছর দেশের সড়কপথে অন্তত পাঁচ হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে আর এক বছরেই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং পঙ্গুত্ববরণ করছে এর দ্বিগুণ। ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে এক গবেষণায় প্রতিদিন গড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হওয়ার তথ্য জানা যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ অন্য কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ ১০ শতাংশ। জাতিসংঘ ২০১১ হইতে ২০২০ সালের মধ্যে এক দশকে সারাবিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অর্ধেক কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ এই ঘোষণাপত্রে সই করেছে। জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোকে ভবিষ্যত্ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয়ের এক হইতে ১০ শতাংশ সড়ক নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিল। দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও তাই দৈনিক বিষয়বস্তু হিসেবে রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমান বাংলাদেশে দৈনিক মৃত্যুর হার গণনা করলে যা দাঁড়ায় তার একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার এত বেশি কেন? এর প্রধান কারণ হতে পারে অনিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। যেখানে সড়কপথে ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে দূরপাল্লার যান চালানো হয়। দৃষ্টি দেয়া যাক, ট্রাফিক আইনের দিকে- যেখানে ট্রাফিক আইন না মানলে চালকদের জন্য কঠিন রকম বিচার ব্যবস্থা রাখা আছে। সেখানে গাড়ি চালকরা কীভাবে ট্রাফিক আইন উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে পারে! নাকি কতিপয়ের ক্ষেত্রে সে বিচার ব্যবস্থা শিথিলযোগ্য? বাংলাদেশ পুলিশের কর্মতত্পরতা ও আইন ব্যবস্থার উপর আমরা আমজনতা যথেষ্ট সন্তুষ্ট। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের দরুন আমরা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে একটু বেশিই ভালো আছি। তবুও তাদের প্রতি একটু বিশেষ অনুরোধ রাখতে চাই, তা হলো- আপনারা সড়ক ব্যবস্থায় যদি আরও একটু নজরদারি করেন তাহলে হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা নামক অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিষয়টি অনেকটাই কমে আসবে। আপনাদের একটু বাড়তি সচেতনতাই হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির উপায়। এবার আসা যাক গাড়ি চালকদের প্রসঙ্গে। ভ্রমণের সময় যাদের উপর ন্যস্ত থাকে আমাদের জীবনের সবটুকু ভার তারা (গাড়ি চালক) কতটা সচেতন? আমরা যাত্রাপথে অনেক সময়ই খেয়াল করি দূরপাল্লার যানের মধ্য চলে প্রতিযোগিতামূলক আচরণ। যেখানে সামান্য একটু অসাবধানতাই ডেকে আনতে পারে অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল। গাড়ি চালকরা প্রায়ই রাস্তার সর্বোচ্চ গতিসীমা নামক সঙ্কেত উপেক্ষা করে গাড়ি চালান। এটা অবশ্যই একটি খারাপ দিক। অনেক চালক তাদের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে বিরামহীনভাবে গাড়ি চালায়। এতে করে একসময় তারা ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাদের এই ক্লান্তি আর অবসাদই একটি চলন্ত গাড়িকে ভয়ঙ্কর রকম দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে যথেষ্ট। গাড়ি চালকদের কাছে বিশেষ অনুরোধ- আমি জানি, দুর্ঘটনা আপনাদেরও কাম্য নয় তবুও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে গাড়ি চালান। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। চলতি পথে মেনে চলুন সব ধরনের ট্রাফিক আইন। মনে রাখবেন, আপনাদের উপরেই ভরসা করে আমরা পথে নামি আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে। এবার সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। দুর্গম পথ বলতে আমরা বুঝি যে পথে সহজে গমন করা যায় না। যে পথে চলা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। কিন্তু বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সড়ক পথগুলো দিন দিন দুর্গম রূপ ধারণ করছে। যাতে চলাচল করা আমাদের মতো জনসাধারণের জন্য সত্যিই খুব কষ্টকর ব্যাপার। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের বেশকিছু সড়ক ও মহাসড়কের বেহালদশা আমাদের সবার কাছেই পরিলক্ষিত। এসব সড়কে গাড়ি চালানো তো পরের কথা জনসাধারণের চলাচলই অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আর যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়া-খুঁড়ি তো এখন সারাবছরের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে যাত্রাপথে যুক্ত হচ্ছে আরও বাড়তি দুর্ভোগ। যত্রতত্র, এ রকম ভাঙা সড়কও কম দায়ী নয় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। পাশাপাশি আরও একটু বলতে চাই, সড়কের এমতাবস্থার সঙ্গে আনফিট গাড়ি আজকাল হরহামেশাই চোখে পড়ছে। ন্যূনতম তদারকির অভাবে দিন দিন সড়কে বাড়ছে এ রকম গাড়ির সংখ্যা। সাধারণ যাত্রীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব গাড়িতে যাত্রা করছেন। আপনাদের একটু শুভ দৃষ্টি সড়ক ও পরিবহনের এই পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে। সর্বশেষে আসি আমাদের কথায় যারা সড়কের যাত্রী। সড়কে চলি পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে। রাস্তা পারাপারে, চলাচলে আমাদের চাই বাড়তি সচেতনতা। গাড়িতে ওঠানামাও যেন হয় ন্যূনতম ধৈর্য সহকারে। লেখার শুরুতেই লিখেছি ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’। সর্বদা যেন খেয়াল রাখি কোনো দুর্ঘটনাই যেন আমাকে পৌঁছে না দেয় অনিশ্চিত কোনো ভবিষ্যতের কাছে। জনসচেতনতাই অনেকাংশে রোধ করতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা। আসুন সড়কপথে নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি। লেখক: কলাম লেখক |