শিরোনাম: |
একনেকে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকার ৭ প্রকল্প অনুমোদন
চলমান কাজ শেষ না করে পরের কাজ পাবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে বিদেশ সফর
|
![]() একনেকে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকার ৭ প্রকল্প অনুমোদন: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সরকার দেবে ছয় হাজার ৪৫৯ কোটি ২৭ লাখ এবং বিদেশি ঋণ চার হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশন বিভাগের জ্যে সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা। তাদের তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প রয়েছে। এতে খরচ হবে ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে খরচ হবে এক হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে সরকার দেবে এক হাজার ৪৮২ কোটি পাঁচ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে দুই হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ এবং গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা আরও বাড়িয়ে করা হলো চার হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হলো। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন-১ম পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হলো ৩০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। একনেক সভায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে বিদেশ সফর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাটছাঁট হচ্ছে ঘাস চাষে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। এ ক্ষেত্রে কমছে ব্যয়ও। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সংখ্যাও যেমন কমাতে হবে, তেমনি এ খাতের ব্যয় হ্রাসের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যে সচিব আসাদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রাণী পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের আয়োজন করা হয়। এতে ৩২ কর্মকর্তার পেছনে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের কেবল একান্ত প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে। ব্যয়ও কমাতে হবে। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা থাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জš§ দিয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময় পুকুর খনন শেখা, খাল খনন, মৎস্য চাষ প্রযুক্তি হস্তান্তর, কাজুবাদাম চাষ, সড়ক উন্নয়ন এবং সুউচ্চ বিল্ডিং দেখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাবও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এবার প্রস্তাব করা হল ঘাস চাষ দেখতে বিদেশ সফরের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ঘাস চাষ এমন কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। বরং এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করলে দেশ আরও উপকৃত হতো। তাছাড়া যারা চাষ দেখে আসবেন তারা হয়তো বদলি হয়ে যাবেন। কিংবা এই সফরে অপ্রয়োজনীয় অনেক কর্মকর্তাই হয়তো থাকবেন। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে এ রকম ব্যয় বাদ দেয়া বাঞ্ছনীয়। বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘাসের চাষ শিখতে বিদেশ সফরের আয়োজন হাস্যকর। এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবে প্রশ্ন থেকে যায়। যারা এই সফরে যাবেন তাদের আদৌ এত টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া ১০১ কোটি টাকার প্রকল্পে ৩ কোটি টাকার বেশি শুধু বিদেশ সফরেই যদি ব্যয় হয় তাহলে মূল প্রকল্পের কি অবস্থা হবে? শতাংশের হিসাবে এই টাকা হয়তো বড় কিছু নয়, কিন্তু অঙ্কের দিক থেকে তো অনেক বেশি। দেশের কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত বেশকিছু নামকরা প্রতিান রয়েছে। তারা উন্নত ঘাসের চাষ আবিষ্কার করতে পারে না? এটি জটিল কোনো কারিগরি প্রকল্প নয় যে, বিদেশ যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে কি পরিমাণ আর্থিক লাভ পাওয়া যাবে তার হিসাব করা উচিত। জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, আমাদের দেশে ঘাস চাষ জনপ্রিয় নয়। ফলে গরুর জন্য আলাদা ঘাসের প্রয়োজন সেটি মানুষের ধারণার মধ্যে নেই। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের ঘাস চাষ ছড়িয়ে দেয়া হবে। বেশি বেশি দুধ পেতে হলে উন্নত ঘাসের অবশ্যই প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে যাতে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস পাওয়া যায় সেজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বের যেসব দেশে অল্প জমিতে বেশি পরিমাণ এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন ঘাস উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোর চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে এবং টেকনিক্যাল কিছু ব্যাপার থাকায় বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩২ জনের মধ্যে দেখা যাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ৫ জনের মতো কর্মকর্তা থাকতে পারেন। বাকিরা পরিকল্পনা কমিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। |