শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে কখনো ক্ষমতায় যায়নি আওয়ামী লীগ - প্রধানমন্ত্রী
Published : Monday, 21 November, 2016 at 6:00 AM, Update: 21.11.2016 9:39:23 PM, Count : 1843

বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনোই সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি, বরং বরাবরই চেয়েছে একে একটি শক্তিশালী, সুশৃঙ্খল এবং মর্যাদাপূর্ণ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো আমাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি।  বরং চেয়েছি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করে একে একটি সুন্দর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহঙ্কার। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানরা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দ, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করেছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো আমাদের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বারবার ক্যু করে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করিনি। আমরা চেয়েছি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করে একে একটি সুন্দর সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে এবং এই সশস্ত্র বাহিনী যেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়। শুধু বাংলাদেশের জনগণের নয়, সারা বিশ্বব্যাপী আস্থা-বিশ্বাস যেন অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। যার ফলশ্রুতিতে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্ব গাঁথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহঙ্কার। আমি তাদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। আপনারা শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন। দেশের প্রতিরক্ষা ও দেশ গড়ার কাজে অবদান রেখে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিজেদের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারবেন- এই বিশ্বাস আমার আছে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ৭০-এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা তখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যান। এরই এক পর্যায়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কাল রাতে নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা দেন এবং শেষ শত্রুটি বাংলার মাটি থেকে বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন সম্পর্কে বলেন, ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।

তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জাতির পিতাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু, তার সহযোগীরা তারই নির্দেশ এবং ব্যবস্থা অনুসারে এই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। যে সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। কঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার শপথ গ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মানুষ-কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, জনতা এবং আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর যারা বাঙালি সদস্যরা ছিলেন প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে একাত্তরের ২১ নভেম্বর আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হয়।

১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু জাতি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকেও সর্বাধুনিক একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন এই বৃহত্ জনগোষ্ঠীর জন্য অন্ন সংস্থান, ১ কোটি শরণার্থী এবং ৩ কোটি গৃহহীন এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের পুনর্বাসনের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নতিকল্পে বঙ্গবন্ধু মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুই নৌবাহিনীকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোস্লোভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করা হয়। একইভাবে বিমান বাহিনীর উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালেই সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি সংযোজনের মাধ্যমে এ দেশে একটি আধুনিক বিমান বাহিনীর প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীর যে সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করে গেছেন তারই ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

সশস্ত্র বাহিনী আজ তাদের নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের নির্ভরতা অর্জন করছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তত্পরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সঙ্কট নিরসনকল্পে সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতি গঠনে বর্তমান সময়ে সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং জাটকা নিধন রোধসহ বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে চলেছে। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এসব কল্যাণমুখী ও জনহিতকর কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যদের আমি অভিনন্দন জানাই।

আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আমাদের সরকারের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সাইপ্রাসে ফোর্স কমান্ডার, সেন্ট্রাল আফ্রিকা এবং সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারসহ অন্যান্য মিশনসমূহে জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদায়ন ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিহত সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের অনেক শান্তিরক্ষী শাহাদাত বরণ করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই মহান দিনে আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ আশ্বাস দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। প্রতি বছর দিনটি সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ। ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের খেতাবপ্রাপ্ত ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়। যা ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কাজেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণার্থে যা যা করণীয় তা করা হবে।

তিনি বলেন, আমি জানি, আপনজন হারানোর বেদনা কত কষ্টের। সেই বেদনা বুকে নিয়েও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে যারা আপনজন হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে আছেন বা যারা অবদান রেখেছেন, তাদের সবসময় সন্মানিত হিসেবে গণ্য করি এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া কর্তব্য হিসেবে মনে করি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকেই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও সব রকম চেষ্টা চলছে।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দেশকে আরও উন্নত করার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগালে অবশ্যই আমরা সম্মানের সঙ্গে আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে পারব।

মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলা ও ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা ও ১৬১টি উপজেলায় কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাতি জানতে পারবে। ইতিহাস বিকৃতি করতে কেউ সাহস পাবে না।

বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত জীবিত সশস্ত্র বাহিনীর ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাহা ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা। এ সময়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান,  মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরিচয়পত্র বিতরণকালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করে তিনি আনন্দিত। এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা রেল, বিআরটিসি বাস ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের ফেরীতে বিনাভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক রুটে একবার বিদেশ ভ্রমণ এবং একই এয়ারলাইন্সে জীবনে একবার হজ/ ওমরাহ করার সুযোগ পাবেন। তারা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ও ফেরিতে ভিআইপি কক্ষ ও কেবিন সুবিধা পাবেন। এছাড়া এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও পাবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৭ বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকার ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্তদের মাঝে সম্মানীর চেক এবং শাল ও মোবাইল ট্যাবসহ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি যুদ্ধ ও শান্তির সময় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর ৫ কর্মকর্তাকে বাহিনী পদক ও অসামান্য সেবা পদক প্রদান করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায় অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গতকাল সকাল ৮টায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি। সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় অভিবাদন প্রদান করেন। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিখা অনির্বাণ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে তিন বাহিনীর প্রধানরা ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানায়।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে শিখা অনির্বাণে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে সরকার প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ফুল দেয়ার পর শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চৌকস দল এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর শেখ হাসিনা শিখা অনির্বাণ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নিজামউদ্দিন আহমদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান তাকে অভ্যর্থনা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে (এএফডি) যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানরা সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন। এএফডির ডাইরেক্টরস জেনারেল এবং পিএসও প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়। এরপর এই বাহিনী দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করা পর্যন্ত এ লড়াই অব্যাহত রাখে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ঐতিহাসিক দিনকে প্রতিবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫-১৬ সালের ভূমিকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচজনকে শান্তিকালীন সেনা, বাহিনী পদকঅসামান্য সেবা পদক দেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : news.bartoman@gmail.com, bartamandhaka@gmail.com