শিরোনাম: |
করোনা টিকার সমবণ্টনে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ১৫৬ দেশ
|
![]() এর বাইরে আরও ৩৮টি দেশ শিগগিরই যুক্ত হবে। এই উদ্যোগে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার, টিকা প্রস্তুতকারক, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে টিকা গবেষণা ও উন্নয়নে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিকল্পনা করা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) উদ্যোগটির সঙ্গে রয়েছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, তাদের উদ্যোগ কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বিশ্বের ১৭০টি দেশ আলোচনা করছে। মহামারি কোভিড-১৯-এর টিকা কেনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভ্যাক্স নামে যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্র থাকছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কোভ্যাক্সে অংশ নিতে বাধা আছে। কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে টিকা নিয়ে গবেষণা, ক্রয় ও নতুন কোনো টিকা পাওয়া গেলে তা বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম বন্টনের বিষয়টিতে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। প্রথম কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা পরিমাণে খুব কম পাওয়া যাবে, এটা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। টিকা প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জনসংখ্যার ৩ শতাংশের জন্য পাওয়া যাবে। পরে সময়ের সঙ্গে এই হার ২০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। গত সোমবার জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে চুক্তির বিষয়টি জানানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, কোভ্যাক্স বিশ্বের বৃহত্তম এবং কোভিডের টিকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও উপস্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ উদ্যোগে সব দেশের কিছু মানুষকে টিকা দেওয়া হবে, কিছু দেশের সব মানুষকে টিকা দেওয়া হবে না। নথিতে বলা হয়েছে, মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকার সরবরাহে ঘাটতি থাকবে। তাই দেশগুলোকে প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর হার হ্রাস এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাব্যবস্থা ঠিক রাখতে মনোনিবেশ করা উচিত। এ উদ্যোগে যে টিকা পাওয়া যাবে, তা ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। মহামারির মধ্যেই টিকা জাতীয়তাবাদ ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কোভ্যাক্স উদ্যোগে যুক্ত হয়, জিএভিআই, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড ইনোভেশনস (সিইপিআই)। এ উদ্যোগ টিকা ছাড়াও কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্যের সমবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করবে। জিএভিআইয়ের প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলেন, প্রতিটি মহাদেশের দেশগুলো একত্রে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এতে শুধু নিজস্ব জনগণের জন্য টিকা নয়, বরং সবখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে টিকা দেওয়ার বিষয়টিতে সাহায্য করা যাবে। কোভ্যাক্স সুবিধার জন্য যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, তাতে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে করোনা মহামারি শেষ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। গত শুক্রবার সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে কোভ্যাক্স উদ্যোগে সহযোগিতা করার কথা জানায় ইউরোপিয়ান কমিশন। দরিদ্র দেশগুলোয় করোনার টিকা সাহায্য হিসেবে ৪০ কোটি ইউরো বা ৮ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার সমান অবদান রাখবে সংস্থাটি। কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভ্যাক্সে যে অবদান রাখা হবে, তার মধ্যে ২৩ কোটি ইউরো ঋণ হিসেবে দেবে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। টিম ইউরোপ ব্যানারে এই ঋণ দেওয়া হবে। টিকার বৈশ্বিক ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রচেষ্টার অংশ হবে এটি। এই অর্থ যোগ্য নিন্ম ও মধ্য আয়ের দেশে স্থানান্তরিত হবে। বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বাকি ১৭ কোটি ইউরো যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট থেকে নিশ্চয়তা হিসেবে। কমিশনের পক্ষ থেকে উৎপাদনকারীদের তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে টিকা সব দেশে সরবরাহের জন্য আহ্বানের পাশাপাশি অবাধে টিকা দেওয়া ও উপকরণ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি মোকাবিলায় সব দেশেরই উচিত হবে কোনো একটি দেশের সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করার বদলে সব দেশের জনগোীর ঝুঁকিপূর্ণ অংশের জন্য টিকার ব্যবস্থা করাই নীতি হিসেবে গ্রহণ করা। ৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ ঘোষণা করেছে যে কোভিড-১৯-এর টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে সংস্থাটি নেতৃত্ব দেবে। সংস্থাটি বলছে, টিকা যখন পাওয়া যাবে, তখন যেন সব দেশ নিরাপদে, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা পেতে পারে। ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরোধিতার মধ্যেই জাতিসংঘে কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কে ব্যাপক ও সমন্বিত সাড়া দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তব পাস হয়। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বের ভূমিকার স্বীকৃতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, এ প্রস্তাব নিয়ে গত মে মাস থেকে আলোচনা চলছিল। প্রস্তাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে পণ্য জরুরি, তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযৌক্তিক বাধা জরুরি অপসারণ বা অবরোধ দূর করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে দেশগুলোকে খাবার ও কৃষির সরবরাহব্যবস্থা চালু রাখা এবং অর্থনৈতিক পুরুদ্ধার প্রকল্প চালু রাখতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, যাতে টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালু রাখা যায়। |