বিপদসীমার ওপরে ১০ নদীর পানি
Published : Sunday, 5 September, 2021 at 1:15 PM, Count : 4465

বর্তমান প্রতিবেদক: দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট-হাটবাজার ও ফসলি জমি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম বিপাকে দুর্গত এলাকার মানুষ। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসিরা। ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেত-খামার, পুকুরের মাছ। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। অনেকেই আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছেন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমপর্যায়ে পৌঁছেছে। কারো কারো ছাগল ও হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে গেছে।

ইতিমধ্যে ১৫ জেলা কমবেশি বন্যাকবলিত। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ বানভাসিদের। বন্যা কবলিত এলাকায় বড় নৌকা ভিড়লেই বুক সমান পানি মাড়িয়ে ত্রাণের আশায় ছুটে আসছে মানুষ। এ পর্যন্ত ১১ জেলার জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পানিবন্দিদের তালিকা অনুযায়ী চাল, ডাল, তেল, লবণ, স্যালাইন, মুড়ি ও মোমবাতি দেওয়া হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে তিন বছরের শিশু তোয়ার মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার খাষপুকুরিয়া ইউনিয়নের কোদালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সে একই এলাকার ছবুর সিকদারের মেয়ে। বগুড়ার সোনাতলায় বন্যার পানিতে ডুবে হোসাইন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের মেহেরুল ইসলামের ছেলে।

গতকাল শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। দেশের ১০টি নদ-নদীর ২২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুরসহ ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং তারপর থেকে উন্নতি হতে শুরু করবে। এছাড়া মধ্যাঞ্চলে আরো ৪৮ ঘণ্টা বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে; তারপর থেকে উন্নত হবে।

যমুনা ও পদ্মা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, পানি কোথাও বাড়ছে, কোথাও কমছে। আশা করছি, খুব দ্রুত পানি কমবে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ২৬টি নদীর পানি বেড়েছে। দুই জেলার ১৪টি উপজেলার প্রায় চার শতাধিক চর-দ্বীপচর ও নদী তীরবর্তী গ্রামের কয়েক লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। টাঙ্গাইলে প্রবল স্রোতে সড়ক ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে বন্যার পানি। সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।

টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলা সদর, বাসাইল, কালিহাতি, ভুয়াপুর, গোপালপুর, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকার সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন লক্ষাধিক মানুষ।

জামালপুরে সড়কে ঢুকছে বন্যার পানি। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোটবড় যানবাহন। এরই মধ্যে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে আছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ফরিদপুরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সদরের ৩ ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম।

বগুড়ায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে, এখনো পানিবন্দি সোনাতলা এবং ধুনট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ। বন্যা ও ভাঙনে বিপর্যস্ত তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বাঁমতীর ভেঙে গতিপথ বদলেছে তিস্তা। ভাঙণের ঝুঁকিতে পড়েছে রংপুর-লালমনিরহাট সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার বালাডোবার চরের তিন সন্তানের জননী জুলেখা বেগম। তার বাড়ির পাশে বড় নৌকা ভিড়তে দেখেই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে একবুক পানি মারিয়ে নৌকার নিকট ছুটে আসেন তিনি।জুলেখা বেগমের মতোই একে একে শিশু সন্তানদের কোলে নিয়ে বুক পানি পেরিয়ে নৌকার কাছে ছুটে আসেন হাবিজা, হাজেরা, আমেনাসহ আরো ১০ থেকে ১২ জন নারী।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে বন্যায় পদ্মার পানি ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্ সীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে পদ্মানদীর পানি বাড়তে থাকায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, উজানচর, ছোট্র ভাকলা ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে । গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে বনার পানি আরও ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুরের তেকানি ইউনিয়নের ১৫/১৬ টি বাড়ি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়েছে । মনসুর নগর ইউনিয়নে মাজনাবাড়ী গ্রামে দুইটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। মির্জাপুরে বন্যায় পৌরসভাসহ আট ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft