মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫ ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে আয়কর মেলা
Published : Sunday, 29 October, 2017 at 6:00 AM, Count : 753

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম : পহেলা নভেম্বর জাতীয় আয়কর মেলা। দেশের সব ক’টি বিভাগীয় ও জেলা শহরে এই মেলা চলবে। বর্তমান সরকার আয়কর বৃদ্ধির পাশাপাশি করদাতাদের কর প্রদানে উত্সাহিত এবং কর প্রদান সহজ করার লক্ষ্য নিয়েই এই মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বিগত দিনে অনেক সাফল্য বয়ে এনেছে, করদাতারা করপ্রদানে উত্সাহিত হচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ নতুন করদাতা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে এনবিআর। এতে বাড়তি আয়কর রিটার্ন দাখিল হতে পারে অন্তত ৩ লাখ। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ভিন্ন এক পরিবেশ নিশ্চিত করতে গত ৭ বছর ধরে এনবিআর আয়োজন করে আসছে আয়কর মেলা। এই মেলায় এক ছাদের নিচে এ সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। তাই স্বাচ্ছন্দ্যে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কর দিতে এনবিআর প্রতি বছর সাড়া পাচ্ছে করদাতাদের। এদিকে ১৬ কোটি মানুষের দেশে নিবন্ধিত করদাতা ৩০ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেন এমন সংখ্যা আরও কম। যা গত বছর পর্যন্ত ছিল পোনে ১৬ লাখ। তবে এবার এর সংখ্যা বেড়ে ১৯ লাখের কিছু বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এ বছর ৮টি বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী জেলা পর্যায়ে চার দিন, এছাড়া ১৬৫টি উপজেলায় আয়োজন করা হবে আয়কর মেলা। এদিকে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে এবার নতুন ধারণা যোগ করেছে এনবিআর। 
সারাদেশে ২২০টি জায়গায় আয়কর ক্যাম্প করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেখানে শুধু আয়কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।  গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের হিসাবে, গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক মিলিয়ে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করেছিল এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার। সেই হিসেবে গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর আগের ২০১৫-১৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এনবিআরও রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৬০ এবং ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। 
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলো এনবিআর। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে আরও ৭১ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম করেছে এনবিআর। এর ফলে রাজস্ব ঘাটতির সকল শঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করলো সংস্থাটি। খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো- গত অর্থবছরে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৩০ কোটি ৪৮ লাখ, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ৬৬ হাজার ৮৯১ কোটি ৪৫ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৬৩ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সাফল্য আসে।  গত বছরের বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর পাশাপাশি ২০২০-২১ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেন। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রিটার্নে ১১ হাজার ৬৭০ জন করদাতা সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছেন। 
রাজস্ব আইন অনুসারে, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে আয়করের ওপর মূল্যভেদে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। হিসাব অনুসারে, সরকার এ বাবদ তাদের কাছ থেকে ৩৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ে বড় সাফল্য এসেছে। আলোচ্য মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ২৭ শতাংশ বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে আমদানি শুল্ক আদায় বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাইয়ে আমদানি ও রফতানি বেশি হওয়ায় মূলত আমদানি শুল্ক বেড়েছে। ফলে রাজস্ব আদায়ে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। অবশ্য চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে মোট ১২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বা গত বছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ গত জুলাইয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সার্বিক অর্থে আয়কর মেলা রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেগবান তথা কর আদায়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। 
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কর কমিশনার।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com