শিরোনাম: |
সুতার দাম বৃদ্ধিতে লোকসানে সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা
|
সরেজমিন ঘুরে জেলার বিভিন্ন তাঁত মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ মাস আগেও যশোরের নর্থ সাউথ স্পিনিং মিলস লি. এর ৫০ কাউন্টের ফুলদানী মার্কা ১ বস্তা সুতার দাম ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে এ সুতা তাঁতিদের কিনতে হচ্ছে ১৫ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকায়। আর এর প্রভাব পড়েছে কাপড়ের বাজারে। সুতার দাম বাড়লেও সেই অনুযায়ী দাম বাড়েনি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছার দাম। সিরাজগঞ্জ তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে শীতের পোশাকের কারণে হাট বাজারগুলোতে তাঁতের তৈরি কাপড়, লুঙ্গি, গামছার বেচাকেনা কম হয়। কিন্তু সরকারিভাবে তাঁতিদের স্বাবলম্বী করতে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৫৩৬ জন তাঁত মালিককে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। ঋণ নেয়ার পর থেকে তাদের ২ মাস কিস্তি দিতে হয় না। ঋণের টাকা নিয়ে কাপড় উত্পাদন করে তা বাজারে বিক্রি করে লাভের অংশ থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন তাঁতিরা। তাঁত বোর্ড সূত্র আরও জানায়, জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। আর এ তাঁতের সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার পরিবার জড়িত। সুতায় রঙ দেয়া, শুকানো, সুতা তৈরি করা ও কাপড় উত্পাদনের জন্য প্রতি তাঁতের জন্য তিন থেকে ৪ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এতে মালিক শ্রমিক কর্মচারী মিলে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, চৌহালী, কাজিপুরে তাঁত কারখানা রয়েছে। এখানকার উত্পাদিত শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয়। বিশেষ করে উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, পাঁচলিয়া বাজারে সপ্তাহে দুই দিন বিশাল কাপড়ের হাট বসে। এসব হাটে লাখ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন এসব হাটে। এমনকি সিরাজগঞ্জের উত্পাদিত কাপড় বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। তাঁত মালিকরা জানান, শীতের পোশাকের চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুতার দাম বৃদ্ধি করে। এজন্য তাঁতিদের লোকসানে পড়তে হয়। সিরাজগঞ্জের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার পাশাপাশি শত শত নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে সুতার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁত কারখানায় বিদ্যুত্ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী কারখানা তৈরি করে রাখলেও বিদ্যুতের কারণে উত্পাদনে যেতে পারছে না। কামারখন্দ উপজেলার চরদোগাছী গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, গত ১ মাস আগে সুতার যে দাম ছিল এতে লোকসানও হতো না আবার লাভও হতো না। তিন্তু গত ১ মাস হলো সুতার দাম বস্তা প্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকা বেড়েছে। এ কারণে প্রতিমাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। সদর উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী আলহাজ সরকার বলেন, প্রতি থান গামছা তৈরির জন্য ৭০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। শীতের কারণে সুতার দাম বাড়ায় আমাদের ব্যবসা ভালো না। চরম লোকসান হচ্ছে। সুতার দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। সিরাজগঞ্জ তাঁত বোর্ডের সুপারভাইজার রাধা শ্যাম রায় বলেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গরম কাপড়ের চাহিদা থাকে। এতে তাঁতিদের সাময়িক সমস্যায় পড়তে হয়। তবে জানুয়ারি মাস থেকে আবার ব্যবসা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তাঁতিরা যেন লোকসানে না পড়েন এজন্য সরকারিভাবে তাঁতিদের স্বাবলম্বী করতে ঋণ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। তাঁতিদের সহযোগিতা করতে মাধ্যমিক তাঁতি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সুপারিশের ভিত্তিতে তাঁতিদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঋণের টাকা তাঁতিরা সঠিক সময়ের মধ্যে পরিশোধ করেন। |