২০১৭ সাল হবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বছর
Published : Saturday, 31 December, 2016 at 5:10 PM, Count : 912

রহমান আজিজ : আসছে ২০১৭ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন ও অগ্রগতির বছর। আগামী বছর অর্থনৈতিক অগ্রগতি-উন্নয়নের পাল্লাই ভারী হবে। এক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং  দক্ষ জনবল রফতানিসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে এ ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতা ব্যাপক হারে বেড়েছে বাংলাদেশের। যেখানে ২০০০ সালে মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেখানে ২০১০ সালে এ সংখ্যা ৪ লাখ ৪৮ হাজারে এবং ২০১৪ সালে ৬ লাখ ৯০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। একই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে প্রয়োজনের বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে।
এ প্রসঙ্গে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসলেই অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক খাতে বাংলাদেশ ভালো করছে। তাই এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে তো এর প্রতিফলন হবে। এটিই স্বাভাবিক। আগামী ২০১৭ সালের অর্থনেতিক খাতের সাফল্যকে নিয়ে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অর্থনৈতিক খাতের এই সাফল্য ধরে রেখে সামনে এগুনোর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে। অভ্যন্তরীণ চ্যলেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ বছর বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ততটা সুখকর নয়। আগামীতে এটি বাড়ানোর নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন-নতুন কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এ বছর কর্মসংস্থানোর উদ্যোগটিও ভালো ছিল না। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহটা এ বছর ভালো ছিল না। আগামী বছর তা যেন বাড়ে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য অদক্ষ নয়, দক্ষজনবল রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে। পুরোপুরি করা না গেলেও আংশিক দক্ষ জনবল যেন রফতানি করা যায়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। মোট কথা, এ জন্য মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। রফতানি বাড়াতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এর পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। এলডিসি থেকে বের হতেও বাংলাদেশকে এগুলো করতে হবে। ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে বাংলাদেশের মানুষের, তবে আয় বৈষম্যও বেড়েছে। এই বৈষম্য কমাতে না পারলে সমাজে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। আগামী বছরের জন্য এটি একটি চিন্তার কারণ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর ছুঁয়েছে। এটি ধরে রাখতে হবে।
দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ও বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে সমপ্রতি প্রকাশ করেছে ‘সাউথ এশিয়া’স টার্ন: পলিসিজ টু বুস্ট কমপিটিটিভনেস অ্যান্ড ক্রিয়েট দ্য নেক্সট এক্সপোর্ট পাওয়ার হাউস’ শীর্ষক প্রতিবেদন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ট্রেড অ্যান্ড কমপিটিটিভনেস গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ ভিনসেন্ট পলমেড প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়াই হবে বিশ্বের মোট কর্মক্ষম জনশক্তির এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষের আবাস স্থল। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এর অনুকূল জনশক্তি, শিক্ষার ক্রম বর্ধমান হার ও নগরগুলোর বর্ধিষ্ণুতার সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি, গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংযুক্তি, উত্পাদন সক্ষমতা বাড়ানো ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আরও বাড়ানো সম্ভব বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে শুধু অর্থনৈতিক খাতই নয়, অন্যান্য সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করছে। এরই প্রতিফলন ঘটছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা আইএমএফের ব্যতিক্রম নয়। তিনি বলেন, এ বছরের মতোই আগামী বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ হবে কি-না, তা নির্ভর করছে এ বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতার ওপর। সরকারের গৃহীত বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পে বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অগ্রগতি হবে। অন্য কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন ইস্যুতে সরকার চাপে থাকবে, বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, ইপিজেড এবং রেলপথবিষয়ক প্রকল্পে। যেহেতু সরকার বড় বাজেট বাস্তবায়ন করছে, সেহেতু বড় বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায় একটি বড় বিষয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে স্বাভাবিকভাবেই সরকার কিছুটা চাপে থাকবে। বেসরকারি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে কি-না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতেও সরকার অনেকটাই চাপে থাকবে। আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার। এই সংস্কারের পথের বাধাগুলো সরাতে হবে।
এছাড়া বৈশ্বিকভাবেও কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যা নির্ভর করছে নতুন মার্কিন সরকারের বাণিজ্যনীতি ও যুক্তরাজ্যের রেক্সিট পরিস্থিতির ওপর। নতুন মার্কিন সরকারের বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের মনোভাব, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা নীতির পরিবর্তনের ওপরও কিছুটা নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft