রবিবার ৮ জুন ২০২৫ ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মানসিকভাবে দৃঢ় নারীদের যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে
Published : Tuesday, 28 November, 2017 at 6:00 AM, Count : 981

শিরোনামটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চয়ই মনে মধ্যে অনেক কিছু একসঙ্গে খেলা করছে, চোখের সামনে অনেকগুলো ছবি একের পর এক ভেসে উঠছে এবং চলেও যাচ্ছে। অভিধানের ভাষায় মানসিকভাবে শক্ত নারী বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? ইতিহাসের বই পড়ে আমরা জেনেছি নারী যোদ্ধাদের কথা। যারা সব কিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। অবশ্যই তারা সবার চাইতে অনেক বেশি মানসিকভাবে শক্ত ও দৃঢ়। তারপরও, খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে আমরা একজন মানসিকভাবে দৃঢ় নারী বলতে কী বুঝি?

ইতিহাস কিংবা রূপকথার গল্পের কোন চরিত্র নয়, প্রতিদিনের বাস্তব জীবনের নারীদের কথাই এখানে মুখ্য। যিনি প্রতিদিন ঘরের সব কাজ করেন, সকাল ঘুম থেকে উঠে নিজের সন্তানদের স্কুলের জন্য তৈরি করেন, নিজের ক্লাস কিংবা অফিসের জন্য তৈরি হন, রাস্তায় যে নারীটি সারারাত জেগে খাবার বিক্রি করেন, চারপাশের অশান্তিতে কাহিল হয়েও যিনি হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলেন তাদের কথা কী আমরা সেভাবে ভাবি? মানসিকভাবে দৃঢ় একজন নারীর মাঝে ঠিক কী কী বৈশিষ্ট্য থাকে, কেমন হন তারা? খুব বেশি কাঠখোট্টা নাকি হাসিখুশি, খুব চুপচাপ নাকি খুব চঞ্চল? এখানে মানসিকভাবে দৃঢ় নারীদের মাঝে থাকা কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-

অতীত লুকানোর চেষ্টা করেন না

সকলের জীবনেই অতীত থাকে, ভুল সকলেই করা। দৃঢ় মানসিকতার নারীরা কখনোই তাদের অতীত নিয়ে লজ্জিত বোধ করেন না, কিংবা নিজের অতীতকে লুকানোর চেষ্টা করেন না। নিজের অতীতের ব্যাপারে তারা কখনোই মিথ্যের আশ্রয় নেন না এবং সেটা নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন না। তারা নিজেদের ভুলকে স্বীকার করার মতো দৃঢ় মানসিকতা রাখেন এবং নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত্ এর পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেন। অতীত ও অতীতের ভুলকে নিজের শত্রু নয়, নিজের হাতিয়ার করে তারা নতুনভাবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন সর্বদা।

সহজে কাউকে বিশ্বাস করেন না

জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এবং অনেক কাঠখড় পোড়ানোর ফলে তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি দৃঢ় ও শক্ত হয়ে ওঠেন। তারা জানেন যে, খুব সহজেই আশপাশের সব মানুষকে বিশ্বাস করলে ইতিবাচক ঘটনার পরিবর্তে নেতিবাচক ঘটনাই বেশি ঘটে থাকে জীবনে। একজন মানুষ খুব ভালো আচরণ করছেন, তার মানে এই নয় যে তার উদ্দেশ্য ভালো। মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা নিজদের মতো করে সময় নেন, পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তারা কাউকে বিশ্বাস করবেন কি করবেন না, অথবা কেউ তার বিশ্বাস পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা সেটা বিবেচনা করেন। তাদের এই চমত্কার চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যর জন্য তাদের জীবনে নাটকীয় ঘটনা, দুর্ঘটনা, সমস্যা অনেক কম থাকে। যার ফলে তারা নিজেদের জীবনের ইতিবাচক দিকের প্রতি ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন এবং সঠিক মানুষের জন্যে নিজের জীবনে মূল্যবান সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় করতে সমর্থ হন।

প্রত্যাখ্যানকে ভয় পান না-

যেখানে সবাই প্রত্যাখ্যানকে ভয় পান, সেখানে মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা কোন ক্ষেত্রেই প্রত্যাখানকে ভয় পাননা। একটি প্রত্যাখ্যান তাদের লক্ষ্য ও স্বপ্নের পথে বাধা হিসেবে কখনো আসতে পারে না। বরঞ্চ প্রত্যাখ্যানকে তারা নতুন একটি শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করার মতো মানসিকতা বহন করেন। নিজেদের ভুল, নিজেদের কমতিগুলোর প্রতি তারা আরও বেশি যত্নশীল হয়ে ওঠেন। প্রত্যাখ্যানকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেন। তারা জানেন, একটি গোলাপ ফুল পাওয়ার জন্যে তাদের কন্টকিত পথ পেরোতে হবে। তাই তারা নিজেদের সেভাবেই প্রস্তুত করে ফেলেন মানসিকভাবে।

