শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
ফুটবলের ‘দ্য কিং’ পেলে
Published : Saturday, 31 December, 2022 at 6:00 AM, Count : 580

বর্তমান ডেস্ক: ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি এডসন আরন্তেস ডো ন্যাসিমেন্টো সংক্ষেপে যাকে ডাকা হয় পেলে। তাকে বিশ্ব ফুটবলে ‘দ্য কিং’ বা ফুটবলের রাজা বলেই ডাকা হয়। এদিকে অনেক আগেই ফিফা তাকে বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে দেয়। ফুটবল ক্যারিয়ারে অনেক কঠিন রক্ষণভাগকে কাটিয়ে গোল করতে সক্ষম হলেও শেষ অবদি তাকে হার মানতে হল ক্যানসারের কাছে। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এর আগে পেলে জন্মেছিলেন ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় শহর ট্রেস কোরাকোসে ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। তবে তার জন্ম সনদে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২১ অক্টোবর। তার নাম রাখা হয় বিখ্যাত আবিষ্কারক থমাস আলভা এডিসনের নামে। পেলের মতে, এটি হয়েছে কারণ তার জন্মের কয়েক দিন আগে তার বাড়িতে বিদ্যুত্ সংযুক্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য তার নাম থেকে ‘আই’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে দেন বাবা মা। বাউরো শহরে কিছুটা দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি বড় হন। লোকাল ক্যাফেতে কাজ করে তিনি পরিবারের আয়ে সহায়তা করতেন। পেলে তার বাবার কাছেই ফুটবল শিখেছেন। কিন্তু পরিবারের বল কেনার সামর্থ্য ছিল না। তাই তরুণ পেলেকে মাঝে মাঝেই কাপড়ের দলা পেঁচিয়ে বল বানিয়ে রাস্তায় খেলতে দেখা যেত।

স্কুলে এসে বন্ধুদের কাছে তার নাম হয় পেলে। যদিও তিনি নিজে বা তার বন্ধুরা কেউ জানতেন না যে, এর অর্থ কী। তিনি তার এই ডাক নামটা কখনোই পছন্দ করেননি। কারণ তার মনে হতো এটা পর্তুগিজ ভাষায় ‘শিশুদের কথার’ মতো। কিশোর বয়সেই স্থানীয় কয়েকটি সৌখিন দলের সদস্য হয়ে খেলা শুরু করেন। ঐ সময় সেখানে ইনডোর ফুটবল মাত্রই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। ১৯৫৬ সালে তার কোচ ভালদেমার ডি ব্রিতো তাকে সান্তোসে নিয়ে যান পেশাদার দল সান্তোস এফসিতে চেষ্টা করার জন্য। ডি ব্রিতো এর মধ্যেই ক্লাব কর্তাদের রাজি করাতে পেরেছিলেন যে, পেলেই একদিন বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হবে। সেই বছরই জুনে ক্লাব তাকে চুক্তি অফার করে তখন তার বয়স মাত্র ১৫।

ব্রাজিলের হয়ে পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। সময়টা ছিল ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই। সেই ম্যাচে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে গেলেও প্রথম ম্যাচেই বিশ্ব রেকর্ডটি করতে ভুল করেনটি পেলে। ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে গোল করে অর্জন করেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড।

এরপর ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলের বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটে। ম্যাচটি ছিল ১৯৫৮ বিশ্বকাপের তৃতীয় খেলা। ১ম রাউন্ডের খেলায় পেলে গোল করতে না পারলেও অন্তিম মুহূর্তে এসে পেলে ঠিকই জ্বলে উঠেন। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে সবাইকে স্তম্ভিত করে ছাড়েন পেলে। রাইট উইংয়ে থাকা গারিঞ্চার সঙ্গে তার রসায়ন ছিল অনবদ্য। তার হ্যাটট্রিকে ৫-২ গোলের জয় পায় ব্রাজিল। এবং ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষেও সেই একই গল্প। রাসুন্দা স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের সামনে জোড়া গোল করেন পেলে। ব্রাজিলকে এনে দেন প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এবং নায়ক বনে যান ১৭ বছর বয়সি পেলে।

এভাবে একে একে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে খেলেন পেলে। এর মধ্যে তিন বার (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০) সালে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। এর মাঝে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে ২য় ম্যাচেই গুরুতর আঘাত পান। এই আঘাতই তাকে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে দেয়। সেবারও ব্রাজিল বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে। তবে পেলে সেই দলের সদস্য কি না, তা নিয়েই চলছিল বিতর্ক। অবশেষে ১৯৯৭ সালে ফুটবলের বিশ্ব সংস্থা ফিফা বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে ১৯৬২-র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ঘোষণা করে।

১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। সেবার শেষবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামে পেলে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে শেষ বিশ্বকাপ খেলার সিদ্ধান্তে সেসময় অনেক আলোচনাও হয় তাকে নিয়ে। তবে তিনি সব আলোচনাকে একপাশে রেখে  ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা দলটির সদস্য হিসেবে তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা তোলে। সেবার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেলের হেডে করা গোল অমর হয়ে আছে ফুটবল ইতিহাসেই। ম্যাচটিতে ৪-১ ব্যবধানের বিখ্যাত জয় পায় ব্রাজিল। তৃতীয় বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেন পেলে। আর এতেই গড়েন তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্য। এখন পর্যন্ত পেলে ছাড়া এই কীর্তি আর কোনো খেলোয়াড়ের নেই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com