শিরোনাম: |
সম্ভাবনাময় তরুণ ও যুবশক্তি
|
![]() জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বছর কিংবা তার নিচে। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ, অর্থাত্ মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম। ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ কোটি ৯৮ লাখ, যা হবে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক এ অবস্থান বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। ইউএনডিপি বলছে, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে উত্পাদনশীল খাতে। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদদের মতে, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে তরুণ জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে। বাংলাদেশের সামনেও সোনালি ভবিষ্যত্ হাতছানি দিচ্ছে। বর্তমান সরকার ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ ও ‘ভিশন-২০৪১’ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ বা ‘টেকসই উন্নয়ন’ বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ এবং যুবসমাজ। বর্তমান সময়টা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে এদেশের যুবকরা। অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে আউটসোর্সিং এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা যেমন নিজেদের দক্ষ করে তুলছে তেমনি উপার্জনের ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। যুব সমাজের এ দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। দেশে শিক্ষিতের হার শতকরা ৭০ শতাংশের মতো হলেও মোট জনশক্তির একটি বড় অংশ এখনও কর্মহীন। ফলে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এমন অবস্থায় সরকারি উদ্যোগে তারুণ্যের শক্তি, উদ্যম ও কর্মক্ষমতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষাসহ হাতে কলমে শিক্ষিত তরুণ যুবগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং বেসরকারি উদ্যোগে যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় সে দিকটিতেও সরকারকেই নজর দিতে হবে। একইভাবে দেশে অধিক মাত্রায় বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা দরকার। এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে শুধু দেশেই নয়, এসব প্রশিক্ষিত তরুণ ও যুবকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজের সুযোগ পাবেন। বিশ্বমন্দা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বেই বর্তমানে কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের অস্থিতার কুফল যেসব দেশ ভোগ করছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থানের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের দেশে ফিরে আসতে হলেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগের ফলে তারা আবার সেসব দেশে ফিরে গেছেন। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি দেশে জিটুজি (গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো এবং অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়ায় বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি গ্রহণ করার জন্য জাপানের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ জাপানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির অভাব রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাপান সরকারের আগ্রহে বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১৭ জন বাংলাদেশি যুবককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে জাপানসহ আরও কিছু উন্নত দেশে বাংলাদেশি জনশক্তি রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়। তরুণদের সৃজনশীলতা ও উদ্দীপনাকে বাদ দিয়ে কোনো সমাজ এগোতে পারে না। সরকার বেশকিছু কর্মসূচি নিয়ে তরুণ-যুবশক্তিকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদফততর বেকার যুবকদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করে তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য তাদের বিভিন্ন উত্পাদনমুখী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া দেশের ৬৪ টি জেলায় আবাসিক ও অনাবাসিক ভাড়া বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। তদুপরি দেশের সকল উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আবাসিক ও অনাবাসিক এবং স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বেকার যুবকরা কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নিয়মিত ৭২টি প্রশিক্ষণ ট্রেডের পাশাপাশি নতুন নতুন ট্রেড প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমান সরকারের সময়ে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫১ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক ও যুবমহিলা তাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্পাদন বৃদ্ধিতে সরাসরি আবদান রাখছে, যা গ্রামীণ দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭৮ জন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাবলম্বী হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মকর্মী যুবরা নিজেরা সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক যুবকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করছে। ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কিং সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে যুব কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে সব জেলা ও উপজেলায় ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও ঋণের জন্য অনলাইন আবেদনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ফলে ঘরে বসেই যুবকরা নিজেদের কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা ঠিক করে আত্মকর্মসংস্থানে মনযোগী হতে পারছে। উদ্ভাবনী কর্ম, চাহিদা আর দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর কর্মবাজারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সে সঙ্গে টেকসই ও অগ্রসরমান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার দিকেও নজর দিতে হবে। তরুণ-যুব সমাজের স্বপ্ন অনেক, সম্ভাবনাও অসীম। অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর এই স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া যায় তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন করে আরও বড় স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাব আমরা। যুব সমাজকে ঘিরে বর্তমান সরকার গৃহীত নানাবিধ কর্মসূচি সেই সঠিক দিকনির্দেশনাই দিয়ে যাচ্ছে । পিআইডি ফিচার। লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট। |