শিরোনাম: |
মনের মাঝে কাশফুল
|
![]() ‘না রে বাবা এই গাছ বাগানে হবে না। এটা হয় নদীর ধারে বিলের ধারে।’ ‘তবে আমাদের গ্রামে বিলে কেন হয় না। আমাদের নদীর ধারের জমি দেখতে যে গেলাম তখন তো দেখলাম না।’ এটা হয় শরত্কালে। বাংলাদেশ ছয় ঋতু তুমি বই পড়েছ না? বাংলা মাস ভাদ্র-আশ্বিন। এই দুই মাস শরত্কাল। তখন তুমি নদীর ধারে কিংবা বিলের ধারে যেকানে একটু জলাশয়, সেখানে কাশফুল দেখতে পাবে।’ বাবা যখন কাশফুলের বর্ণনা দেন আমি তখন মনে মনে হারিয়ে যেতাম। শৈশবে কত সুন্দর করে পার করলাম। আহা! কী সুন্দর দিনই না ছিল। বাবা কথা শুনার পর থেকে পূজা বা ঈদ এর সময় স্কুল ছুটি থাকলে গ্রামে অলিগলিতে পূজা দেখে বেড়াতাম, নদীর তীরে কাশফুলের মধ্যে কতই-না ছোটাছুটি। বন্ধুবান্ধব, সঙ্গে হইহই-হুড়োহুড়ি। এমনকি সুযোগ পেলে নদীতে নেমে পানির মধ্যে গোসলের নামে লাফা লাফি কম হতো না... এদি ওদিক ছুটে গিয়ে ছোট বড় বন্ধুদের কে ডেকে নিয়ে আসা এমন সুন্দর একটা ফুলের গাছ দেখানোর জন্য। সিনেমার মত অপু-দুর্গা হাত-ধরাধরি করে কাশফুল দেখতে যওয়া। আর সব বন্ধুরা মিলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাশফুল বাড়িতে নিয়ে আসা। কল্পনা করতে হঠাত্ বাবা বলে চলো একটু পরে সন্ধা হবে। , এখন আর দেখা যাবে না। তো আবার শরত্কালে আমরা কাশফুল দেখতে আসবো।’ কিন্তু আমার কাশফুল দেখার বায়নাটা উদ্যোগ পূর্ণ হলো না। ঠিক হলো, ওরা সবাই বাসায় যাবে। কাল সকাল সকাল দাদাবাড়ি নরসিংদী যেতে হবে। তাই আর দেরি করা হলো না। পরের দিন ঝিক ঝিক ট্রেন চলল নরসিংদী। সবুজে ঘেরা পথ পার হয়ে ট্রেন পৌঁছায় প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন জার্নি আমাদের কোন দিন কাবু করতে পারে না। হইহই-রইরই প্রতিটি বেলা। বিকেলে যথারীতি দাদার সঙ্গে চলে যেতাম ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। বর্ষা গেছে খুব বেশি দিন হয়নি। নদীতে থইথই পানি। এখানে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে মেলা বসে। সবুজ গাছ। খোলা মাঠে চলল ভাইবোনের দৌড়ঝাঁপ। সবুজের মধ্যে একচিলতে পিচঢালা পথ। রিকশা ছাড়া নেই তেমন কোনো যানবাহন।দাদা তাই আমাদের ভাইবোনকে নিয়ে আছে অপার স্বাধীন। চাচাতো ভাই বোন হাত-ধরাধরি করে ছুটল। আমারদের জীবনে এমন দিন কি আর পাওয়া যায়! নদীর পারে সবুজে মাতামাতি করে তার সাথে মেলা আবার শেষে নৌকায় উঠা। নদীর এই পার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্যই নৌকায় ওঠা। দূর থেকেই দেখা গেলো বাতাসে কাশফুলের কেঁপে কেঁপে ওঠা। বড় বড় চোখ করে দেখলাম আমি। একেকটা গাছ লম্বায় যেন দাদার সমান। নৌকা থেকে নেমেই দাদার হাত ধরে কাশফুলের বাগানে ছুটলাম। কী সুন্দর বাগান ! এই সুযোগে দাদা কয়েকটা ডাল ছিঁড়ে নিলেন। দাদা এমন খুশি হতে ওরা আগে কখনো দেখেনি। মনে হয় দাদার যেন বয়স কমে গেছে অনেক। ভাই বোনরাও খুব খুশি। একঝাঁক কাশফুলের মধ্যে হঠাত্ , মাঝখানে কিছু জায়গায় হালকা কাশফুল। সেই জায়গা পার হওয়ার পর আবার ঘন ঝোপে ভরা। ‘ওয়াও.কি সুন্দর ..দাদা দেখো না কত্ত বড় বড় হাঁস!’ আনন্দে দিশেহারা ছোট বোন ঈশি। একটু দূরেই আবার ঈশি দেখতে পেল রাজ হাঁসগুলোকে। তাই সে বলে উঠলো হাঁস এত বড় হলো কী করে! পাশ থেকে দাদা বললেন, ‘এগুলো রাজহাঁস।’ আর আগের গুলো পাতি হাঁস পানি খাচ্ছিল। আমাদের আনন্দে দিশেহারা অবস্থা দেখে গ্রামের লোক গুলো যেন একটু বাঁকা চোখে তাকাল। দুষ্টু ঈশিটা হাঁসগুলোকে চমকে দেয়ার জন্য একটি ঢিল ছুড়ে মারলো। তার পেছন পেছন অন্যরাও। কাশফুল পার হয়ে, লতাপাতা মাড়িয়ে দৌড়ে যায় আমরা দাদার হাত ধরে। ঠিক যেন স্বপনের পথের মতো। আজও মনে পরে সেই দিনের কথা। |