শিরোনাম: |
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা: গর্বিত বাংলাদেশ
|
![]() বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের মানুষের নেতা নন একই সঙ্গে তিনি বিশ্বনেতাদের আসনে অধিষ্ঠিত হলেন। এটা আমার মতো সম্ভবত: দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য গৌরবের, সম্মানের, মর্যাদার। কারণ বিদেশে বা বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রজেটিভ আলোচনা হলে, গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে বা তার প্রশংসা করে খবর প্রকাশিত হলে তা এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার সুনাম, মর্যাদা এবং সম্মান বাড়ে। মূলত: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সারাজীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন দেশের স্বাধীনতা অর্জন, মানুষের অধিকার আদায় এবং বিশ্বের বুকে বাংরাদেশ এবং বাঙালিকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি ও দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এবং ৩ নভেম্বর জেল অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর এবং জাতীয় চার নেতাকে। তখন থেকে দেশকে পাকিস্তানি আদর্শে, ভাবধারায় পরিচালনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত, আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে বিদেশে পুনর্বাসন, রাষ্ট্র ক্ষমতা পাকিস্তানিকরণ করা হয়েছে। একইভাবে দেশকে অন্ধকারের পথে ধাবিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা জবরদখলকারী তত্কালীন শাসকচক্র। দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর শুরু হয় জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে মহত কর্মযজ্ঞ। কিন্তু মাঝ পথে ২০০১ এ ফের গণতন্ত্রের আভরণে দেশের শাসনভার যায় অন্যের হাতে। তার পর ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে পুনরায় একদিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অন্যদিকে জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে উন্নয়নে গ্রহণ করেন নানান কর্মসূচি। এরি মধ্যে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেল অভ্যন্তরে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারে কাজ করে যাচ্ছেন। এই নিবন্ধে প্রাসঙ্গিকভাবে এই কথাগুলো এসেছে। মূলত: বঙ্গবন্ধু তনয়া আমাদের ১৬ কোটি মানুষের আশা-ভরসা ও আস্থার একমাত্র বিশ্বস্ত ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ভূমিকাকে নিয়ে। তার এই অসাধারণ, সাহসী, বলিষ্ট ভূমিকা বিশেষ করে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বের দেশে দেশে, এমনকি জাতিসংঘে প্রসংশিত হয়েছে। তার প্রসংশায় পঞ্চমুখ বিশ্বনেতারা একই সঙ্গে বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমেও এ নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবতার নায়ক এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই ইস্যুতে যে সহমর্মিতা তুলে ধরতে পেরেছেন, তা বিশ্বের অনেক বড় ও ধনী দেশের নেতারা দেখাতে পারেননি। ওয়াশিংটনভিত্তিক খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক ও এশিয়াবিষয়ক ভাষ্যকার এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সদানন্দা ধুমি এক নিবন্ধে এ মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের জনপ্রিয়তম ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস শেখ হাসিনাকে ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক রক্ষণশীল মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি ‘দ্য ওয়ার্ল্ড হ্যাজ আইডিওলাইজড অং সান সুচি, বাট দ্য হিরো অব দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস ইজ শেখ হাসিনা’ শীর্ষক ধুমির নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী নিউজ উইক, ওয়ার্ল্ড নিউজ নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যমেও এই ভারতীয় লেখকের নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। ধুমি বলেন, ‘এই সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কলামে আমি দুটি প্রতিবেশী দেশের নেতা মিয়ানমারের অং সান সুচি ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছিলাম। শেখ হাসিনার তুলনায় সুচি পশ্চিমা দুনিয়ায় অনেক বেশি পরিচিত হলেও দুই নেতাই তাদের জীবনে অভিন্ন কষ্ট ভোগ করেছেন। দুজনই ১৯৪০ সালের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ দশকে জন্ম নিয়েছেন। ওই সময়টাতে ঔপনিবেশ-উত্তর অনেক এশিয়ান জাতি স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে। দুজনের বাবা যথাক্রমে জেনারেল অং সান ও শেখ মুজিবুর রহমান, তাদের নিজ নিজ দেশের জাতির পিতা। