শিরোনাম: |
মেঘের পাল-পাহাড় ঝরনার রাজ্য খাগড়াছড়ি
|
সাদা মেঘের ছোটাছুটি আর পাহাড়ি ঝরনা, সুউচ্চ পাহাড়ের এক অপরূপ সমন্বয় খাগড়াছড়ি। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা আর সব ক্লান্তি ঝেরে ফেলতে এখানে আসতে পারেন। মেঘের পালের সান্নিধ্য কিংবা পাহাড়ি ঝরনার মিষ্টি পানি অথবা সুউচ্চ সবুজের পাহাড়ের ডাক আপনাকে অখুশি করবেই না। ওদের মিতালীতে একটা সময় আপনিও হারিয়ে যাবেন প্রকৃতিতে। খাগড়াছড়ি শহর বেশ নিরিবিলি। এখানে থাকা খাওয়ার সুযোগ-সুবিধাও বেশ উন্নত মানের। শহরটি বেশ ছিমছাম গোছান। হেলিকপ্টার থেকে দেখলে মনে হবে, পাহাড়ের দেয়ালে আবৃত একখণ্ড জনপদ। এখানে পাবেন আদিবাসী হোটেলে। সেখানে মিলবে নতুন খাবারের পদ, বাঁচফুড়ি। কচি বাঁশ দিয়ে রান্না করা এক ধরনের তরকারি, খেতেও বেশ ভিন্ন স্বাদের। এখানে সিএনজি অটোরিকশা চলে না, কারণ এত উঁচু-নিচু রাস্তায় চলার মতো যথেষ্ট কর্মদক্ষতা নেই। এটাই ভরসা। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে, ‘মাতাই পুখিরি’ বা দেবতার পুকুরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ১০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ভেতর এই ছড়াটি অলৌকিকভাবে তৈরি বলেই বিশ্বাস স্থানীয় আদিবাসীদের। তাই তারা একে দেবতার আশীর্বাদ স্বরূপ পূজো করে নানা রঙের ফুল দিয়ে। পুকুরের পানি খুবই স্বচ্ছ এবং মিষ্টি। যা আপনার এতটা পথ পাহাড় বেয়ে ওঠার ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেবে। এই পুকুরের পাশেই ঝিরিপথ ধরে হেঁটে গেলে পাওয়া যাবে একটা ছোট্ট সুন্দর পাহাড়ি ঝরনা। দেবতার পুকুর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা গুহায়। গুহার উপরের একটি পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রায় পুরোটাই এক পলক দেখে নেয়া যাবে। আলুটিলা গুহার মধ্যে ঢুকতে হয় মশাল নিয়ে, মশাল অবশ্য ওখানেই অল্প দামে কিনতে পাওয়া যায়। গুহার নিচ দিয়ে ঝরনার পানি বয়ে যাচ্ছে, উপরে ঝুলতে থাকে বেশ কয়েকটি বাদুড়। গুহার কয়েকটি জায়গা এতটাই সরু যে কিছুটা নুয়ে পথ চলতে হয়। গুহার এক পাশ থেকে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে। আলুটিলা গুহা ঘুরে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রিসাং ঝরনা। পাহাড়ের গায়ে তীর্যকভাবে থাকা এই ঝরনার শীতল পানিতে গোসল করলে ভালো লাগবে। ঝরনার কাছে যেতে পাহাড়ি পথ বেয়ে নেমে যেতে হয় অনেক দূর, আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে নামার সময় আশপাশের পাহাড়ি সবুজ মনকে আলোড়িত করে তোলে। খাগড়াছড়ি শহরের মধ্যেই পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি বৃক্ষের সমারোহ। তাতে ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে রয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কমলালেবুসহ অনেক ধরনের ফলের গাছ। এখানে রয়েছে হর্টিকালচার পার্ক। পার্কটিতে দুই পাহাড়ের মাঝে যে ছড়া বয়ে গেছে, তার সংযোগ হিসেবে রয়েছে একটা সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু। পার্কের ছাউনিতে বসেই সন্ধ্যার রক্তিম সূর্যটাকে পাহাড়ের ওপাশে ডুবে যেতে দেখবেন, চমত্কার লাগবে। এরপর সাজেক দেখতে যাবেন। সাজেক রাঙামাটি জেলার মধ্যে পরলেও স্থলপথে যেতে হয় খাগড়াছড়ি দিয়ে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে দিঘিনালা, তারপর মাসালং হয়ে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সাজেক ভ্যালী। দুর্গম পাহাড় কেটে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইসিবি-১৯ এর করা পাকা রাস্তাটি শেষে খাড়া উঠে গেছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। স্থানীয় ‘চান্দের গাড়ি’র ওপর থেকে চারপাশের বিশাল পাহাড়গুলো দেখার মতো! সাজেকে মেঘাচ্ছন্ন সকালের সূর্য, আদিবাসী রুই-লুইপাড়া, প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় কাংলাকপাড়া কিংবা সিজুক গ্রামের কমলাবাগানের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। প্রকৃতি যেন তার রূপ-লাবণ্যের ডালা সাজিয়ে বসেছে সৌন্দর্য্য পিপাসুদের মন কাড়তে! পর্যটকদের থাকার জন্য কটেজের ব্যবস্থাও রয়েছে। যতদূর চোখ যায়, যেন পাহাড়ের সারি। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের গায়ে ভাসমান মেঘ যেন ছেলেবেলার রূপকথার রাজ্যকে চোখের সামনে বাস্তব করে তোলে! গহীন বনের অকৃত্রিম জোছনাও পাহাড়ি ঝরনার সঙ্গী। আর সেই আশ্চর্য আলোতে প্রবাহমান ঝরনার বয়ে চলার শব্দ এক অদ্ভুত সুরের সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ি ঝরনা, সুবিশাল পর্বতমালা আর গাড় সাদা মেঘরাশির আচ্ছাদনে খাগড়াছড়ি আপনার মনের সবটুকু জয় করে নিবে। আর আপনি অপরূপ সবুজের জালে হারিয়ে যাবেন। |