শিরোনাম: |
বিষণ্নতার ছয়টি ধরন অনেকেরই অজানা!
|
![]() এখানে কিছু ভিন্ন ধরনের বিষণ্নতার প্রকাশ নিয়ে আলোচনা করা হলো- মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার: মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার একজন মানুষকে সবচাইতে বেশি দুর্বল করে দেয়ার মতো মানসিক রোগ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে আমেরিকার ৭% মানুষ মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে এর লক্ষণ এতোই বেশি প্রকট যে তারা নিজেদের আঘাত করেও থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, মানসিক এই সমস্যার লক্ষণগুলো হয়ে থাকে- অস্থিরতা, মনোযোগের অভাব, নিরাশা, অসহায় বোধ করা, নিজেকে মূল্যহীন ভাবা, নিজের মাঝে অপরাধ বোধ কাজ করা, কাজ করার শক্তি না পাওয়া এবং অনেক বেশি পরিমাণে মন খারাপ করে থাকা। মানসিক এই সব লক্ষণের পাশাপাশি থাকে শারীরিক লক্ষণও। যেগুলো হলো- অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক ব্যথা হওয়া, ঘুমের সময়ের পরিবর্তন হওয়া, খাওয়ার রুচির পরিবর্তন হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া প্রভৃতি। অসুস্থতা কোন কারণ অথবা অকারণেই অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। পরিবারের কারোর এমন সমস্যা থাকলে, মানসিক এই সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়। অসুস্থ ব্যক্তিদের সঠিকভাবে ওষুধপত্র খাওয়ালে এবং ‘টক থেরাপি’ দিলে ৮০-৯০% রোগী এই বিষণ্নতা থেকে উঠে আসতে পারেন। ডিসথেমিয়া: খুব একটা পরিচিত না হলেও, ডিসথেমিয়া বেশ প্রভাবশালী বিষণ্নতার একটি ধরণ। মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এর মতো অতোটা ভয়াবহ না হলেও, এর লক্ষণগুলো যথেষ্ট কষ্টদায়ক। ডিসথেমিয়া ফলে তৈরি হওয়া মন খারাপ ভাব অনেক লম্বা সময়ের জন্য থাকতে পারে, এমনকি টানা এক বছরের জন্যও! ডিসথেমিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা দৈনন্দিন কার্যকলাপ সাধারণভাবেই করতে পারে, তবে খুব একটা ভালোভাবে নয়। এর লক্ষণগুলো হলো- মনোযোগের অভাব, অবসাদ, ঘুমের সময় বদলে যাওয়া, খাওয়ার রুচি বদলে যাওয়া এবং অনেক দীর্ঘ সময় ধরে মন খারাপ হয়ে থাকা। সাধারণত যে কোনো ঘটনা থেকেই ডিসথেমিয়া অনেক বেশি প্রকট হতে পারে, তবে অকারণেও হতে পারে এমন। সাধারণত ইতিবাচক কথা এবং ব্যবহার দিয়েই এই বিষণ্নতা দূর করে ফেলা সম্ভব হয়, কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন: গবেষণা থেকে প্রকাশিত হয়েছে যে, সন্তান জন্মদানের পর ৮৫% নারী অদ্ভূত এক ধরনের মন খারাপ এবং বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। যার মাঝে ১৬% নারীদের মন খারাপের সমস্যার জন্য প্রাত্যহিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। এই বিষণ্নতার লক্ষণগুলো হয়ে থাকে- মন খারাপ, একাকী বোধ করা, অবসাদ, নিরাশা, আত্মহত্যা প্রবণতা, সন্তানকে ব্যথা দেওয়ার ভয়, এবং সন্তানের থেকে নিজেকে দূরে রাখার চিন্তা। সাধারণত সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যেই এই বিষণ্ণতা তৈরি হয় এবং কয়েক মাস পর্যন্ত এই বিষণ্নতা থাকতে পারে। এই ধরনের বিষণ্নতার সমস্যা কাটানোর জন্য সঠিক ওষুধ সেবন এবং ইতিবাচক কথাবার্তা অনেক সাহায্য করে থাকে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (ঝঅউ): সাধারণত এই ধরনের বিষণ্নতার সমস্যা শীতকালে হয়ে থাকে। অনেক মানুষ শীতকালে এই বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে পরে। ধরে নেয়া হয় যে, শীতকালে রোদের কম আলো পাওয়ার কারণে এই বিষণ্নতা বোধ তৈরি হয়ে থাকে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার এর লক্ষণগুলো হলো- সকালের দিকে অবসাদ বোধ করা, ওজন বেড়ে যাওয়া, মানসিক দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। এই বিষণ্নতা খুব ভয়াবহ বা এর প্রভাব প্রকট না হলেও মাঝে মাঝে বেড়ে যেতে পারে। পুরো শীতকাল জুড়েই এই বিষণ্নতা বোধ থাকে এবং শীতকালের শেষ আবারও ঠিক হয়ে যেতে শুরু করে। সাইকোটিক ডিপ্রেশন: সাইকোসিস এমন একটি মানসিক সমস্যা যেখানে রোগীর হ্যালুসিনেশন হয়, রোগী মনগড়া শব্দ শুনে থাকেন এবং মিথ্যা বিশ্বাস নিজের মাঝে ধারণ করেন। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির বিষণ্নতা এতো বেশি তীব্র হয়ে যায় যে, বিষণ্নতার সঙ্গেই তার মাঝে সাইকোসিসের সমস্যাও দেখা দিতে থাকে। যার ফলে রোগী হয়ে যায় ক্যাটাটনিক, তার বিছানা থেকে নামার কোন ইচ্ছা থাকে না, কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছা থাকে না। এর সঙ্গে অবাস্তব জিনিস দেখা এবং শব্দ শোনা করু করেন তিনি। এই সমস্যা নিরসনে অ্যান্টি-সাইকটিন ওষুধ এবং অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট কাজ করে থাকে। তবে একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম চিকিত্সা কাজ করে থাকে। বাইপোলার ডিসঅর্ডার: হতাশার এই ধরনটাকে সবচেয়ে বেশি ভুল বুঝে থাকে সকলে। অথচ এই বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুক্তভোগীদের সবচেয়ে ভালো এবং কঠোর চিকিত্সার প্রয়োজন। এই হতাশার সময়ে যা হয়- অনেক লম্বা সময় ধরে হতাশ থাকা এবং এরপরে ম্যানিয়া ও হাইপোম্যানিয়াতে আক্রান্ত হওয়া। এরপরে আবারও বিষণ্নতা ফিরে আসা। বাইপোলারের লক্ষণগুলো হলো- অনেক বেশি এনার্জি নিয়ে ম্যানিয়ার সব লক্ষণ, অনেক বেশি চিন্তা করা, অনেক বেশি উত্তেজনা, ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবেগপ্রবণ কাণ্ড করে ফেলা, ঘুমের সময়ে পরিবর্তন চলে আসা এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া। সমগ্র জনসংখ্যার মাঝে মাত্র ২-৩% মানুষ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয় এবং তাদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেক বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে, পরিবারের কারোর যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তবে আক্রান্ত ব্যক্তি আরও বেশি ঝুঁকির মাঝে থাকে। এই মানসিক সমস্যা চিকিত্সা হচ্ছে ‘মুড স্ট্যাবিলাইজার’ মূলক কিছু ওষুধ সেবন করা। - স্বাস্থ্যকথন ডেস্ক |