জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে
মোবাইল, মানিব্যাগ ও ঘড়ির নিরাপত্তা দেয়ার নাম করে একটি চক্র
রীতিমতো রমরমা ব্যবসা করে চলছে।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করে এমন চিত্র
দেখা গেছে। তারা দূর থেকে আগত ভর্তি
পরীক্ষার্থীদের এসব পণ্য টাকার বিনিময়ে সংরক্ষণ করে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের
সামনে দুটি, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে তিনটি, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণার সামনে একটি, কম্পিউটার
সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের সামনে একটি, পুরাতন কলা
ভবনের সামনে একটি, এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের সামনে একটিসহ
পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে প্রায় ৮-১০টি দোকান বসিয়ে একটি চক্র এ ধরনের অবৈধ কাজ করে
যাচ্ছে। এ ধরনের ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে
অবৈধ্য বাণিজ্য করার কোনো অনুমতি আছে কি-না জানতে চাইলে প্রশাসন থেকে অনুমতি নেয়া
আছে বলে জানায় তারা।
ডকুমেন্ট হিসেবে তাদের কাছে কি আছে দেখতে চাইলে তারা ৫০০ টাকার ব্যাংক রশিদ দেখায়। কিন্তু রশিদে লেখা- ‘একটি স্টেশনারীর সুপারিশ করা
হলো’। অথচ এই অসাধু চক্র একটি স্টেশনারীর অনুমতি নিয়ে পুরো
ক্যাম্পাস জুড়ে ৮-১০টি দোকান বসিয়ে নিরাপত্তার নাম করে মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি
জমা রেখে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি রাখার
জন্য নিচ্ছে ১৫-২০ টাকা।
ব্যবসায়ী চক্রের অধিকাংশরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচসহ বিভিন্ন ব্যাচের
শিক্ষার্থী। তারা হলের বা বিভাগের
সিনিয়রদের প্ররোচনায় এ কাজ করছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী আবুল কাশেম বলেন, আমি প্রথমবার এখানে পরীক্ষা দিতে
এসেছি। আমার পরিচিত কেউ নেই, তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ইউনিটে
পরীক্ষা দেয়ার পূর্বে স্টেশনারিতে ১৫ টকা দিয়ে মোবাইল, মানিব্যাগ
রাখতে হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে আসা আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার সঙ্গে কেউ আসেনি। তাই কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ১৫ টাকা দিয়ে
মোবাইল, মানিব্যাগ জমা
রাখলাম। ক্যাম্পাসে স্টেশনারী বসানোর ক্ষেত্রে
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু ব্যবসায়ী চক্রটি অনুমতি না নিয়েই ব্যাগ ও মোবাইল, ঘড়ির রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। এতে জিনিসপত্র চুরিসহ যে কোন সময় ঘটতে পারে নেতিবাচক
ঘটনা। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে
চালানো হচ্ছে এরকম রমরমা বাণিজ্য। এ
বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, আমরা যেসব দোকান বরাদ্দ দিয়েছি, তার তালিকা
রেজিস্ট্রার ও নিরাপত্তা অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি এবং বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দোকানের
বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদের ক্ষমতা তো নিরাপত্তা অফিসের। আমাদের দায়িত্ব বৈধ আর অবৈধ দোকান চিহ্নিত করা, তা আমরা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত
শাহীন এ বিষয়ে বলেন, যাদের অনুমতিপত্র নাই তাদের দ্রুত অনুমতিপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এখনও যাদের অনুমতি নাই তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ
ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ ধরনের অবৈধ দোকান বসানোর কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদের জন্য নিরাপত্তা
কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।