শিরোনাম: |
একনেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন
গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
|
![]() পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুবই গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন যে, আমরা অনেক কাজ করছি গ্রামীণ রাস্তা, গ্রামীণ অবকাঠামোর। কাজগুলো সত্যিকার হচ্ছে কি না, কোয়ালিটিফুল (মানসম্মত) হচ্ছে কি না- সেগুলো ভালো করে পরখ করতে হবে। এসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, মাল্টিপ্লেয়ার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাজের কোয়ালিটি যেন ঠিক থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তায় যেন পানি না জমে। কারণ রাস্তায় পানি জমলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী আরেকটা মাস্টারপ্ল্যান করার কথা বলেছেন, কোন রাস্তা, কত রাস্তা, কোথায় করা হবে সে বিষয়ে। স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। ৫ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ খরচে আজকের একনেকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে আসাদুল ইসলাম বলেন, এ রাস্তাগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি দ্রুত এগুলো করতে হবে। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় যারা রাস্তা করে বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে। যাতে কোনো ওভারলেপিং না হয়। কোন কাজটুকু করতে হবে, কত কাজ বাকি থাকছে, কোন মন্ত্রণালয় করলে ভালো হয় এগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আগামী বর্ষা আসার আগেই যেন মূল কাজগুলো হয়ে যায়। তাতে সাশ্রয়ী হবে। নদী ভাঙনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, নদী ভাঙন রক্ষায় মূল কৌশল হবে আমাদের একটা চ্যানেলে সবসময় প্রবাহ রাখা। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে নিয়মিত আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখলে ভাঙন থেকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পাবো। এজন্য কোনো ডুবোচর বা কোনো চর যদি থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে বর্ষায় যখন পানির খুব চাপ বেড়ে যায় তখন সেই চাপ যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, এজন্য একটা বাফার জোন থাকতে হবে, বাঁধের পাশাপাশি। যাতে বাঁধ বা লোকালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে পানিগুলো সেখানে থাকতে পারে। আর বড় নদীর পাশে যেসব ছোট ছোট নদী থাকে, সেগুলো অনেক সময় ভরাট হয়ে যায়। সেগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে বড় নদী অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়, আমাদেরকে প্লাবিত করে ফেলে বা বাঁধ ভেঙে ফেলে। এই কাজগুলো যে ড্রেজিং, ক্যাপিটাল ড্রেজিং, নিয়মিত ড্রেজিং, বাফার জোন তৈরি করা, ছোট ছোট নদীগুলো খনন করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এগুলো আজকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ছিল। একনেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্পের অনুমোদন: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সাত হাজার ৫০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা খরচে পাঁচটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সরকার দেবে সাত হাজার ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের তথ্যমতে, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে চারটিই স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এবং একটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। আর প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি প্রকল্প নতুন এবং দুটির সংশোধিত। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে সচিব জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলাধীন কাতলামারী ও সাঘাটা উপজেলাধীন গোবিন্দি এবং হলদিয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্প। এতে খরচ হবে ৭৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বাকি চারটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের। সেগুলোর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে পাঁচ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্যব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ হবে ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে ৩১৪ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি করপোরেশন দেবে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত দুটি প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প: বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৯৫০ কোটি থেকে সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুনে। এর সময় বাড়িয়ে করা হলো ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির খরচ ১২৬ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার থেকে সংশোধন করে বাড়ানো হয়েছে ২২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। একনেক সভায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিক্ষামন্ত্রী মো. দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও সদস্যরা। |