তারা সৃজনশীল হন

তারা প্রকৃতিগতভাবেই অনেক সৃজনশীল মানসিকতার মানুষ। খুব সাধারণ ও একঘেয়েমিপূর্ণ কোন কিছুতে তারা সহজে আকৃষ্ট হন না। জীবনের সবকিছুই- হোক ছোট কিংবা বড়, তারা নিজেদের মনে মতো করে ও সুন্দর করে করতে পছন্দ করেন। মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা সবসময়ই সঠিক সুযোগ ও সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে পারবেন পরিপূর্ণভাবে। নিজের প্রতিভাকে প্রকাশিত করার জন্য কোন সুযোগের হাতছাড়া করতে তারা মোটেও রাজী নন। নিজের পাশাপাশি তারা সবসময় চেষ্টা করেন অন্য মানুষের ভেতর থেকেও সৃজনশীলতা বের করে আনার জন্য। জীবন ও পৃথিবীকে তারা ভিন্ন মাত্রায় দেখার চেষ্টা করেন সবসময়।

সবার কাছে তারা প্রকৃষ্ট উদাহরণ

মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা স্বভাবগতভাবেই অনেক বেশি শক্ত মানসিকতার মানুষ হয়ে থাকেন। অন্যান্য সকলের চাইতে অনেক বেশি জেদি ও সংকল্পবদ্ধ মানুষ হয়ে থাকেন তারা। যা অনেক ক্ষেত্রে ও অনেকের জন্যে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে হতে পারে। তবে সত্য কথা হচ্ছে, তাদের এমন নাছোড়বান্দা আচরণ ও স্বভাবের জন্যে তারা অন্য সবার কাছে দারুণ ও অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হন। এমন স্বভাবের নারীকেই সকলে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত করে থাকেন। প্রকৃত লিডার হবার সকল যোগ্যতা তাদের মাঝে খুব পরিষ্কারভাবেই পরিলক্ষিত হয়। লিডার হলেও তারা কখনোই হুকুম করে বা জোর করে কারোর কাছ থেকে কাজ আদায় করার ক্ষেত্রে বিশ্বাসী নন। তারা সকলকে ইতিবাচকভাবে এবং ভালো আচরণ দ্বারা বুঝিয়ে কাজ আদায় করার ক্ষেত্রে বিশ্বাসী।

জানেন কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়

সাধারণত সাহায্য চাওয়াকে দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। মানসিকভাবে একজন দৃঢ় নারী সবসময় নিজের মাঝে দৃঢ়তা ধরে রাখলেও তারা জানেন যে, কোন না কোন ক্ষেত্রে তাদেরও সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও তারা বেশিরভাগ কাজ নিজেরাই করার ক্ষমতা রাখলেও সকল কিছু একা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সবচাইতে বড় মানসিক দৃঢ়তার বিষয়টি হলো- নিজের এই দুর্বলতাটুকু বুঝতে পারা, সেটা সম্পর্কে জানা। একজন মানুষ হিসেবে নিজের দুর্বলতা মেনে নেয়ার মাঝেও থাকে অনেক বেশি মানসিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা তাদের প্রয়োজনের সময়ে কাছের মানুষদের কাছে সাহায্য চান। কারণ তারা জানেন- মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়া মানে সবকিছু একা করা নয়। বরং নিজের প্রয়োজনের সময়ে কাছে মানুষদের কাছে সাহায্য চাওয়া ও তাদের সঙ্গে কাজ করা। তাদেরকে বোঝানো যে নিজের জীবনে তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

অন্য নারীদের সাহায্য করেন-

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের মাঝে একটি সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়- অন্যকে কখনোই নিজের চাইতে ভালো অবস্থায় সহ্য করতে পারেন না। এছাড়াও অহেতুক গালগপ্পো তৈরি করা, মিথ্যা কুত্সা রটানোর মতো ব্যাপারগুলো তো থাকেন। এই সকল ক্ষেত্রে মানসিকভাবে দৃঢ় নারী খুব ভিন্ন ও আলাদা। তারা নিজেরা যেমন নিজেদের তুলে ধরতে প্রস্তুত, ঠিক তেমনভাবেই অন্য নারীদের সাহায্য করার জন্যেও সবসময় চেষ্টা করেন। অন্যের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে, বিভিন্নভাবে নিজের উন্নতি করতে সবসময় চেষ্টা করে থাকেন তারা।

নিজেদের প্রতি যত্নবান হন-

মানসিকভাবে দৃঢ় নারীরা নিজেদের নিখুঁত হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন সর্বদা। যার ফলে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে সবসময় অনেক সচেতন থাকেন। নিজেদের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে তারা কখনোই কার্পণ্য করেন না। নিজের তীক্ষধার আচরণ ও মানসিক দৃঢ়তার পাশাপাশি নিজেদের প্রকাশ করার জন্য সবসময় তারা সচেতন থাকেন। যে কারণে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা করার প্রতি যত্নবান থাকেন।

সকল কিছু শেষে প্রশ্ন করতেই পারেন, শুধুমাত্র এই কয়েকটি বৈশিষ্ট্যই কি দেখা যায় একজন মানসিকভাবে দৃঢ় নারীর মাঝে? মোটেও নয়। এক্ষেত্রে পয়েন্ট করে বৈশিষ্ট্য লিখে শেষ করা সম্ভব নয় আদৌ। তবে কিছু সাধারণ গুণ ও বৈশিষ্ট্য যা মানসিকভাবে দৃঢ় নারীদের মাঝে অহরহ দেখা যায়, তারই কিছু এখানে তুলে ধরা হয়েছে মাত্র।

- চারুলতা ডেস্ক



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com