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা দুজনকেই হত্যা করে। ধুমি লেখেন, দুজনের মধ্যে মৃদুভাষী সুচির প্রচুর গুণমুগ্ধ মানুষ রয়েছে পশ্চিমা দুনিয়ায়। নিজ দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করার কারণে ১৯৯১ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে সুচি হয়ে ওঠেন তীব্র বিরোধিতার বিপরীতে এক নীরব সংকল্পের প্রতিমূর্তি। শেখ হাসিনা স্বনাম ধন্য পরিবারে জম্ম। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে তার একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছিলাম। সাক্ষাত্কারের পর আমি তার বাবার অসমাপ্ত আত্মজীবনীর একটি বইয়ে তার অটোগ্রাফ চেয়েছিলাম। তিনি বইটিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলায় তার নাম লিখলেন। কিন্তু যদিও পশ্চিমা ধাঁচের ‘দ্য লেডি অব ইয়াঙ্গুনের’ মতো করে ‘দ্য লেডি অব ঢাকা’-কে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এর পরও রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে সন্দেহাতীতভাবেই সময় এখন শেখ হাসিনার। নিজের দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বিপুল পরিমাণ শরণার্থীকে গ্রহণ করে হাসিনা বিশ্বের অনেক বড় ও ধনী দেশের নেতাদের তুলনায় অসামান্য পরদুঃখকাতরতা প্রদর্শন করেছেন। যেমন হাসিনা আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ধনী দেশ না হতে পারে; কিন্তু আমাদের একটি বড় হূদয় আছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে আখ্যা দিয়ে গত শনিবার আরব আমিরাতের খালিজ টাইমসের কলামিস্ট অ্যালান জ্যাকবের লেখেন ‘শেখ হাসিনা নোজ দ্য আর্ট অব কমপ্যাশন’ (শেখ হাসিনা জানেন সহমর্মিতার নৈপুণ্য) শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধের শুরুতেই তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়ে এর আগে না লেখার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে এবং সুচির চোখ দিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে দেখার জন্য বিশ্ব গণমাধ্যমকে অপরাধী হিসেবে আখ্যা দেন। তার কলামে স্বীকার করে বলেন, ‘স্বৈরাচারী, ঘৃণিত গুরু এবং নামগোত্রহীন লোকদের নিয়ে লেখার আগেই আমাদের উচিত ছিল শেখ হাসিনাকে এই পাতায় উপস্থাপন করা। এখানে স্বীকার করা উচিত, এ সপ্তাহে আমার লেখার বিষয়ে দক্ষিণ ভারতের একজন অভিনেতা এবং রাজনৈতিক মাঠে তার আশাবাদী কর্মকাণ্ড মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু আমি যখন বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন প্রাচ্যের নতুন তারকা, তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। গত মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক আবেদনটি অবজ্ঞা করায় একটি অপরাধের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেছেন, এটি (রোহিঙ্গা নির্যাতন) তার হূদয় ভেঙে দিয়েছে। জ্যাকব বলেন, বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতারা যখন কর্ণধার হন, তখন অভিবাসন সমস্যা নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত বিশ্বে আশার আলো জ্বলে ওঠে। তার কর্মকাণ্ড প্রথমে ক্ষীণ মনে হয়েছিল, তবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রত্যক্ষ করতে খালিজ টাইমস যখন একজন রিপোর্টার পাঠাল, তখনই প্রকৃত সমস্যাটি সামনে চলে আসে। খালিজ টাইমসের কলামিস্ট বলেন, বিশ্ব গণমাধ্যম রোহিঙ্গা সঙ্কটকে সুচির চোখে দেখার জন্য অপরাধী। দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা দেশছাড়া হওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে সুচিকে অসহায় মনে হয়েছে। তিনি যা করছেন তা হচ্ছে তিনি নির্বাচনে সাফল্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কিংবা বলা যায়, তিনি ব্যালটের ফায়দা লুটছেন। সুচি এত দিন ধরে যে রাজনৈতিক সংগ্রামটি চালিয়ে এসেছেন তা সামাজিক ও মানবিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় তা থেকে তিনি বিচ্যুত হয়েছেন। তিনি সুচি কণ্ঠস্বর যখন হারিয়েছেন এমন সময় শেখ হাসিনার সোচ্চার হয়ে ওঠা এক বিরাট স্বস্তি। সুচি ও শেখ হাসিনা তাদের নিজ নিজ দেশের মুক্তি সংগ্রামের মহানায়কের কন্যা। দুজনেই খুব কাছ থেকে ট্র্যাজেডি দেখেছেন। যদিও ফারাকটা বিশাল। মানবতা যখন বিপন্ন তখন একজন নিছক দর্শক হয়ে থাকার পথ বেছে নিলেন, অন্যজন দেখালেন অমায়িক দয়া। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তাদের এই প্রশংসায় আমারও ভাগিদার। একই সঙ্গে প্রার্থনা তাকে আল্লাহ দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন দান করুন। মানবতার কন্যাণে তিনি আমৃত্যু ভূমিকা রাখেন এ প্রত্যাশা থাকলো। সাংবাদিক, কলামিস্ট |