শনিবার ২১ জুন ২০২৫ ৭ আষাঢ় ১৪৩২
গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
Published : Tuesday, 3 October, 2017 at 6:00 AM, Count : 1020

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম : বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন পালিত হয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর। ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাল্যশিক্ষা সেখানেই নেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে উঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। বোনদ্বয় সেইসময় পড়াশোনার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয় এবং ওয়াজেদ মিয়া ৯ মে, ২০০৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সস্তান রয়েছে। 
আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আরোহন করে। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এরশাদবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে  তোলে এবং ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করানো হয়। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখা হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে তত্কালীন বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৯৬ সালে তিনি ওই সময়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন এ  আন্দোলনে জয়ী হয়। পরবর্তীতে তার দল (আওয়ামী লীগ) জাতীয় নির্বাচনেও জয়লাভ করে এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হেরে গেলেও পরবর্তীতে ২০০৬ সালে পুণরায় আন্দোলন শুরু করেন কিছু নতুন সমস্যা নিয়ে। 
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় এক জনসভায় বক্তৃতা দানকালে গ্রেনেড হামলায় জননেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। উক্ত হামলায় তার দেহরক্ষী, আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল ৭টা ৩১ মিনিটে যৌথবাহিনী শেখ হাসিনাকে তার বাসভবন ‘সুধা সদন’ থেকে গ্রেফতার করে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেখানে আদালত তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে অন্তরীণ রাখা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। একটি হল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য হত্যা মামলা এবং অন্যটি হলো প্রায় তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা। এর মাঝে একটির বাদী ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটি তুলে নেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের পরে তিনি চিকিত্সার্থে কয়েক মাস বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি জানুয়ারি ৬, ২০০৯-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ২৬০টি আসন লাভ করে। অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পায় মাত্র ৩২টি আসন। ইতিপূর্বে সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখা এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের নামে মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হওয়া প্রভৃতি কারণে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিলের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ৫ জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকি ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে রয়েছেন। তার পূর্বে এবং পশ্চাতে রয়েছেন যথাক্রমে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সার্লেফ এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জোহানা সিগার্ডারডটির। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২ জনের নাম নির্বাচিত করে। ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ঠিক পিছনে ছিলেন এবং ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৯তম স্থানে আছেন। ২০১৪ সালে এই তালিকায় শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৪৭তম। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। ওই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে শেখ হাসিনাকে বাংলা ভাষার ধারক ও বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এছাড়াও, ১২ জানুয়ারি, ২০১২ইং তারিখে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ডক্টর অব লিটারেচার বা ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭০তম অধিবেশনে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে তিনি ও তার সরকার বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করে দিলেন ‘মানুষ আর মানবতার সেবাই তার অন্যতম লক্ষ্য’। জাতির জন্য লজ্জা ও দুঃখের বিষয় যে, শেখ হাসিনাকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীরা বারবার হত্যার চেষ্টা করে। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কর কমিশনার।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com