জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরগুলোতে চলছে আমন ধান
কাটার উত্সব। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার জগন্নাথপুরে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন
হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। তাই কৃষক-কৃষাণীরা আনন্দিত। সরেজমিন
উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হাওরে হাওরে রোপা আমন ধানের শীষ দুলছে।
বাম্পার ফলন হওয়ায় সোনালী ধানে মনের আনন্দে কৃষকরা ধান কাটছেন। কৃষকরা শ্রমিক নিয়ে
জমিতে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন আর কৃষাণীরা সেই ধানে গোলায় তুলতে
দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের সেই আনন্দযাত্রায় যোগ দিয়েছেন পরিবারের শিশু
থেকে শুরু করে বয়বিদ্ধসদস্যরাও। অতি সম্প্রতি নবান্ন উত্সবের মাধ্যমে এ উপজেলার
কৃষকদের নিয়ে রোপা আমন ধান কাটার উদ্বোধন করেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের
কর্তাব্যক্তিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় এবার সরকারিভাবে রোপা
আমনের চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমি।
তবে এবার লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৭ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে
চাষাবাদ করা হয়। চালে সরকারিভাবে ১৫ হাজার ৪৮২ টন নির্ধারণ করা হলেও তা বৃদ্ধি
পেয়ে প্রায় ২৫ হাজার টন ধান উত্পাদন হয়েছে। কৃষকরা তাদের জমিতে বি-ধান ৪৯, ৫১, ৫২,
বি-আর ২২, ২৩, ১১, বিনা-৭, দেশীয় জাতের পাইজাম, বিরইন, চিনিগুড়া, লাল বালাম, ময়না
শাইল, গর্চি শাইলসহ প্রায় ১৫ জাতের উন্নতশীল রোপা আমন ধান আবাদ করে। জগন্নাথপুরের
কৃষক অনিল দাস জানান, এবার রোপা আমনের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তাই কৃষকরা বেজায় খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তপন চন্দ্র শীল জগন্নাথপুর
জানান, জগন্নাথপুরে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান, আমনের চেয়ে বোরো
আবাদ অনেক ব্যয় বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ জগন্নাথপুরের মানুষ সেই ব্যয় বহুল ও
ঝুঁকিপূর্ণ বোরো আবাদে বেশি আগ্রহী। এছাড়া বোরো ধান কাটার মৌসুমে অনেক প্রাকৃতিক
দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়। এ দিক বিবেচনায় আমন অনেকটা দুর্যোগমুক্ত। আমনের মধ্যে
সবচেয়ে উচ্চ ফলনশীল বি-আর ২২, ২৩, বি-ধান ৪৬ এবং বিনা শাইল জাতের ধান। এসব ধান
অকাল বন্যার কবলে পড়ে পানির নিচে তলিয়ে গেলেও ২৪ দিন পর পর্যন্ত কাটা যায়। তিনি
কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় রোপা আমন ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহবৃদ্ধির কথা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার জানান, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন
উত্সবের মাধ্যমে এ উপজেলায় আমন ধান কাটা শুরু করেছি। এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে ধান
তুলার কাজ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হওয়ায় কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও খুশি।
|