শিরোনাম: |
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করছে ওজোন স্তর
|
![]() ওজোন স্তরে ওজোনের ঘনত্ব খুবই কম হলেও জীবনের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি এটি শোষণ করে নেয়। ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর মধ্যম মাত্রার (তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের) শতকরা ৯৭-৯৯ অংশই শোষণ করে নেয় যা কিনা ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানরত উদ্ভাসিত জীবনসমূহের ক্ষতিসাধণ করতে সক্ষম। মধ্যম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সূর্যের এই অতি বেগুনি রশ্মি মানবদেহের ত্বক এমনকি হাড়ের ক্যানসারসহ অন্যান্য মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টিতে সমর্থ। এই ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীর জীব জগতের সকল প্রাণের প্রতি তীব্র হুমকি সুরূপ। বায়ু মন্ডলের ওজোন স্তর প্রতিনিয়তই এই মারাত্মক ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিগুলোকে প্রতিহত করে পৃথিবীর প্রাণিকুলকে রক্ষা করছে। ওজোন স্তরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভূমিকার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ওজোন লেয়ার সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখটি মনোনীত করেছে। আশির দশকের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। প্রথমে ১৯৮৫ সালে ভিয়েনায় এবং পরে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলে এ নিয়ে কনভেনশন হয়। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৬ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস ঘোষণা করে। অধিবেশনে ওজোন স্তর রক্ষার্থে মন্ট্রিল প্রটোকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসারে কর্মে নিয়োজিত হতে রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানানো হয়। প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর দিবস পালিত হয়। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। পরিবেশে বিজ্ঞানীদের মতে, ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি) গ্যাসসহ অন্যান্য ওজোন ক্ষয়কারী গ্যাস উত্পাদন ও ব্যবহারের ফলে ওজোনস্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওজোন স্তর ক্ষয়রোধে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরসহ প্রটোকলের লন্ডন, কোপেন হেগেন, মন্ট্রিল ও বেইজিং সংশোধনীগুলো যথাক্রমে ১৯৯৪, ২০০০, ২০০১, ও ২০১০ সালে অনুমোদন করেছে। ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। এই দিনটিতেই পালিত হয় বিশ্ব ওজোন দিবস বা আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর রক্ষা দিবস হিসেবে। মানুষ সৃষ্ট কারণই ওজোন স্তর ধ্বংসের প্রধান কারণ। এভাবে যদি বলা হয় যে, ওজোন স্তর ধ্বংসের মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদেরকেই না আমাদের আগত প্রজন্মকে গলা টিপে হত্যা করছি, তাহলে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনও সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে ওজোন স্তর।আমাদের কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, আমাদের পৃথিবী ও তার জীবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে হলে ওজোন স্তর সংরক্ষণ প্রয়াসে জরুরি ভিত্তিতে সার্বজনীন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে এ সংক্রান্ত সচেতনমূলক প্রচারণার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ প্রতিরোধে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে তারা পরিবেশ সচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। নগরায়ন ও শিল্পায়ন উন্নত বিশ্ব তৈরির জন্য অপরিহার্য হলেও একে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হবে। মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষের চলা ফেরা উঠা বসা সর্বত্রই রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া ঘরে বাইরে কর্মকে করে তুলেছে সহজ থেকে সহজতর। কিন্তু আমরা কি একটি বারের জন্য ভেবে দেখেছি আমরা নিজেদের কোন অশুভ শক্তির কড়াল গ্রাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি? জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা তা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে নিয়ামক হিসেবে বারিয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা। আমরা যদি আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সবুজ পৃথিবীর রেখে যেতে চাই তাহলে আমাদের কালক্ষেপণ ব্যতিরেক নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। সবুজ ধরণীর বুকে বেড়ে ওঠুক আমার আপনার সন্তান এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। —মো. আলতাফ হোসেন |