শিরোনাম: |
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে বিকল্প বিএনপি অফিস
|
গয়েশ্বরের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা জানান, প্রতি মাসে এই অফিস ভাড়া এবং চা-নাস্তার খরচ খরচা মিলিয়ে অন্তত কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়। যা আসে তদবিরকারীদের পকেট থেকে। দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের ‘গুডবুকে’ থাকায় প্রতিটি কমিটি গঠনে গয়েশ্বরের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি দলের ঢাকা মহানগর কমিটি উত্তর- দক্ষিণে দুই ভাগ করে গয়েশ্বর নিজেদের মতো কমিটি করে জমা দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। কিছুদিন আগে ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গয়েশ্বর পরিবারের মোট চারজন পদ-পদবী বাগিয়ে নিয়েছেন। তার অনুগতদের প্রায় সবাই পেয়েছেন পদ-পদবী। দলে গয়েশ্বরকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলে আসলেও দলের হাইকমান্ড পাত্তা দেন না। তবে সম্প্রতি গয়েশ্বরের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে মাঠ নেতাকর্মীরা। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে প্রকাশ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য করা নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ চলছে। ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ডও। গত ২০ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে তারেক রহমানের ৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলেচনা সভায় গয়েশ্বর তার সম্পর্কে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করেন। ওই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়াকে এই বক্তব্য সম্পর্কে এক নেতা অবহিত করেন। বেগম জিয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গয়েশ্বর বাড়াবাড়ি করছে। ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির একজন নেতা বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তারেক রহমান সম্পর্কে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হতাশ করছেন। তাকে তাচ্ছিল্য করছেন। দলের সমস্ত আশা-ভরসা, আগামী দিনের একমাত্র কাণ্ডারি তারেক রহমানের দেশে ফেরা পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকবেন কি-না বলে দলের মাঠকর্মীদের কাছে মেসেজ দিচ্ছেন যে, গয়েশ্বর চান না তিনি দেশে ফিরুক। তার বক্তব্যে আমার মতো অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আমরা ক্ষুব্ধ। গয়েশ্বর শুধু প্রকাশ্য আলোচনা সভায়ই নয়, ঘরোয়া পরিবেশে আলাপচারিতায়ও দল ও তারেক রহমান সম্পর্কে বিরূপ-বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এদিকে বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশানস্থ কার্যালয়ে তারেক রহমানের জন্মদিনে কেককাটাসহ আড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তবে যাননি বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারেক রহমানকে অপমান করার উদ্দেশেই তারা অনুপস্থিত থেকেছেন বলে মনে করছেন নেতারা। এর আগে দলীয় কাউন্সিলে তারেক রহমানকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব ছিল স্থায়ী কমিটির একটি বৃহত্ অংশের। এ নিয়ে বাবু গয়েশ্বর রায় তখন বলেছিলেন, দল ভালোভাবেই চলছে। এ মুহূর্তে কোনো এক্সট্রা ভিটামিনের প্রয়োজন নেই। জানা গেছে, তেনি অলটাইম পলিটিশিয়ান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। ছাত্রলীগ ভেঙে গেলে জাসদপন্থি ছাত্রলীগের নেতা হন গয়েশ্বর। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের আহ্বানে প্রতিষ্ঠালগ্নেই বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠনে রাখেন সক্রিয় ভূমিকা। এরপর বিএনপির প্রধান এ অঙ্গ-সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএনপির চতুর্থ কাউন্সিলের পর প্রথমে দলটির বিশেষ সম্পাদক মনোনীত হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম মহাসচিব হন। গত কাউন্সিলের পর হন স্থায়ী কমিটির সদস্য। গয়েশ্বর রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়কে প্রান্তিক ও জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। গয়েশ্বরের পুত্রবধূ নিপুণ রায় চৌধুরীও পদ পেয়েছেন, তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। নিপুণের বাবা নিতাই রায় চৌধুরীকে করা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান। গয়েশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দুই কোটি ৮৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও সম্পদ-সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রমনা থানায় একটি মামলা করে। বিএনপি সিনিয়র নেতা আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ নিয়ে গয়েশ্বরের আধিপত্যের লড়াই অনেক দিনের। পদ-পদবীতে অনেকটা কুপোকাত এখন আমান। নেতাকর্মীরা বলছেন, গয়েশ্বরের কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক। তার উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। |