শিরোনাম: |
পরিবহন ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে, ভোগান্তি চলছেই
|
![]() সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও সারা দেশে দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে নগর পরিবহন বন্ধ রাখায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও অব্যাহত রয়েছে। রোববারের মতো সোমবারও রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আছে। নগর পরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করছে রাস্তায়। আগের দিনের মতই ঢাকায় বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপো থেকে বাস ছেড়েছে, তবে সংখ্যায় তা একেবারেই নগন্য। সেসব বাস চলাচলে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও বিআরটিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পরিবহন শ্রমিকদের বাধায় গাজীপুর থেকে মতিঝিল এবং গাবতলী রুটে বিআরটিসি কোনো বাস চলতে পারছে না জানিয়ে গাজীপুর ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. শাহরিয়ার বুলবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এজন্য শুধু কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতা রুটে বাস চালাচ্ছেন তারা। “গতকাল চৌরাস্তা এবং গাজীপুরা এলাকায় আমাদের বাস আটকে দিয়েছিল শ্রমিকরা। আজও ওইদিক থেকে কোনো বাস আসতে দিচ্ছে না।” মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় শ্রমিকরা অবস্থান নেওয়ায় বিআরটিসির মিরপুর ডিপো থেকে ভোরেই সব বাস বের করে দেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ব্যবস্থাপক মো জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “গতকাল তাদের বাধায় আমরা কোনও বাস বের করতে পারিনি। এজন্য আজ ভোরে ৮০টার মত বাস বের করে দিয়েছি। সেগুলো বিভিন্ন রুটে চলবে। পরিবহন শ্রমিকরা মিরপুর ১২ নম্বর এবং আশেপাশে অবস্থান নিয়েছে।” সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শ্রমিকরা সোমবারও এ টার্মিনাল থেকে কোনো বাস বের করতে দেয়নি। গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাস চাপায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। কিন্তু ওই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেগুলো বাতিল করার দাবি তুলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা। এসব দাবিতে রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই পরিবহন ধর্মঘট পুরো ৪৮ ঘণ্টা চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। পরিবহন শ্রমিকদের এই দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “এই মুহূর্তে আইন পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে পরিবর্তন করতে তো পারব না। পরবর্তী পার্লামেন্ট পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে।” পরিবহন শ্রমিকদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “তাদের অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে কোনো ন্যায়সংগত বিষয় থাকলে পরে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করা হবে।” জনদুর্ভোগ অবসানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও পরিবহন শ্রমিকদের এই ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “তারা যে কারণে ধর্মঘট করছেন, সেটা বোধহয় আইনটা সঠিকভাবে না বুঝে করছেন। সড়ক পরিবহন আইন যেটা হয়েছে আমার মনে হয় সেটা সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সহায়ক হবে এবং চালকরা যদি সঠিকভাবে গাড়ি চালায়, তাহলে তাদের জন্য সহায়ক হবে।” আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছেন, “কোনো রকম নৈরাজ্য সৃষ্টির যে কোনো প্রচেষ্টা যেই করে থাকুক না কেন, সরকার সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।” অবশ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এই ধর্মঘট নিয়ে কথা বলতে চাননি। রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কোন মন্তব্য নয়।” |